
নারীর প্রকৃত সম্মান কোথায়?
গত কয়েকদিন আগে একটা ফেসবুক পোস্ট চোখে পড়লো, একজন নারী সন্তান সহ তার পর*কীয়া প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে। কমেন্ট সেকশনে বেশির ভাগ মানুষ এই ঘটনায়, শিশুটির ভবিষ্যত নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
একটি শিশুর জীবনের সবচেয়ে নিরাপদ, বিশ্বস্ত আশ্রয়স্থল হলো মা। কিন্তু মায়ের এই অনৈ*তিক সম্পর্ক সাব-কনশাসলিই তাকে একটা ইনসিকিউরিটিতে ফেলে দেয়। পর*কীয়ার বেশিরভাগ ফলাফলই “বিবাহ বি*চ্ছেদ”। বাবা মায়ের মধ্যকার সম্পর্কের এই অস্থিরতা শিশুদের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী ট্রমা সৃষ্টি করে। University of Notre Dame,USA এর মনোবিজ্ঞানীরা, Interparental Conflict(বাবা মায়ের সম্পর্কের সংঘাতপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে উঠা) শিশুদের Emotional Regulation এবং Stress মোকাবেলার ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করেন। এই গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশুরা শৈশবে উচ্চ মাত্রার সংঘাত দেখে বড় হয়, তাদের মস্তিষ্কের যে অংশ Emotional Stimuli প্রক্রিয়াকরন করে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলশ্রুতিতে, সেসব শিশুরা প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় Anxiety,Depression এধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগে।
এখন, এই পরিস্থিতিতে ”তথাকথিত লিবারেল নারীবাদী”দের বক্তব্য কি? যারা অনবরত ” মাই লাইফ, মাই রুলস” জপতে থাকে, তারা এই শিশুর নিরাপত্তা কোন সূত্র দিয়ে নিশ্চিত করবে??
তথাকথিত নারী স্বাধীনতার মূল ফিলোসোফি হলো, “নারীকে সেসকল জৈবিক ও সামাজিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত করা, যা তার ব্যক্তিগত আকাঙ্খা ও ক্যারিয়ারের প্রতিবন্ধক”। এই লিবারেল নারীবাদ মাতৃত্ব, সন্তান লালন পালন, ঘরোয়া দায়িত্ব পালনকে ‘শ্রম’ বা ‘বাউন্ডারিস’ হিসেবে দেখে। তাদের মাতৃত্বের এই শিকল থেকে মুক্ত হওয়ার ফলস্বরূপ, ইউরোপের বহুদেশে জন্মহারে এতো ভয়ংকর ধস নেমেছে যে, সোশিওলজিস্টরা এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে ‘ডেমোগ্রাফিক উইন্টার’ বলে আখ্যায়িত করছে।
নারীবাদীদের নোংরা প্রেসক্রিপশনে দেখানো স্বাধীনতার প্রলোভন, কতো নারীকে তার সম্মানজনক আসন থেকে মুখ থুবড়ে ফেলে দিচ্ছে। মরীচিকার মতো মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তার জীবনকে তারা অন্তঃসারশূন্য বানিয়ে দিচ্ছে। তাকে একটা সুন্দর,নিরাপদ, সম্মানজনক জীবন থেকে টেনে বের করে, মনোরঞ্জন মেটানোর সস্তা বস্তু হওয়ার স্বাধীনতা দিচ্ছে। এটা কি আদৌও স্বাধীনতা? নাকি অন্ধকার অচেনা দাসত্বের চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে নেয়া!
যে অধিকার ও সম্মানজনক অবস্থা আল্লাহ তা’য়লা নারীকে দিয়েছেন, শিরদাঁড়া শক্ত রেখে বেঁচে থাকার যে নিশ্চয়তা ইসলাম নারীকে দিয়েছেন। তথাকথিত নারীবাদীদের এই ভঙ্গুর সেক্যু*লার সিস্টেম কস্মিনকালেও এই নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম না। একদিকে ইসলাম তাঁকে মুহাম্মদ বিন কাসিমের মা হওয়ার মহান যেই যোগ্যতা দিয়েছে, যার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় ইতিহাসে মোড় ঘোরানো নেতৃত্ব। অন্যদিকে এই সিস্টেম তার এই যোগ্যতাকে দুমড়ে মুচড়ে, তাকে বানিয়েছে ড্রেনে ফেলে দেয়া অবৈ*ধ সন্তানের হ*ত্যাকারী পি’শাচ মা।
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, একজন নারীর অস্তিত্বের সর্বোচ্চ সম্মানটা কোথায়? সেটা কি কোনো ক্ষণিকের খ্যাতি বা মরীচিকার মতো চাকচিক্যে? না! নারীত্বের সবচেয়ে গৌরবময় মুকুট হলো প্রজন্ম গড়ার সেই ‘নোবেল ওয়ার্ক’।
একটু ভাবুন তো সেই নারীর কথা, যিনি জন্ম দিয়েছিলেন সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর মতো এক মহাবীরকে। তিনি হয়তো কখনোই মঞ্চে দাঁড়াননি, ক্যামেরার ঝলকানিও তাঁর উপর পড়েনি। কিন্তু তাঁরই শান্ত আঁচলের ছায়ায় বেড়ে উঠেছিল সেই সিংহশিশু, ইতিহাসের নেপথ্যের সেই স্থপতি। যিনি বাই||তুল মাক*দিসের পবিত্রতা ফিরিয়ে এনেছিলেন।
নারীর দায়িত্ব শুধু একটি দেহকে পৃথিবীর আলো দেখানো নয়, বরং নারীর কাজ হলো সেই শিশুর রুহানিয়াতে ঈমান, সততা ও সাহসের বীজ বুনে দেওয়া। মায়ের কোল হলো সেই প্রথম মাদ্রাসা, মায়ের হাত হলো সেই শক্তিশালী ঢাল, যা একজন শিশুর চরিত্রকে সমস্ত পঙ্কিলতা থেকে রক্ষা করে। নারীর উপর প্রজন্ম গড়ার যেই পবিত্র দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে, তা যেকোনো সামরিক বিজয় থেকেও বড়। কারন তাঁরাই আগামীর বীরদের শক্তিশালী ভিত গেথে দেন। এই প্রজন্ম নির্মাতাদের যেই যোগ্যতা, তা কোনো ডিগ্রি, কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স, বা কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মনোরঞ্জনের বিনিময়ে পাওয়া যায় না।
এই দায়িত্ব কোনো বোঝা নয়, এটি হলো আল্লাহর দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মান ও আস্থা। এই দায়িত্ব থেকে সরে আসা মানে শুধু প্রজন্মকে নয়, নিজেকেই এক মহৎ অর্জন থেকে বঞ্চিত করা। কোনো খ্যাতি বা উচ্চপদ এই পবিত্র মাতৃত্বের মর্যাদার সমকক্ষ হতে পারে না।
আমরা অন্ধকারের ধূম্রজালে হারিয়ে যাওয়ার আগে, শুভ্র আলোয় নিজেকে মেলে ধরতে শিখি। নিজের পরিচয় জানি। আমাদের জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্ক স্পষ্টতা অর্জন করি। নোরা ভিনসেন্টের মতো অ্যাসিস্টেড সুইসাইড করার আগেই, ফিরে আসি সিরাতুল মুস্তাক্কিমের পথে। যে পথ আমাদের শিরদাঁড়া শক্ত করে, মর্যাদায় বলিয়ান করা পথের রূপরেখা চিনতে শিখি…..


