তুমি হও যদি নারীবাদি, আমি তাহলে পুরুষবাদী

তুমি হও যদি নারীবাদি, আমি তাহলে পুরুষবাদী

মুষলধারে বৃষ্টি চলছে। হঠাৎ মাথার পেছনের জানালায় তীব্র আলোকছটা আর বিকট শব্দ। জ্বলতে থাকা লাইটটা তৎক্ষণাৎ নিভে গেল। ভয়ে আমি জড়সড় হয়ে বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরলাম। কয়েক সেকেন্ড পর বুঝলাম, ঘরের উপরই বজ্রপাত হয়েছে। ছুটে গেলাম রাউটার বন্ধ করতে, কিন্তু ততক্ষণে সেটা পুড়ে গেছে। বাল্বটাও কাজ করছে না। হায় আল্লাহ! কতটা আকস্মিক!

সেদিন এক ভিডিওতে দেখলাম, জমিতে চাষের গরুর উপর বজ্রপাত হওয়ায় সাথেসাথেই তা মারা গেছে। কৃষকটা সম্ভবত জানে বেঁচে গিয়েছিল। মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলাম—আল্লাহর দয়া যে, ঘরে নিরাপদে থাকতে পারছি!

বাইরে বৃষ্টির অবস্থা দেখব বলে বারান্দার দরজা খুলতেই আমার দৃষ্টি থমকে গেল। পাশের বিল্ডিংয়ের ছয়তলার ছাদ ঢালাই চলছে। ১৫–২০ জন লোক এই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে খোলা ছাদের উপর কাজ করছে। আর এর মাঝেই মুহুর্মুহু বজ্রপাত!

আমার মাথা ‘হ্যাং’ হয়ে গেল: এদের কী জীবনের মায়া নেই? হ্যাঁ, আছে। অবশ্যই আছে। কিন্তু পরিবারের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্যই এত রিস্ক তারা নেয়। দুদিন ধরে রাস্তায় বের হলে দেখা যায়—পাতলা পলিথিন প্যাঁচানো কাকভেজা রিকশাওয়ালা। তাদের দেখলে মনটা ভারী হয়ে যায়। জীবিকার তাড়নায় কত কষ্টই না করতে হচ্ছে তাদের!

আমার বাবাও ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন মানুষ। তিনিও পরিবার ও সন্তানদের সুখের জন্য নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিতেন। এ বছর ঈদে একটা বিজ্ঞাপন খুব দেখাচ্ছিল—এক বাবা সেলসম্যানের কাজ করেন শোরুমে। তিনি নিজের জন্য জামা না কিনে মেয়ের জন্য দামি জামা কিনলেন। হ্যাঁ, সেই বিজ্ঞাপন দেখলে আমার কেবল বাবার কথাই মনে পড়ে। আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকে বাবার মারা যাওয়া পর্যন্ত কোনদিন তাকে ঈদে নতুন জামা কিনতে দেখিনি। অথচ আমাদের অনেক দামী জামা, জুতা, কসমেটিকস দিতে কখনো কার্পণ্য করেননি।

অনেক দূর-দূরান্তের পথও তিনি পায়ে হেঁটে যেতেন। হয়তো সেই রিকশাভাড়ার টাকাটা বাঁচিয়ে আমাদের জন্য মজার কিছু খাবার নিয়ে আসতেন। বাবা বাসায় এলেই আমরা ভাইবোনেরা দৌড়ে ছুটে যেতাম আর বলতাম: “বাবা, কী আনছো? কী আনছো?” বাবা হাসিমুখে তার হাতের প্যাকেটটা এগিয়ে দিতেন, আর সেই হাসির আড়ালে ঢাকা থাকত সারাদিনের ক্লান্তি।

আমি এখন বুঝি, রুটি-রুজির সংস্থান কত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব! আর এজন্যই আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন—“পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের এককে অন্যের উপর মর্যাদা প্রদান করেছেন, এবং এজন্য যে, পুরুষেরা স্বীয় ধন-সম্পদ হতে ব্যয় করে…”— সূরা নিসা, আয়াত ৩৪

হ্যাঁ, আমি পুরুষের এই শ্রেষ্ঠত্বে খুশি। আমি খুশি যে, আমার বাবা ছিলেন আমাদের পরিবারের কর্তা, এবং আমার মা ছিলেন তাঁর অনুগতা। আমি নিজেও একজন পুরুষের স্ত্রী হয়ে, তাঁর কর্তৃত্বের অধীনে থাকতে পেরে গর্বিত। আমার বাচ্চারাও জানে, মায়ের কথা না শুনলেও বাবার আদেশ অলঙ্ঘনীয়।

তোমরা যারা সমতার গান গাও, তারা কি এমন কঠিন পরিস্থিতিতে নারীদের দেখতে চাও? তোমরা বলো, ইসলাম ধর্ম নাকি নারী-পুরুষে বৈষম্য সৃষ্টি করে। আমি বলি, স্রষ্টাই তো বৈষম্য করে সৃষ্টি করেছেন। আর ইসলাম তো স্রষ্টারই বিধান। সৃষ্টিই যখন ভিন্ন, বিধানেও ভিন্নতা থাকবে—এটাই তো স্বাভাবিক। তোমরা যদি আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে গিয়ে নারীদের পুরুষের সমান বানানোর জন্য নারীবাদী হতে পারো, তবে আমি আল্লাহর হুকুমকে সমুন্নত রাখতে, আল্লাহর আইনে পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলে ‘পুরুষবাদী’ হতে রাজি আছি।

আরো পড়ুন