
দাম্পত্য জীবন কি যুদ্ধক্ষেত্র?
নাহিন নামের মেয়েটি স্বামীর হাতে হত্যা হওয়ার পরেই তার ঘটনা ভাইরাল হয়েছে। অথচ যতদিন সে বেঁচে ছিল, ততদিন স্বামীর হাতেই মার খেয়ে গিয়েছে। এমন অসংখ্য স্ত্রী আছেন যারা প্রতিনিয়ত স্বামীর নির্যাতন সয়ে সংসারে টিকে আছেন। কেউ কেউ আবার উচ্চশিক্ষিতা, সুন্দরী, এমনকি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা—তবু ঘরে তারা নিয়মিত নির্যাতিত হন। তাদের কারও কারও শরীরে থাকে মারের দাগ; কেউ কেউ আবার পর্দা না করলেও সেই দাগ ঢাকতে ফুল-স্লিভ পোশাক পরেন।
আচ্ছা, সেকুলারিজম কি কখনো আমাদের বলেছে স্বামীর ভূমিকা কী, একজন স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব কী? নাকি এই পৃথিবীটা সত্যিই এক মগের মুল্লুক—যে যার ইচ্ছা তাই করবে? সেকুলারিজমের যে আইন বা বিচারব্যবস্থা, তা কি মজলুমের পাশে দাঁড়ায়, নাকি জালিমের সামনে কাচুমাচু হয়ে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে?
আল্লাহ তায়ালা রহমানুর রাহিম। তিনি যেমন এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তেমনি তিনিই নির্ধারণ করে দিয়েছেন—কার কী করণীয়, সমাজ কীভাবে চলবে। ইসলাম স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে একজন স্বামীর দায়িত্ব কী এবং একজন স্ত্রীর অধিকার কী। দাম্পত্য জীবন ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে গঠিত একটি সম্পর্ক, যা কিছুটা ব্যবসায়িক লেনদেনের মতো—এখানে কোনো বেইনসাফি বা জুলুম গ্রহণযোগ্য নয়।
ইসলাম কাউকে কারও ওপর জুলুম করার অধিকার দেয়নি। এমনকি কেউ অপরাধী হলেও, যার যেমন খুশি তেমন শাস্তি দেওয়ার অনুমতি নেই। একজন চোর যদি চুরি করে ধরা পড়ে, তার শাস্তি কখনো হতে পারে না গণপিটুনিতে নিহত হওয়া। একইভাবে, কোনো স্ত্রী যদি ব্যভিচারে লিপ্তও হয়, তবুও স্বামী তাকে নিজ হাতে হত্যা করার অধিকার রাখে না।
স্বামীর হাতে নির্যাতিত যে নারীদের আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই, তাদের অধিকাংশই হয় তথাকথিত ট্র্যাডিশনাল সেকুলার পরিবার থেকে, অথবা দ্বীনের জ্ঞানশূন্য কিছু মুসলিম পরিবার থেকে আসে। তবে যারা সত্যিকার অর্থে ইসলাম চর্চা করে, তারা স্ত্রীকে এমনভাবে প্রহার করতে পারে না, যাতে তার শরীরে ক্ষতের চিহ্ন তৈরি হয়।
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তিনি কখনো কারও গায়ে হাত তোলেননি। যদিও আল্লাহর আইনে নিতান্ত অবাধ্য ও বেপরোয়া স্ত্রীকে শাসন কিংবা অত্যন্ত মৃদু প্রহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে—তাও কেবল সংশোধনের উদ্দেশ্যে, তবুও তা যেন বেদনাদায়ক বা অপমানজনক না হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“আর যেসব স্ত্রীদের মধ্যে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা কর, তাদের প্রথমে উপদেশ দাও; তারপর তাদের বিছানা পৃথক করে দাও; এরপরও যদি না শোনে, তবে মৃদুভাবে প্রহার করো। কিন্তু যদি তারা আজ্ঞাবহ হয়ে যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোচ্চ, মহিমান্বিত।”
(সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৪)
এখানে “মৃদু প্রহার” বলতে বোঝানো হয়েছে এমন সংশোধন, যা কষ্টদায়ক, আঘাতকারী বা অপমানজনক নয়। অনেক মুফাসসির বলেছেন, “দাঁতের কাঠি (মিসওয়াক) বা অনুরূপ কিছু দিয়ে হালকা ছোঁয়া দেওয়া”— এর বেশি কিছু নয়। (তাফসিরে ইবন কাসির, তাফসিরে কুরতুবি)
ইসলাম দাম্পত্য জীবনকে ভালোবাসা, দয়া ও পারস্পরিক সম্মানের বন্ধনে গাঁথা একটি সম্পর্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
“আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন।”
(সূরা রূম, আয়াত ২১)
একজন স্বামী যদি সত্যিকার অর্থে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করেন, তবে তার হাতে স্ত্রী কখনো আঘাত পাবে না; বরং তার আচরণ হবে কোমলতা, সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধে পরিপূর্ণ। অন্যদিকে, স্ত্রীও স্বামীর প্রতি আনুগত্য, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সেই সম্পর্ককে মজবুত করবে।
উম্ম আইশা


