স্বামীর অনুমতি: একপাক্ষিক কর্তৃত্ব নয়, পারিবারিক শৃঙ্খলা

by sanjida-sharmin

নারীপুরুষ দুজন ভিন্ন সত্তা—যাদের শারীরিক ও মনবিত্বীয় পার্থক্য অস্বীকার্য। আল্লাহ তায়ালা এই দুই প্রজাতির মাধ্যমে অসাধারণভাবে মানব সভ্যতা টিকিয়ে রেখেছেন যুগ যুগ ধরে; যেখানে একজন নারী তার ঘরের সার্বিক দেখভাল করে এবং একজন পুরুষ বাইরের অ্যাফেয়ার্সগুলো সম্পন্ন করে। এভাবেই যুগ যুগ ধরে কালে কালে হয়ে এসেছে। এর মানে এই না যে, নারীরা কখনোই কোন অবস্থাতেই বাইরে কাজ করেনি। আর পুরুষেরা কখনো ঘরের কাজ করতে পারে না। তবে, দুজনের ওয়ার্কিং স্টেশন ভিন্ন।

এবার আসা যাক একজন নারীর বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি চাওয়া প্রসঙ্গে। বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনত, কিংবা জরুরি কিছু লাগলে আমি বাইরে যাই; এবং প্রতিবার বাইরে যাওয়ার আগে আমি আমার স্বামীর অনুমতি চাই না। তবে ভাইবোন কিংবা কোন বান্ধবির বাসায় যাওয়া দরকার হলে তাকে জানাই। সে নিষেধ করলে যাওয়া থেকে বিরত থাকি। মূলত যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে যাই তখন জানাই। কেন জানাই? আমি মনে করি, আমাদের সংসারের কর্তা তিনি। তার অনুমতি নেওয়া জরুরি। আমি চাইলেই, তার অনুমতি ছাড়া দীর্ঘক্ষণ বাসার বাইরে থাকতে পারি না। সে যদি বাসায় এসে আমাকে অনেকক্ষণ যাবৎ না পায়, তবে তার রাগ হওয়ার অধিকার আছে। বাসায় একজন পুরুষ স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল, ঠিক যেমন স্ত্রী বাইরে কোথাও গেলে পুরুষের উপর নির্ভরশীল। বাসায় খাবার পরিবেশন, স্বামীকে সঙ্গ দেওয়া স্ত্রীর দায়িত্ব। কেবল শারী/রিক ঘনি/ষ্ঠতার জন্যই যে স্ত্রীকে ২৪/৭ বাসায় বসে থাকতে হবে তা না। তবে, অবশ্যই এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

মাযহাবগুলো এ সম্পর্কে কি বলে? চার মাযহাবের আলেমরা এই বিষয়ে একমত:

হানাফি ফিকহ অনুসারে, স্ত্রী যদি বিনা অনুমতিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে বের হয়, তবে তা অবাধ্যতা হিসেবে গণ্য হয়।

শাফেয়ি ও মালিকি মাযহাব অনুসারে, স্ত্রীর বাইরে যাওয়া যদি ঘরের দায়িত্বের ক্ষতি করে বা স্বামীর অধিকার ব্যাহত করে, তবে তা হারাম।

হাম্বলি ফিকহ অনুসারে, স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর ঘরের বাইরে যাওয়া নাজায়েয, যদি তা প্রয়োজনীয় না হয়।

আচ্ছা, আলিমগণ যে নারীদের স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন, এটা কি তার উপর জুলুম।তাকে কি কেবল স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্যই ২৪/৭ ঘরে বসে থাকতে বলা হয়েছে? ইসলামে পুরুষকে কি অস্বাভাবিক জৈ/বিক চাহিদাসম্পন্ন প্রাণী হিসেবে দেখানো হয়; যে প্রয়োজন হলে একেবারে ধৈর্য ধরতে পারবে না। বাস্তবতার নিরিখে একটু চিন্তা করে দেখা যায়। পুরুষ কি সারাদিন যখন তখন ঘনি/ষ্ঠতার প্রয়োজনে ছুটে এসে ঘরে স্ত্রীর উপর আগ্রাসী হয়। এটা কি বাস্তবসম্মত! একজন পুরুষ সে অফিসে থাকতে পারে, ব্যবসার কাজে ব্যস্ত কিংবা অন্য যেকোন কাজে ব্যস্ত থাকতে পারে। আর এ অবস্থায় তার স্ত্রীকে প্রয়োজন হলে, তার পক্ষে কি সর্বাবস্থায় ছুটে আসা সম্ভব? কখনোই না। আর সেক্ষেত্রে তার করণীয় কী? আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সংযম; যা পশুর জন্য সম্ভব না।

আর ঘরে ওয়ার্কিং স্টেশনে একজন নারীর যদি ঘনি/ষ্ঠতা প্রয়োজন হয়, তবে ‘যদি প্রয়োজন হয়’—এই অজুহাতে স্বামী কি সারাদিন বাসায় বসে থাকবে! নাকি ওই স্ত্রী স্বামীর অফিসে ছুটে যাবে। এক্ষেত্রে একজন স্ত্রীর দায়িত্বও সেই পুরুষের মতো যে সংযম করেছিল। উভয়ের ক্ষেত্রেই সংযম জরুরি। তবে, তাদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে স্বামী বাসায় আসে, স্ত্রী বাইরে যায় না। এটাই ব্যালান্স—আল্লাহর দেওয়া ব্যালান্স। আল্লাহ তায়ালা নারীদের ঘরে থাকতেই বলেছেনঃ ““তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো এবং পূর্ব জাহেলিয়াতের যুগের ন্যায় প্রকাশ্যে সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।”— [সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৩৩]

সুতরাং, মাজহাবসমূহে বর্ণিত নারীর ঘরে অবস্থান এবং স্বামীর অনুমতি ছাড়া বের না হওয়া—এটা কোনো অবমূল্যায়ন নয়; বরং পারিবারিক ভারসাম্য ও দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে গঠিত ইসলামী জীবনব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম, যার উপর ইজমা রয়েছে।

একইভাবে, স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা কোনো একপাক্ষিক অধিকার নয়; এটি দুটি আত্মার মাঝে মমতা ও সম্মতির স্পর্শ।এটি কোনো “রেডিমেড এক্সেস” না, বরং আদব, ভালোবাসা ও তাকওয়ায় গড়া সম্পর্ক।ইসলাম নারীকে সেবিকা হিসেবে ট্রিট করে না—বরং তাঁকে সম্মানিত অবস্থানে রাখে, আর পুরুষকে হাইপার-সে#ক্সচুয়াল কোন চরিত্রে তুলে ধরে না—বরং তাকওয়ার সঙ্গে সংযমের আদর্শে গড়ে তোলে।