
নিকাবের পিছনের কান্না
শীতের সকাল, সাধারণত রোদ একটু দেরীতেই উঠে।
একদিন সকালবেলা, জানালার ফাক গলে শীতের মিষ্টি রোদ এসে বিছানায় পড়েছে।সেই বিছানার আধো রোদ, আধো ছায়ায় ফটোগ্রাফি করছে একটি মেয়ে।
নাম তার শারীনা। ফটোগ্রাফি ভীষণ পছন্দ তার।তাই সকালে গাছের নিচ থেকে কুড়িয়ে আনা বড়ই এর ফটোগ্রাফি করছে সে।
” আরে ভাই, চিন্তা কইরেন না, ছেলে অনেক ভালো।অনেক ভালো পদে চাকুরী করে। ছেলের আর ভাইবোন নাই, বাবা ও মারা গেছেন। বাসায় শুধু ছেলে আর তার মা। আপনার মেয়ের অনেক সুখ অইব!”
পাশের রুমে হঠাৎ দুইজন অপরিচিত পুরুষের কন্ঠ শুনে চমকে উঠল সে। ফটোগ্রাফি থেকে মনোযোগ সরে গেলো, সাথে মনটা ও খারাপ হয়ে গেলো।
তখনই তার বড়ভাই রুমে ঢুকলেন। বললেন, ‘এই তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে আয়,উকিল আসছে, তোর যাওয়া লাগবে।সাজতে হবে না, যেভাবে আছিস সেভাবেই যাবি।”
“ভাইয়া আমি উকিলের সামনে যাব না, এটা জায়েজ নাই। সে তো গায়রে মাহরাম, আমি প/র্দা করি।”
কিন্তু কথাগুলো মনে হয় তার ভাইয়ের কানে যায়নি।মূলত, কথাগুলো তার ভাইয়ের কান পর্যন্ত গিয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু অন্তুর পর্যন্ত পৌঁছে নি।ভাইকে, অনেক অনুরোধ করলো সে।কিন্তু এতে কাজ হলো না, তাকে যেতেই হবে। তাই বাধ্য হয়ে সে যেতে রাজি হলো। তবে পরিপূর্ণ প/র্দার পোশাকে গেলো।
উকিলের সামনে যাওয়ার পর এক উকিল বললো, তোমার নিকাব খুলো, নয়তো মুখ দেখবো কিভাবে?
শারীনা চুপ করে রইল, কিছু বললো না, নিকা/ব ও খুলল না।
তখন তার ভাই বললেন,”নিকাব খুলে ফেলো শারীনা, কিছু হবে না!”
তার বাবা ও ছেলের কথায় তাল মিলালেন।বললেন, উনারা তো শুধু মুখটাই দেখতে চাচ্ছেন, খুলে ফেলো মা!
“আরে, আমরা তো তোমার বাবার মতোই, আমাদের ও তো মেয়ে আছে, মা-বোন আছে। কতশত মাদ্রাসার মেয়ের ছবি আছে আমার কাছে, আর তুমি স্কুল- কলেজে পড়ে আমাদের সামনে মুখই খুলতে রাজি হও না।
আর মুখ না দেখলে পাত্র তোমাকে পছন্দ করবে কিভাবে?” কথাগুলো একনাগাড়ে বলে গেলো এক উকিল।
“আপনে কিছু মনে করেন না, ইসলামের বিধান মতে, শুধু পাত্রের সামনে চেহারা দেখানো জায়েজ। পাত্রের বাবা, ভাই, উকিল বা অন্য পুরুষেরা পাত্রীকে দেখতে পারে না—তাই ও এমন করতেছে।” বললেন শারীনার ভাই।একথা বলেই ভাই আবারো শারীনাকে নি/কাব খুলতে তাড়া দিলেন!
“আসলে এখন যুগ তো আগের মতো নাই। তাই আমাদের সমাজে এগুলা চলে”, ঠোঁটের কোণে একটু বিরক্তিকর হাসি ফুটিয়ে বললো আরেক উকিল।
শারীনার চোখে পানি এসে গেলো।এ অশ্রু যেমন বেদনায় ভরা ছিলো, তেমনই তাতে ছিলো ক্ষোভ ও আক্ষেপের মিশ্রণ। শারীনা কেবল মনে মনে ভাবছিল, “হায়! আমার বাবা ভাই এত গায়র/তহীন, এমন মানসিকতার আমি তো জানতাম না! দ্বীনের বিধান জেনে, আমি শারীয়াহসম্মত পর্দা করি জেনে ও তারা আমাকে গায়রে মাহ/রামের সামনে বেপর্দা হতে বললো, শুধুমাত্র সমাজের দোহাই দিয়ে? যুগের দোহাই দিয়ে? অথচ তারা জানে, আমি আমার চাচাত ভাই, দুলাভাইয়ের সামনে ও বেপর্দা যাই না।গায়র/তবান, আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন মু’মিন পুরুষ তো এমন হওয়ার কথা নয়? আচ্ছা, এটা কি যুগের দোষ নাকি আমাদের? সমাজের কোনো রীতিনীতি যদি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে একজন মুমিনের জন্য কোনটা প্রাধান্য দেওয়া উচিত? দ্বীন নয় কি?””
নন-প্র্যাক/টিসিং পরিবারে দ্বীন পালন করা প্রায় প্রত্যেক শারীনাকেই এমনটা ফেস করতে হয়। যেখানে ‘এখন তো এটাই চলে’ ‘আগের যুগ নাই’ বলে দ্বীনের বিধানকে পাশ কাটায় মানুষ।আচ্ছা, যেদিন আল্লাহর সামনে দাড়াতে হবে সেদিন কি এই মানুষগুলো এ কথা বলে পার পেয়ে যাবে? একজন পর্দানশীন মেয়েকে কত যে যুদ্ধ করতে হয় পরিবার ও সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে পর্দা ধরে রাখার জন্য! কত রকম ট্যাগ খেতে হয়! এর প্রতিদান কেবল আল্লাহই দিতে পারেন।


