ধেয়ে আসছে মৃত্যু

ধেয়ে আসছে মৃত্যু

by sanjida-sharmin

রেললাইনের ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছি। হঠাৎ দূর থেকে ভেসে এলো এক হুইসেলের শব্দ। পিছনের বাঁকা লাইনের দিকে তাকালাম—কিছুই দেখা গেল না। সামনে সোজা লাইনের অনেক দূরে চোখে পড়ল একটা ট্রেন। আমি চলছিলাম সেই পথেই। দ্রুত পাশের লাইনে সরে এলাম। সামনের ট্রেনটি ধেয়ে এলো—প্রচণ্ড গতি নিয়ে। ঠিক তখন আমার পায়ের নিচের লাইনে টের পেলাম এক ধরণের কম্পন। সামনে থেকে আসা ট্রেনটি চলে গেলে, নেমে এলাম রেল লাইন থেকে। পিছনে তাকিয়ে দেখি–আমার ঠিক পিছনেই বিশালদেহী, শব্দহীন এক ট্রেন! কিভাবে আমার এত কাছে চলে এলো, অথচ আমি বিন্দুমাত্র অনুভব করতে পারিনি। আমি দ্রুত সটকে পড়লাম। ট্রেনটি চলে গেল আমার একেবারে কাছ দিয়ে, সব ঘটেছিল কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে।

কী হতে যাচ্ছিল আমার সাথে! আমি তো মারা যাচ্ছিলাম। ঘোরের মধ্যে হারিয়ে গ্রলাম। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেলাম একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মধ্যবয়সী লোকের কথায়: “আপনি তো এখনই ট্রেনের নিচে পড়তেন। যদি সামনের ট্রেনটা না যেত, আপনি নামতেন না। তখন পিছনের ট্রেন আপনাকে মেরে দিত। রেললাইন দিয়ে হাটলে সবসময় পিছনেও খেয়াল রাখবেন!”

হ্যাঁ, সত্যি তাই। জীবন-মৃত্যুর মালিক সেদিন আমাকে মৃত্যু থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। মানুষের মৃত্যু হতে পারে কত আকস্মিক! এমন আকস্মিক মৃত্যু মানুষকে তওবা করার সুযোগ দেয় না, কালিমা পড়ার সময়টুকু দেয় না। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, এমন হঠাৎ মৃত্যু থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে।। (তিরমিযী)

সেদিনের তরুন ফটোগ্রাফার ছেলেটার মৃত্যুর নিউজ, ভিডিও আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সেই দিনটির। আমি জানি ছেলেটা বেখেয়াল ছিল না, তার কোন দোষ ছিল না। সে শুধু বুঝতে পারেনি, মৃত্যু নি:শব্দে তার দিকে ধেয়ে আসছে। সবাই ভাবছে, কী ভয়ংকর দুর্ঘটনা! কিন্তু এটাই ছিল তার তাকদীর। তার জীবনের সীমা এখানেই শেষ ছিল। সেই ছেলেটিও হয়তো ভেবেছিল—সবাই যেমন ভাবে—যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য পেরিয়ে একদিন মৃত্যু আসবে!

আমরাও তো জানি না, আমাদের মৃত্যু কবে হবে। আমরা স্বপ্ন দেখি, কত কিছু পরিকল্পনা করি, ভবিষ্যতের জন্য কত কত প্রস্তুতি নিই। অথচ মানুষের আশা তার মৃত্যুর চেয়ে বড়। হায়! আমাদের প্রত্যেকের মৃত্যুই ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে। শুধু আমরা জানি না, আমাদের সাক্ষাতের দিনটি কবে, স্থানটি কোথায়। এজন্য সবসময় মৃত্যুর জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। হাদীসে এসেছে, “তুমি জীবনদশায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো।”(সহীহ বুখারী)

একজন মা হিসেবে সেদিনের দুর্ঘটনা থেকে বাচার পর, কেন জানি বারবার মনে হচ্ছিল—আমার ছোট ছোট সন্তানদের জন্যই আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। সত্যি, একজন মা তার সন্তানদের নিয়ে কত বেশি ভাবে! কত দুশ্চিন্তা করে! কখন যে সলাতের সময় চলে যায়, খেয়াল থাকে না। দিনে এক পৃষ্ঠা কুরআন তিলাওয়াতের সুযোগ হয় না। এটা সত্যি, সন্তান হতে পারে একজন মায়ের সর্বোত্তম বিনিয়োগ। তবে সন্তানের কারণে নিজের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া কি ঠিক? আমাদের প্রত্যেককে আমাদের দায়িত্ব ও কাজের হিসাব দিতে হবে সেই মহান সত্তার কাছে। সেদিন কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য হবে না।