ইসলামে নারী কি কেবল জৈবিক চাহিদার বস্তু?

by sanjida-sharmin

প্রাণীজগতের সব পশু-পাখির সাথে মানুষের বেশকিছু মিল আছে, কারণ মানুষও একটি প্রাণী। এটাকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। ওদের যেসব জৈবিক চাহিদা আছে, আমাদেরও আছে—খাদ্য, ঘুম, বাসস্থান, ঘনিষ্ঠতা ইত্যাদি। তবে, যে জিনিসটা মানুষকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে সেটা হলো—বিবেক, যুক্তি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ (self-control)।

ক্ষুধা পেলেই মানুষ যেখানে খাবার পাবে, আগপাছ না ভেবে খেয়ে নেবে না; একটা পশু নেবে। সে যার তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াবে না—পশুরা জড়বে। আর একজন মানুষ যত ভালো মুসলিম, সে তত উন্নত, কারণ তার নিয়ন্ত্রণক্ষমতা আরও বেশি। কারণ, একজন মুসলিম সব চাহিদা পূরণের আগে হালাল-হারামের কথা ভাবে।

তাই বলে জৈবিক চাহিদাগুলোকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। ইসলামও বলে না, আমাদেরকে এসব চাহিদা থেকে ঊর্ধ্বে উঠে ফেরেশতা হয়ে যেতে হবে। বরং ইসলাম আমাদের চাহিদাগুলো মেটানোর একটি সীমারেখা দেয়, যার মধ্যে থেকে একজন মুসলিম শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে জীবনযাপন করতে পারে।

যদি কারো ক্ষুধা লাগে, সে হালাল উপায়ে খাবার সংগ্রহ করবে। টাকা না থাকলে ভিক্ষা করতে পারে—যদিও তা নিন্দনীয়; কিন্তু সে চুরি করবে না, অন্যেরটা মেরে খাবে না। তেমনি, যদি কারও শারীরিক ঘনিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়, সে যার তার কাছে যাবে না—সে যাবে তার বৈধ সঙ্গীর কাছে, যে স্বেচ্ছায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রয়োজন পূরণ করবে। এ ক্ষেত্রে বিনাকারণে একজন নারীর উচিত নয় তার স্বামীকে বাধা দেওয়া। এর পক্ষে বহু সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন, রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেছেন

“দুনিয়া সাময়িক ভোগ-বিলাস; আর দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ভোগ হলো নেককার স্ত্রী।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৪৬৭)

“যদি স্বামী স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চায়, সে চুলার ওপরে থাকুক (অর্থাৎ ব্যস্ত থাকুক)—তবুও সে যেন তার ডাকে সাড়া দেয়।” (তিরমিজি: ১১৬০; ইবন মাজাহ: ১৮৫৩)

“যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে তার বিছানায় আহ্বান করে এবং স্ত্রী সাড়া না দেয়, ফলে সে (স্বামী) মনঃক্ষুণ্ণ হয়—তাহলে ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত স্ত্রীর জন্য দুআ করে না।” (সহীহ বুখারী: ৩২৩৭; সহীহ মুসলিম: ১৪৩৬)

নারীরও চাহিদা থাকলে, সে তার স্বামীর কাছেই যাবে এবং তার চাহিদা পূরণ করবে। এখন যদি কেউ বলে—একজন মানুষ তার বৈধ সঙ্গীর কাছেও প্রয়োজনে চাহিদা পূরণ করতে পারবে না, তাহলে সেটা নাকি “পশুবৃত্তি”? তাহলে বলেন মানুষটা যাবে কোথায়? আল্লাহ তো যালিম নন যে, একটি চাহিদা সৃষ্টি করবেন অথচ তা পূরণের বৈধ রাস্তা রাখবেন না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, তথাকথিত ইসলামি ফেমিনিস্টরা এই সাধারণ বিষয়গুলোকে অস্বাভাবিকভাবে জটিল করে তোলে এবং অপব্যাখ্যা করে। এর মাধ্যমে তারা কমজ্ঞানসম্পন্ন মুসলিম তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ইসলাম ও আলিমদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, শত শত বছর ধরে আলিমরা কুরআনের অপব্যাখ্যা করে গেছেন!

এই ধরণের মানুষ অনেক সময় কুরআনবাদীদের মতো আচরণ করে—যারা কেবল কুরআন মানে, হাদীস মানে না। এদের ঈমানের ব্যাপারে আলিমরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। যেমন, ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন:

“যে ব্যক্তি বলে, ‘আমি কেবল কুরআনই মানি, হাদীস মানি না’, সে ইসলামের সীমানা অতিক্রম করে।” (আর-রিসালাহ, আল-উম্ম)

আল্লাহ যেন সবাইকে হিদায়াত দিন এবং সঠিক পথে ফিরে আসার তাওফিক দিন। আমিন