
পর্দা কি শুধু নবীজির স্ত্রীদের জন্য?
আফসোস জীবনের তিরিশ বছর লেগে গেল জানতে জানতে যে পর্দা করা ফরজ।
বড় হতে হতে অনেকবার হয়তো শুনেছি সালাতের জন্য বকাঝকা কিন্তু পর্দা না করার জন্য কখনোই বকা শুনতে হয়নি, পর্দা করার জন্যই বরং কথা শুনতে হয়েছে, হুজুর ট্যাগ খেতে হয়েছে।এমন দেশে আমরা বাস করি যেখানে টকশোতে বলা হয় বোরখা পরা আমাদের কাস্টম না।
ভূমিকম্পের পরে ট্রল করা হয় জীবনের চেয়েও কি ওড়না বেশি গুরুত্বপূর্ণ? অনেক আগে গাফিলতের জীবনে আমিও ভাবতাম বোরখা ধার্মিক যারা তারাই শুধু পরবে। পর্দা করতাম না কিন্তু পর্দানশীন কাউকে দেখলে তাদের মত হতে চাইতাম, আল্লাহর কাছে হিদায়েতের দুআ করতাম।
আমার খুব কষ্ট লাগে যখন নামাজি মানুষরাও বলেন যে কুরআনে কোথাও নেই হিজাব করতে হবে নিকাব করতে হবে। তখন আমার মনে হয় তাদের হাতে পায়ে ধরে বলি যে আপনারা কুরআন পড়েন প্লিজ সূরা নূরটা পড়েন। এই একটা সূরাতেই স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন কোথায় হিজাব কোথায় নিকাব কোথায় বোরখা পড়তে বলা হয়েছে।
“আর মুমিন নারীদেরকে বলুন—তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে, তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে; যা স্বভাবত প্রকাশ পায় তা ছাড়া। আর তারা যেন তাদের খিমার (ওড়না/মাথার কাপড়) তাদের বক্ষদেশের ওপর টেনে দেয়।”
— সূরা নূর: ৩১
আচ্ছা আমরা এইভাবে কেন চিন্তা করি না একটা সময় ছিল যখন সাহাবীদের সাথে বসে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং নবীজির স্ত্রীরা একসাথে খাবারও খেতেন এবং এ ব্যাপারটা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহূর খুব খারাপ লাগতো। তিনি মনে মনে শুধু চাইতেন যেন পর্দার আয়াত নাযিল হয়। তারপর পর্দার আয়াত নাযিল হলো
নবীজির যখন বিয়ে হচ্ছিল জাইনাব রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে। নবিজির ঘরে সাহাবীরা বিয়ের পর খাবার খেয়েও যখন উঠে যাচ্ছিলেন না, তখন আল্লাহ পর্দার আয়াত নাজিল করলেন। তাদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে পর্দার আড়াল থেকে সেটাও আল্লাহ জানিয়ে দিলেন।
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর ঘরে প্রবেশ করো না—যদি না তোমাদের খাবারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। আর খাবার খেয়ে নেওয়ার পর চলে যাবে, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে বসে থাকবে না।
নিশ্চয়ই এতে নবী কষ্ট পান, কিন্তু তিনি তোমাদের বলতে লজ্জা পান।
আর আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জা পান না।
আর যখন তোমরা নবীর স্ত্রীদের কাছ থেকে কিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটাই তোমাদের হৃদয় ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিক পবিত্র।”
— সূরা আহযাব: ৫৩
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে এই পর্দার আয়াতগুলো কি শুধুই নবীজির স্ত্রীদের জন্য নাযিল হয়েছিল যে যুগে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষদের মাঝে তারা বাস করতেন! শুধু কি সেই সময়ের জন্যই পর্দার আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল!
আমরা তো বাস করি সর্বশ্রেষ্ঠ ফিৎনার যুগে। যেখানে পর্দা শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরার কথা ছিল সেখানে কিভাবে আমরা পর্দা থেকে এত এত দূরে সরে যাচ্ছি! আমাদের দৈন্যদশার বড় কারণ আমরা কুরআন পড়ি না। কুরআন যদি অর্থসহ পড়তাম বহু বছর আগেই জানতে পারতাম যে পর্দা করার বিধান আল্লাহ স্বয়ং কুরআনে দিয়েছেন এবং শুধু একটি আয়াত নয় এতগুলো আয়াত আছে যে এ ব্যাপারে কোনরকম অস্পষ্টতা নেই।
কুরআন তো শুধু আরবদের জন্য আসেনি। সমগ্র মুসলিমদের জন্য এসেছে। তাহলে আল্লাহর বিধান না মেনে কি একজন মুমিন নারী থাকতে পারে! মুসলিম পরিবারগুলো কি হারিয়ে যাচ্ছে? একসময়ের জড়োসড়ো হয়ে ওড়না পরা মেয়েটাকে যখন দেখি প্যান্ট, টপস পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, স্লিভলেস পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে really my heart bleeds!
অনেকের সাথে কথা বলে দেখেছি পর্দা করা পাহাড়ে চড়ার থেকেও কঠিন মনে হয় তাদের কাছে। কারো হাজবেন্ড পরতে দেয় না, কারো গরম লাগে, তো কেউ হয়তো মেন্টেন করতে পারবেনা নানা রকম সমস্যা।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে দিনশেষে “আল্লাহু আকবার” আল্লাহ সবকিছুর চেয়ে বড়। এই কথাটা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে আমরা অসংখ্যবার বলি।
তারমানে আমার হাজবেন্ডের ইচ্ছার চেয়ে আমার আল্লাহর ইচ্ছা বড়। আমার গরমের চেয়ে আল্লাহর দেয়া জাহান্নামের শাস্তি বড়। আমার সকল ছোট ছোট ইচ্ছা নাফসের সকল চাহিদার চেয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি বড়।
মনে রাখবো ভালো কাজ করতে সাহায্য আসে আল্লাহ থেকে আর ভালো কাজ করতে বাধা আসে শয়তান থেকে। তাই দুআ করতে থাকতেই হবে, থাকতেই হবে। আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই আসবে। আল্লাহ আমাকে ও আমার সকল বোনদেরকে হেফাজত করুন শয়তান থেকে।


