
দুনিয়াবি শিক্ষাকে কি ইবাদাতে পরিণত করা সম্ভব?
ক্লাস চলছিল ইমাম নববীর চল্লিশ হাদীস সঙ্কলনের। প্রথম হাদীস- “আমলসমুহ নিয়তের কারণেই… ”। এই হাদিসের অর্থ, তাৎপর্য, ব্যাখ্যা শিখছিলাম সেদিন। ঘটনাটি বহু বছর আগের। তখন আমি আমার উস্তাযের অধীনে বসে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতাম। যখন ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে শুনতাম, খুবই আশ্চর্য লাগত। সেদিন যখন জানতে পারলাম, একজন মুমিন চাইলে তার প্রতিটি কাজকেই ইবাদাতে পরিণত করতে পারে—তখন আমি সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এখনো আমার মনে আছে, উস্তায বলেছিলেন, একজন লোক যদি তার বাড়িতে একটা জানালা বানায়, সেটাও ইবাদত হতে পারে। কীভাবে? যদি সে এই নিয়ত করে যে এই জানালার মাধ্যমে আযানের শব্দ শুনে সে নামাজে যাবে এবং আলো-বাতাসও পাবে, তাহলে জানালাটি বানানোও ইবাদত হয়ে যাবে। এবং সে এর জন্য সওয়াব পাবে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইসলামের সৌন্দর্যকে গভীরভাবে প্রকাশ করে।
এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, একজন মুমিন অভ্যাসগত কাজগুলো যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত নিয়ে করে, তবে তা ইবাদাতে রূপ নিতে পারে। আবার বিপরীতভাবে, ইবাদাতও নিয়তের অভাবে কখনো কখনো কেবল অভ্যাসে পর্যবসিত হয়—যার মধ্যে আর ইখলাস বা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা থাকে না। আজকের আলোচনার বিষয় দুনিয়াবি জ্ঞানকে ইবাদাতে পরিণত করার সম্ভবতা নিয়ে।
উল্লেখিত হাদীস থেকে এটা পরিষ্কার যে একজন মানুষের দুনিয়াবি পড়াশোনাকেও ইবাদাতে পরিণত করা সম্ভব। হ্যাঁ, একদমই সম্ভব। তবে নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে, এবং তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে।
তবে, এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন এসে যায়। যেমন:
১) সব দুনিয়াবি জ্ঞানই কি সোয়াব অর্জনের মাধ্যম হতে পারে?
আলিমগণ এব্যাপারে কী বলেছেন!
ইমাম আবু হামিদ আল-গাজ্জালী (রহ.) বলেন:“জ্ঞান দুই প্রকার: দ্বীনি ও দুনিয়াবি। দ্বীনি জ্ঞান হলো যা নবীগণ শিক্ষা দেন এবং যা মানুষ যুক্তি, অভিজ্ঞতা বা শ্রবণ দ্বারা অর্জন করতে পারে না। আর দুনিয়াবি জ্ঞান আবার তিন প্রকার—প্রশংসনীয়, নিন্দনীয় ও বৈধ। প্রশংসনীয় জ্ঞান হলো যা মানুষের পার্থিব কল্যাণের সঙ্গে জড়িত, যেমন চিকিৎসা ও গণিত। এইসব জ্ঞানের কিছু প্রকার ফর্যে কিফায়া, যেমন—চিকিৎসা ও হিসাববিজ্ঞান। যদি কোনো সমাজে এগুলোর অভাব হয়, তবে সবাই গুনাহগার হবে; কিন্তু কেউ একজন এগুলোর দায়িত্ব নিলে বাকি সবার দায়মুক্তি হবে।”(ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন, ১/১৬)
যদি কেউ দুনিয়াবি কোনো বৈধ জ্ঞান অর্জন করেন এবং তাঁর নিয়ত হয়—নিজে উপকৃত হওয়া, সমাজের সেবা করা, দরিদ্রদের সহায়তা করা, মুসলিম উম্মাহকে আত্মনির্ভরশীল করা, তবে তিনি নেক নিয়তের কারণে প্রশংসার যোগ্য এবং আল্লাহর ইচ্ছায় প্রতিদানপ্রাপ্ত হবেন—যদিও এ ধরণের জ্ঞান মূলত মুবাহ।
ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমা-তে বলা হয়েছে: “যে কোনো দ্বীনি জ্ঞান এবং যে মাধ্যমেই তা অর্জন হোক, তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হলে এতে আল্লাহ সেই জ্ঞানার্থীর মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। আর উম্মতের প্রয়োজনীয় দুনিয়াবি জ্ঞান—যেমন চিকিৎসা, কৃষি, শিল্পকলা ইত্যাদিও এতে অন্তর্ভুক্ত, যদি তার নিয়ত হয় উম্মতের উপকার, শক্তি অর্জন, ও কাফেরদের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করা।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দাঈমা, ১২/৭৭)
আলেমদের বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, প্রশংসনীয় ও মুবাহ বা বৈধ এই দুধরণের জ্ঞান একজন মুখলেস মানুষের জন্য সোয়াব অর্জনের মাধ্যম হতে পারে।
২) ক্ষতিকর বা নিন্দনীয় জ্ঞান কোনগুলো?
একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক। ধরলাম, একজন ছাত্রী অনেক চেষ্টা সাধনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের অন্যতম টপমোস্ট সাবজেক্ট ইংলিশ লিটারাচারে চান্স পেল। আমরা সবাই হয়তো জানি, ইংলিশ লিটারাচারে কী পড়ানো হয়। গ্রীক ও রোমান দর্শনের দেব-দেবিদের পৌরাণিক কাহিনী—তাদের অবাধ যৌনাচার, অযাচার, জারজ সন্তানের জন্ম যে নিজেও কিনা দেবতা! আর একেকটা ইংরেজি কবিতা তো প্রেম ও অশ্লীল কথার ঝুলি। আমার শুধু মনে হয়, এগুলো পড়লে একটা যুবক বা যুবতীর মাথায় কী প্রভাব পড়তে পারে!
এরপর আসা যাক বংলা বিভাগের কথায়। আমি জানি না, বাংলা বিভাগে কি পড়ানো হয়, তবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত যা শিখেছি তার মধ্যে কেবল মাথায় গেঁথে আছে মাঝি-কপিলার পরকিয়া প্রেম আর মন্তু টুনির পরকিয়া প্রেমের উপন্যাস। এই বয়সের বাচ্চাদের যদি এগুলো শিখানো হয়, প্রাপ্ত বয়স্কদের কি শেখানো হতে পারে!
এব্যাপারে আলিমদের বক্তব্য:
ইমাম গাজালি (রহ.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি উপকারি ও ক্ষতিকর জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, সে তুচ্ছ ও বাহ্যিক বিষয়ের পেছনে ছুটে চলে যা কেবল দুনিয়াবি লাভ এনে দেয়। এটিই হলো অজ্ঞতা ও ফিতনার মূল। যারা অজ্ঞতার কারণে গুনাহের মাধ্যমে কল্যাণ খোঁজে, তারা ক্ষমাযোগ্য নয়; কেবল তারা ছাড়া যারা ইসলাম গ্রহণের পরে এখনো শিখে ওঠার সুযোগ পায়নি।” (ইহ্যাউ উলুমুদ্দিন)
এধরণের জ্ঞানের আরেকটি উদাহরণ হলো দর্শন। ফকীহগণের মতে দর্শন অধ্যয়ন সাধারণভাবে হারাম। ইবন কুদামাহ (হাম্বলি) ও ইবন আবিল ইয বলেন: “দর্শন এক ধরনের বিভ্রান্তিকর জ্ঞান, যা ঈমান ও পরকাল সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে এবং নবী-রাসূলদের চেয়ে দার্শনিকদের শ্রেষ্ঠ মনে করে।”
আলিমদের কথা থেকে বুঝা যায়, নিন্দনীয় জ্ঞান অর্জন সোয়াব অর্জনের মাধ্যম তো নয়ই বরং এটা গুনাহ। এখন আমরা দুনিয়াবি শিক্ষা ইবাদাতের নিয়তে অর্জন করার পূর্বে আমাদের ভালভাবে বুঝে নিতে হবে যে এটা কি উপকারী জ্ঞান কিনা। আর যদি তা নাও হয়, অন্তত তা একজন মুমিনের ঈমানের জন্য যেন ক্ষতিকর না হয় অর্থাৎ বৈধ জ্ঞানের আওতাভুক্ত হয়।
কেউ একজন বলতে পারে, আমি যদি আগে থেকেই জানি কোনটা খারাপ কোনটা ভালো—আমি শুধু পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য পড়াশুনা করি? কেউ কি পরিপুর্ন নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারে যে, সে নিজেকে ভালো রাখতে পারবে। খারাপ কিছু পড়লেও তার মনে কোন প্রভাব পড়বে না। এক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে, “যা হারামের দিকে নিয়ে যায়, তা নিজেও হারাম।” কিন্তু এমন কোন নিন্দনীয় পড়াশুনা (যেমন: SSC ও HSC লেভেলে বাংলা সহপাঠের উপন্যাসগুলো) যদি কারিকুলামে বাধ্যতামূলক হয়, তবে তা কেবল পরিক্ষার জন্য পড়াশুনা করার বৈধতা আলিমগণ দিয়েছেন।
৩) দুনিয়াবি পড়াশুনা কি দ্বীনি ইলম অর্জনের সমপরিমাণ সোয়াব পাবে?
