
তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা আহযাবের ৩৩ নাম্বার আয়াতে সুস্পষ্টভাবে নারীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন: وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ
কিন্তু আধুনিক সমাজে নারীদের ঘরে থাকাকে একধরণের পশ্চাদপদতা, অক্ষমতা ও অকর্মন্যতা হিসেবে তুলে ধরা হয়। এই পুঁজিবাদী সমাজে অর্থ উপার্জনের সক্ষমতাই যেন একজন মানুষের—হোক সে নারী বা পুরুষ—সম্মানের মাপকাঠি। কী কী যুক্তির মাধ্যমে নারীবাদীরা সরলমনা মেয়েদের মগজধোলাই করে এবং পর্দানশীন বোনদেরও ঘরের বাইরে নিয়ে আসতে চায় তা দেখে নেই ছোট্ট এক কাল্পনিক কথোপকথনের মাধ্যমে।
নারীবাদী: নারী ঘরে থাকলে সে নিপীড়িত হয়, অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
মুসলিমাহ: ইসলাম নারীকে ঘর বন্দি করেনি, বরং তাকে ঘরকে মর্যাদার কেন্দ্র হিসেবে দিয়েছে। নারী ঘরে থাকলেই নিপীড়িত হয় না—নিপীড়নের কারণ হলো ইসলামী মূল্যবোধ ও নৈতিকতাহীন সমাজব্যবস্থা ও কতিপয় পুরুষের অন্যায়। ইসলাম নারীকে দিয়েছে অধিকার ও সম্মানসহ ঘরে অবস্থানের বিধান, যেখানে তার ইবাদত, নিরাপত্তা ও সন্তান গড়ার সর্বোচ্চ পরিবেশ থাকে।এজন্য রাসূল (সা.) বলেন, “নারীর জন্য তার ঘরই উত্তম সালাতের স্থান।” (আবু দাউদ: ৫৭০)
নারীবাদী: নারীও মানুষ, তারও বাইরে কাজ করে নিজের সক্ষমতা প্রমাণের অধিকার আছে।
মুসলিমাহ: ইসলাম নারীর সক্ষমতা ‘অবস্থান’ দিয়ে নয়, ‘উদ্দেশ্য ও নিয়ত’ দিয়ে বিচার করে। ইসলামে সন্তান লালন-পালন ও পরিবার পরিচালনা হলো একজন নারীর নারী হিসেবে প্রধান দায়িত্ব ও ঘরই সক্ষমতা প্রমাণের সর্বোত্তম ক্ষেত্র। পুরুষ বাইরে কাজ করেও যা পায়, নারী ঘরে থেকে তার চেয়ে বেশি সওয়াব ও সম্মান পায়।
নারীবাদী: নারী কর্মে অংশ না নিলে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়।
মুসলিমাহ: উন্নয়ন শুধু অর্থনীতির পরিমাণ দিয়ে মাপা যায় না; নৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক উন্নয়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নারীর বহির্মুখী কর্মে অংশগ্রহণ জাতীয় উৎপাদন কিছু বাড়াতে পারে, কিন্তু পারিবারিক ভাঙন, ব্যভিচার, ধর্ষণ, শিশুর বিকারগ্রস্ত বেড়ে যায়। আজকের ‘উন্নত’ পশ্চিমা সমাজে একক মাতৃত্ব, মানসিক রোগী শিশু, আত্মহত্যা, ডিপ্রেশন—এই কী উন্নয়ন?
নারীবাদী: নারীও উপার্জন করতে চায়—এটি তার অর্থনৈতিক মুক্তি।
মুসলিমাহ: ইসলাম নারীর উপার্জনের বিরুদ্ধে নয়, তবে তা পর্দা, নিরাপত্তা, প্রয়োজন ও সীমাবদ্ধতার সাথে। ইসলাম নারীর যাবতীয় খরচ পুরুষের উপর ফরজ করেছে। নারী উপার্জন করতে বাধ্য নয়। তাকে উপার্জনের নাম করে যৌন নিপীড়ন, অফিস কালচার, বডি এক্সপ্লয়টেশন, মিডিয়া পণ্য বানানোই আজকের মুক্তির নামে বাস্তবতা।
নারীবাদী: ঘরে থাকলে নারী মেধা নষ্ট হয়, সমাজে সে ভূমিকা রাখতে পারে না।
মুসলিমাহ: ঘর মানেই মেধা নষ্ট নয়। ঘরেই নারী পরবর্তী প্রজন্মের গুণী সন্তান গড়ার কারিগর। উম্মে সালামা, আয়িশা (রা.) ঘরে থেকেও ইসলামের অন্যতম আলেমা ছিলেন। নারী চাইলে ইলমে দ্বীন, হিকমাহ ও সাহিত্য—সবকিছুতেই অবদান রাখতে পারে, ঘর থেকেই।
নারীবাদী: ইসলামে নারী-পুরুষ সমতা নেই, তাই ঘরে আটকে রাখে।
মুসলিমাহ: ইসলামে সমতা নয়, বরং ন্যায্যতা আছে। নারী-পুরুষ সমান নয়—দেহ, মন, ভূমিকা, দায়িত্বে ভিন্ন। নারী যেন সম্মান, সুরক্ষা ও আত্মমর্যাদার সাথে জীবনে এগিয়ে যেতে পারে—এই কারণে ইসলাম ঘরকে তার প্রধান কেন্দ্র বানিয়েছে।


