
পর্দার বিধানে নারী বনাম পুরুষ- অপমান নাকি সম্মান?
“তোমার মেন্টালিটি এমন কেন? তোমার কি এটাই ধারণা যে, সব পুরুষ মানুষ তোমার দিকে বাজে ভাবে তাকায়?”
পরিপূর্ণ পর্দানশীল বেশিরভাগ নারীকেই জীবনে কখনো না কখনো এই ধরণের অস্বস্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কখনো আরো ভদ্রভাবে, কখনো বা আরো অভদ্রভাবে।
প্রশ্নটি শুনলেই মনে হবে যে, নারীদের উপর পর্দা ফরজই করা হয়েছে শুধুমাত্র দুশ্চরিত্রের অধিকারী পুরুষদের নজর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। যেন কোনো পুরুষের সামনে কোনো নারীর পরিপূর্ণ পর্দা করার অর্থই হল পুরুষটির চরিত্রকে কটাক্ষ করা।
ঠিক একইভাবে কোনো পুরুষ যখন গায়রে-মাহরাম নারীকে দেখে দৃষ্টি অবনত করে ফেলেন, তখনও অনেকে ধরে নেয় যে, সেই মহিলাটিকে বুঝি অপমান করা হচ্ছে। যেন সেই মহিলাটিরই চরিত্রে কোনো সমস্যা – সেজন্যই হয়তো পুরুষটি তার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে চাইছে না।
ঘটনা কি আদৌ তাই?
প্রথমবার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ভয়ে একরকম আঁতকে উঠি!
কারণ আল্লাহ তায়ালা পর্দা ফরজ করার বিধান নাযিল করেছেন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে। নারী-পুরুষ উভয়কে নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখা ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করার নির্দেশ প্রথম দিয়েছেন সাহাবীগণের প্রতি।
সাহাবীগণ হচ্ছেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। তারা আপনাদের মত লেখা স্ক্র্যাপ করতেন না, অন্যের ঘাম ফ্রিতে নিজের জন্য হালাল করতেন না। তাঁদের চরিত্র নিঃসন্দেহে দুনিয়ার সকল মানুষের জন্য আদর্শ। অথচ সেই পুরুষ সাহাবীগণ নারী সাহাবীদের সামনে দৃষ্টি অবনত করে চলতেন। আর নারী সাহাবীগণ পারতপক্ষে পুরুষ সাহাবীদের সামনে বেরই হতেন না। একান্ত প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলেও আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক জিলবাবে নিজেদের সম্পূর্ণভাবে আবৃত করে তবেই বের হতেন।
তাহলে যাদের মনে এই অদ্ভুত চিন্তা কাজ করে যে, “আমার সামনে কোনো মহিলা পর্দা করছে মানে সে আমার চরিত্র খারাপ মনে করছে”- তারা নারী ও পুরুষ সাহাবীগণের একে অন্যের সামনে পর্দা করার ব্যাপারটি কিভাবে দেখেন?
যদি অপরপক্ষের চরিত্র মন্দ হওয়াই পর্দা করা ও দৃষ্টি হেফাজত করার মানদণ্ড হতো, তাহলে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয় সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা- সাহাবীগণের উপর পর্দা ফরজ করতেন না। বলেই দিতেন, এই বিধান শুধুমাত্র দুশ্চরিত্র পুরুষ ও দুশ্চরিত্রা নারীদের সাথে সাক্ষাতের সময় প্রযোজ্য।
কিন্তু তা না করে, আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেন সূরা নূর- এর ৩০ ও ৩১ নম্বর আয়াত দুটি। জানিয়ে দিলেন পর্দা কাদের সামনে ও কিভাবে করা ফরজ। ‘পর্দা’- এমন এক বিধান, যা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে উল্লেখ করেছেন এই বলে যে, এটি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এটাই কি পর্দানশীল নারীদের কটাক্ষ করে করা প্রশ্নটির উত্তর হিসেবে যথেষ্ট নয়?
শ্রেষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী নারী ও পুরুষগণ একে অপরের সামনে যে বিধান মেনে চলেছেন আমৃত্যু, সেই পর্দার বিধান বর্তমান যুগে মানার মাধ্যমে কি অপরপক্ষকে অপমান করা হয়, নাকি দেওয়া হয় পরিপূর্ণ সম্মান ও মর্যাদা? পশ্চিমা চিন্তাধারায় যাদের মন ও মস্তিষ্ক আচ্ছন্ন, তারা কি এই প্রশ্নের উত্তর আদৌ উপলব্ধি করতে পারবে কখনো?


