
সমতা নয়, ন্যায্যতা চাই
আমার হাসবেন্ড প্রায় প্রতিদিনই অফিসের কাজ শেষে বাসায় ফেরে রাতে। আর সাথে থাকে প্রায় আট-দশ কেজি কিংবা আরও বেশি ওজনের বাজারের ব্যাগ।দরজা থেকে আগিয়ে গিয়ে সেই ব্যাগ রান্নাঘর পর্যন্ত সেই ব্যাগ নিতেও আমার কষ্ট হয়। একদিন ক্লান্ত গলায় তিনি বললেন, “ব্যাগ টানতে টানতে মনে হয় পুরুষের কাঁধ ধীরে ধীরে হেলে যায়।” আমি হেসে ফেলি—হয়তো সান্ত্বনার হাসি, অথবা ভালোবাসায় ভরা কৃতজ্ঞতার হাসি।আর আমি সারাদিন বাসায়ই থাকি, বাচ্চাদের সামলাই, ঘর গুছাই, রান্না-বান্না করি।
কোথাও বেরাতে গেলেও আমার হাতে কোন বোঝা থাকে না। তিনটা- চারটা ব্যাগ যা থাকে, সব আমার হাসবেন্ডই বহন করে। কোন জান-বাহনে চড়ার ক্ষেত্রে যদি একটা সিট থাকে, উনি নিজে না বসে আমাকে বসতে দেয়। হ্যা, আমার বাবাও এমনই ছিলেন। আর আমার ভাইও এমনই। তারাও এভাবেই আমাকে, আমার মা ও বোনকে আগলে রেখেছেন। কারণ, তারা জানে, নারী জাতি দুর্বল—শারীরিকভাবে। কঠিন ও ভারি কাজ তাদের জন্য না। তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পুরুষের। এমনকি তাদের যাবতীয় ভরণপোষণের দায়িত্বও পুরুষের। পুরুষ কী সারাদিন এসি রুমে বসে কাজ করে আর্ন করবে নাকি মাটি কেটে উপার্জন করবে সেটা তার ব্যাপার। তার দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হবে—হ্যা এটাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ার বিধান। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন:
“পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক, কারণ আল্লাহ তাদের একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং তারা নারীদের জন্য ব্যয় করে।”— (সূরা আন-নিসা: ৩৪)
আমরা দুই বোন ও একভাই। বাবা মারা গিয়েছেন প্রায় এক যুগ। এখন সবারই সংসার হয়েছে। আমার ভাই তার নতুন সংসারের হাল ধরেছে। আমরা দেখি, আমার ভাইয়ের একার উপার্জনে কীভাবে তার সংসার চলে। কিছু বাড়তি উপার্জনের জন্য সে অমানসিক পরিশ্রমের পথ বেছে নেয়। কারণ, সরকারি চাকুরির লিমিটেড আয়ে তার সংসার চলে না। বাবার সম্পদের এখনো ভাগবাটোয়ারা হয়নি। বাবার বাড়ি থেকে একটা ভাড়া আসে প্রতি মাসে। কিন্তু আমরা দুবোন সেই ভাড়ার টাকা নেই না। আমাদের কথা হচ্ছে, আমাদের উপর তো সংসার চালানোর দায়িত্ব নেই। আর যেহেতু আমাদের ভাই সংকটে আছে তাই সেই টাকা আমরা তাকে দিয়ে দেই স্বেচ্ছায়। হ্যা, আমরা আমাদের পাওনা ভাগটুকূ স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেই। তবে, সম্পদের যে অংশ আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারন করেছেন, তা আমরা ছাড়ব না। সেটা আল্লাহ প্রদত্ত আমাদের হক, যদিও তা আমাদের ভাইয়ের অর্ধেক পরিমান। তবে, এতাকেই আমরা ন্যায্য মনে করি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
“আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, পুরুষের জন্য দুই নারীর সমান অংশ।”
— (সূরা আন-নিসা: ১১)
আমরা কক্ষনো ভাইয়ের মতো সমান ভাগ পাওয়ার জন্য দাবি নিয়ে রাস্তায় নামব না। আমরা জানি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী, আমার মায়ের ভরন-পোষণের দায়িত্ব আমার ভাইয়ের। এবং আমার স্বামীর অনুপস্থিতিতে কিংবা অক্ষমতায় আমার ভাইই আমার ভরণপোষণের জন্য দায়িত্বশীল। আল্লাহর আইন ন্যায্য। আমি একজন মুসলিম নারী ও একটি সমাজের মুসলিম নারীর প্রতিচ্ছবি। আমি সমতার নামে নিজের কাঁধে আর্থিক বা অন্যকোন বাড়তি বোঝা চাপাতে চাই না, সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করতে চাই না। আমি চাই ন্যায্যতা—যা আমার রব আমাকে দিয়েছেন। তাই আমার জন্য যথেষ্ট—এর চেয়ে বেশি যা চাওয়া হয় তা অন্যায়, অন্যায্য।


