আমাদের কেনাকাটার পিছনে লুকানো এক উম্মাহর

আমাদের কেনাকাটার পিছনে লুকানো এক উম্মাহর

by anika-tuba

নারীদের মধ্যে কেনাকাটা, শপিং এর ঝোক একটু বেশিই থাকে। আমরা মেয়েরা কাপড়চোপড়ও ভালোবাসি, গয়নাগাটি আর সাজগোজের জিনিসও ভালোবাসি, আবার ঘর সাজানোর জিনিস, কাপ-প্লেট, হাড়িপাতিল সবই আমাদের দরকার হয়। দরকারে জিনিস কেনা সমস্যা না, কিন্তু এখনকার যুগে এসে নিত্যনতুন জিনিসপত্রের ভিডিও আর রিভিউ দেখতে দেখতে জরুরির চাইতে বরং ‘আজাইরা’ আর ‘আকাইম্মা’ জিনিসই বেশি কেনা হয় বলে আমার বিশ্বাস। কোনো জিনিস কিনতে গিয়ে একটার জায়গায় আমরা দুইটা, তিনটা, বা আরও বেশি কিনে ফেলি, জাস্ট পছন্দ হয়েছে বলে। এরপর সেই জিনিস দিনের পর দিন পড়ে থাকে, একবারের বেশি দুইবারও পরা হয় না, অন্য কোনো কাজেও আসে না।

বেশি কিনতে চাওয়াটা এখন রোগের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর নিরাময় অনেক ভাবেই হয়ত সম্ভব। মিনিমালিস্টিক লাইফস্টাইল নিয়েও এখন ইউটিউবে অসংখ্য মোটিভেশনাল স্পীচ অ্যাভেইলেবল। বাট সেসব বিষয়ে বলাটা এখন উদ্দেশ্য না। মুসলিম হিসেবে, আমরা যদি ফিলস৩নের প্রতি মমত্ববোধ অনুভব করি, তাহলে এই রকম আনহেলদি শপিং হ্যাবিট তৈরিই হওয়াটাই কোয়ায়েট ইম্পসিবল। ফিলস৩নের শিশুদের কান্নার সামনে দুনিয়াবি জিনিসের চাহিদা শূন্যের কোঠায় নেমে আসার কথা। ওদের কী আছে আর আমাদের কী নেই? এই প্রশ্নটা সামনে রাখলে আমাদের নিজেদের কম্ফোর্টেবল লাইফস্টাইলের প্রতি আকর্ষণ না, বরং ভীতি কাজ করবে। ভুলেও বেশি বেশি জিনিস কিনতে ইচ্ছা করবে না। ওখানকার ছবি বা ভিডিও দেখার পর, নিজেদের দিকে তাকালে লজ্জা লাগবে। এই আবেগটা শুধুমাত্র ক্ষণিকের জন্য না রেখে, কনশাস ভাবে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। তাহলে জাস্ট সাময়িক না হয়ে আমাদের এসব বাজে হ্যাবিট পার্মানেন্টলি কমে আসবে।

যেকোনো কিছু দেখে পছন্দ হওয়া মাত্র কিনে ফেলার আগে ভেবে দেখুন, জিনিসটা কি আসলেই দরকার? টাকাটা এর পিছে ঢালার বদলে আরো বেটার কোনো ওয়েতে কি খরচ করা পসিবল? ফর এক্সাম্পল, সাদাকা দেয়া। একটা বাচ্চার চোখের সামনে তার মা-বাবা-ভাইবোন, পরিবার, ঘরবাড়ি সব উড়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে যাওয়ার পর আমরা কীভাবে কোনো কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকতে পারি? ইভেন ওয়ার্স দ্যান দ্যাট, কনট্রিবিউট করার পরিবর্তে আমরা স্রেফ নিজেদের ভোগ-বিলাস নিয়ে ব্যস্ত থাকি, কীভাবে? কিছু না পারুন, অন্তত নিজের সীমাহীন চাহিদার উপর একটু লাগাম টানুন। এই খাই-খাই স্বভাব মানুষকে মানুষ থাকতে দেয় না। অমানুষ আর স্বার্থপর বানিয়ে ফেলে। তখন পাতা খেয়ে থাকা বাচ্চাদের গল্প শুনেও ঠিক পরমুহূর্তে মনে হয়, অমুক আইটেমটা কিনতে না পারলে জীবনটা ষোলো আনাই বৃথা।

সিম্পল চলাফেরা শুরু করলে বয়কট করা সহজ। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা কমে গেলে উম্মাহকে নিয়ে ভাবা সহজ। আমাদের একটা খারাপ অভ্যাস দূর করেও আমরা অনেক বেশি কন্ট্রিবিউট করতে পারি। দুনিয়াবি ভোগবিলাসে বুঁদ হয়ে থাকলে এইসব রক্ত-কান্না-আহাজারি আপনার মনে নাড়া দিবে না। আপনার ফ্যাসিনেশন কাজ করবে মডেল-অভিনেতাদের গর্জিয়াস লুক নিয়ে। আম্বানিদের মতো লাক্সারি অনুষ্ঠান নিয়ে। ফিলস৩নের পোস্টগুলো স্ক্রোল করে ওইসব দামি দামি জিনিস দেখে হয়ত আপনার চোখ চকচক করে উঠবে, নিজের অজান্তেই আপনি বলে উঠবেন, মাশাআল্লাহ।

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের কি এমনই হওয়ার কথা ছিল? রহমানের বান্দা কেমন হবে, কুরআনেই তা উল্লেখ আছে। আল্লাহ আযযা ওয়াজাল বলেন,

“এবং তারা খরচ করে, অযথা ব্যয় করে না, এবং কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এ দুইয়ের মাঝামাঝি।” [সূরা ফুরক্বান: আয়াত ৬৭]

কম জিনিসে অভ্যস্ত হওয়ার ভেতর অনেক খাইর লুকিয়ে আছে। রাসূলুল্লাহর কাছে এসে একদিন এক লোক প্রশ্ন করেন, “ইয়া আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন এক আমলের কথা বলুন, যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবে। আর দুনিয়ার লোকও আমাকে ভালোবাসবে।”

রাসূলুল্লাহ বলেন, “দুনিয়া থেকে দূরে থাকো, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবে। মানুষের জিনিস থেকে দূরে থাকো, মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে।” [সুনান ইবন মাজাহ]

আসুন, পরিবর্তনটা শুরু করি। প্রতি দুইটা পছন্দের জিনিস কেনা থেকে একটি বেছে নিন। পরবর্তী সপ্তাহে টার্গেট আরেকটু বাড়িয়ে দিন। নিজের জন্য প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটা থামিয়ে দিন। বাড়তি জিনিস বিলিয়ে দিন। দেখবেন, কম জিনিসে অভ্যস্ত হওয়ার চেয়ে শান্তি আর কিছুতেই নেই।