অবাঞ্ছিত ভার

মেয়েটির নাম সাবিহা। সে ছিল অসামান্য প্রতিভাধর, পরিশ্রমী আর লক্ষ্যভেদী। চারপাশে যেন এক উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত মুখ। পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশী—সবাই তার দিকে তাকিয়ে, বুকভরা আশা নিয়ে। সবাই জানতো, সাবিহা একদিন অনেক বড় কিছু করবে। সে লেখাপড়ায়ও ছিল দুর্দান্ত। প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য—GRE, TOEFL… সবই চলছিল পুরোদমে।

এই তো তখন, একদিন তার হৃদয়ের কোণে কেমন এক অস্থিরতা এসে ভিড় করল।

ভাবল—আল্লাহ তাকে এত কিছু দিয়েছেন, অথচ তাঁরই মনোনীত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে সে কতটুকু জানে?

সেই প্রশ্নে তার ভেতরটা হু হু করে উঠল।সে কুরআন পড়ার চেষ্টা করল অর্থসহ। হাদীসের দিকে মন দিল। শুরু হল এক নতুন যাত্রা—জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার দিকে।

দিনের পর দিন, যত সে দ্বীনের আলোয় আলোকিত হতে লাগল, ততই দুনিয়ার জ্ঞান তার কাছে ফিকে হয়ে গেল।

তবুও সে হাল ছাড়েনি। অনার্স করেছে, করেছে মাস্টার্স—দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, সবচেয়ে ‘প্রেসটিজিয়াস’ সাবজেক্টে।

পাঠ চুকিয়ে একদিন সে পরিবারের অনুরোধে চাকরির জন্য নামল ময়দানে।

তার পরিচ্ছন্ন সিভি, উজ্জ্বল ফলাফল, আর দৃঢ় ব্যক্তিত্ব—সবই ছিল সঙ্গে।

কিন্তু না, কিছু একটার ঘাটতি যেন থেকেই গেল!

ইন্টারভিউ বোর্ডের লোকেরা তাকে প্রশ্ন করল—এই লেবাসে, নিকাব পরেই, সে কীভাবে অফিস করবে?

অবাক করার মতো বিষয়, এই প্রশ্নগুলো এসেছিল সেইসব ‘ইসলামী ঘরানার’ মানুষদের কাছ থেকেই, যাদের দিকে একসময় সে তাকিয়ে দেখত সম্মানের চোখে।

সাবিহা বুঝে গেল—এই সমাজে পর্দা করে সব করা যায়, এই কথা শুধুই মুখের বুলি।

বাস্তবে এটি এক অন্তঃসারশূন্য প্রতিশ্রুতি, এক অলীক আশ্বাস।

তবুও সে বলল না, “আসলে আমিও বদলে যাই!”

সে জানত—নিকাব আজ ত্যাগ করলে, কাল হয়তো ছাড়তে হবে হিজাব, তারপর হয়তো নামাজ, তারপর… কে জানে?

এই স্রোতের কাছে একবার মাথা নোয়ালে, সে আর নিজেকে চিনে উঠতে পারবে না।

তার হৃদয় কেঁদে উঠত—“হে আমার রব! তুমি তো আমাকে এই দুনিয়ার চাকরির দায়িত্ব দাওনি। কেন তবে আমার পরিবার আমার ওপর এই বোঝা চাপাচ্ছে? কেন তারা আমাকে সেই আশ্রয়ে পৌঁছে দিচ্ছে না, যেখানে আমি দ্বীন ও দুনিয়া—দুটোই রক্ষা করতে পারি?”

সাবিহার চোখে তখন হাজারো প্রশ্ন।

তার মেধা, তার পরিশ্রম, তার সংগ্রাম—সব যেন কোথাও মূল্যহীন হয়ে গেল কেবল একটি লেবাসের কারণে।

তবুও সে ভেঙে পড়ল না।

সে জানত, দুনিয়ার চাকরি তার জীবনের শেষ লক্ষ্য নয়।

আসল লক্ষ্য তো সেই চিরস্থায়ী জীবন, যেখানে কোনো বৈষম্য নেই, নেই আপসের শৃঙ্খল।

আরো পড়ুন