
চোখ ধাঁধানো সাফল্য না চিরস্থায়ী পরিত্রাণ
“পাশের বাসার আন্টির মেয়ে ফ্ল্যাট কিনেছে, ব্যাংকে চাকরি করে। অমুকের ছেলে গাড়ি কিনেছে, তমুকের মেয়ে আমেরিকা যাচ্ছে। আর তুমি কী করছো?” — এমন তুলনামূলক কথা শোনেনি, এমন মানুষ এই সমাজে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমি কার জীবনের দিকে তাকিয়ে নিজেকে পরিমাপ করব? কোন মানদণ্ডে সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ধারণ করব? কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে আমি এই দুনিয়াকে দেখব?
উত্তর: কুরআন।
চলুন, সুরা কাহাফের ১০৩-১০৪ নং আয়াত দুটি পড়ে দেখি—
বলুন (হে মুহাম্মদ), আমি কি তোমাদেরকে সে সব লোক সম্পর্কে জানাবো, যারা কর্মের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত?
তারা সেই সব লোক, দুনিয়ার জীবনে যাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, অথচ তারা মনে করত তারা খুব ভালো কাজ করছে।
যারা কুরআনিক আরবি বোঝেন, তারা জানেন এই আয়াতের অনুবাদের বাইরেও অনেক সূক্ষ্মতা আছে। উদাহরণস্বরূপ, ১০৪ নং আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ صُنْعًا এর অর্থ শুধু কাজ নয়—বরং দক্ষতার সঙ্গে করা কাজ, পরিকল্পিত ও নিখুঁতভাবে সম্পাদিত শ্রম, যেগুলো মানুষ দুনিয়ায় করে গর্ব করে।
অর্থাৎ, আমাদের দৃষ্টিতে সফলতা মানে যে সব অর্জন—গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক ব্যালান্স, বিদেশ সফর, উচ্চ ডিগ্রি—সবই এই শব্দের আওতাভুক্ত।
ভাবুন তো, যদি দুনিয়ার বিচারে আমার সব কিছুই থাকে, কিন্তু আখিরাতে গিয়ে শুনি—”তুমি ব্যর্থ”, তখন আসল ক্ষতিটা কাদের হবে? আমারই তো! আর যাদের ‘ইমপ্রেস’ করতে গিয়ে আমি আল্লাহর অবাধ্য হলাম, তারা কি কিয়ামতের দিনে আমার পাশে দাঁড়াবে? আমার কর্মফলের দায়ভার নেবে?
চলুন, একটু থেমে ভাবি। সতর্ক হই। আমি সত্যিই সফলতার পথে হাঁটছি তো? নাকি বাহ্যিক মোহে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছি? নিজের অবস্থানটা যাচাই করি কুরআনের আলোয়, ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে।
সবাই এক পথে হাঁটছে বলে, আমাকেও সেই পথে হাঁটতে হবে—এমন তো কোনো কথা নেই। সত্যিকার সফলতা কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠের পথে লুকিয়ে থাকে না।
হয়তো আমি একা, হয়তো পথটা কঠিন—তবু এটা আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ।
শেষ হাসিটা যেন আমাদেরই হয়—ইন শা আল্লাহ।