ইলম অর্জনকে উৎসাহিত করার জন্য যেসব হাদিস এসেছে সেগুলো দ্বীনের জ্ঞানের উদ্দেশ্যে। যেমন:
“প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ” (ইবনে মাজাহ)
“নিশ্চয়ই ফেরেশতারা জ্ঞান অনুসন্ধানকারীর জন্য তাদের পাখা বিছিয়ে দেয়, তার কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। আসমান ও জমিনের সব কিছুই একজন আলেমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে—এমনকি পানির নিচে মাছও” (সহীহ মুসলিম ও তিরমিযী)
তাই দ্বীনের জ্ঞানার্জনের যে সোয়াব বা ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তা দুনিয়াবি জ্ঞান থেকে আশা করা যাবে না।
৪) যদি কেউ ছেলে-মেয়ে সহশিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশুনা করে, তবে কি সেক্ষেত্রে ইবাদাত হবে?
সহ-শিক্ষা ব্যবস্থায় ছেলে-মেয়েরা ল্যাবে, ক্লাসে, টিমে একসাথে কাজ করে। রিসার্চ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় পুরুষ সুপারভাইজারের সঙ্গে একজন মেয়েকে একান্তে আলোচনা করতে হয়। অনেক সময় নারী শিক্ষার্থীদের একা বসে পুরুষ ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের উপস্থিতিতে কাজ করতে হয়। একসাথে ক্লাস, ট্যুর, গবেষণা, উপস্থাপনা—সবকিছুতে নারী-পুরুষ শিক্ষার্থী মিশ্রভাবে যুক্ত হয়ে কাজ করে। এমন পরিবেশ সাধারণভাবেই নারীপুরুষ সবার জন্যই হারাম।
তবে, শর্তসাপেক্ষে আলিমগণ সহশিক্ষাকে জায়েজ বলেছেন। এখানে খেয়াল রাখতে হবে, শর্তগুলো পূরণ করা সম্ভব না হলে সহ -শিক্ষা জায়েজ না।
শায়খ ইবন উসাইমিন (রহ.) বলেন: ❝ যে বিষয় হারামের দিকে নিয়ে যেতে পারে এমন কারণে নিষিদ্ধ, তা প্রয়োজন হলে বৈধ হতে পারে। ❞ (মানজুমাত উসূলুল ফিকহ, পৃ. ৬৭)
সহ-শিক্ষা বৈধ হওয়ার শর্তগুলো হলো:
ক) প্রথমে চেষ্টা করতে হবে এমন জায়গা খুঁজে বের করার যেখানে মেলামেশা নেই বা কম আছে।
খ) নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা: চোখ অবনমিত রাখা, অনাবশ্যক কথা ও মেলামেশা থেকে বিরত থাকা।
গ) ইসলামী শিষ্টাচার মেনে চলা: পোশাক-আশাকে পর্দা মেনে চলা, একান্ত অবস্থান এড়িয়ে চলা।
ঘ) নিজেকে যাচাই করা: যদি কেউ নিজে অনুভব করে যে কোনো নারী বা পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বা হারাম কাজে ঝুঁকে পড়ছে, তাহলে তার জন্য সেই স্থান ত্যাগ করা আবশ্যক।
আমাদের মধ্যে এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা সবকিছুতেই ছাড় খুঁজে বেরায়, এমনকি আলেমদের ফতোয়ার ক্ষেত্রেও। আর আলিমরা সাথে যে শর্ত জুড়ে দেন, তা বেমালুম ভুলে যায়। তাই আমি আমার ব্যক্তিগত কিছু পর্যবেক্ষণ শেয়ার করছি। আমি একজন সহ- শিক্ষা ব্যবস্থার ছাত্রী হয়ে আমার নিজ ডিপার্ট্মেন্টে এমন একটা মেয়েকেও পাইনি যারা এই শর্তগুলো মেনে চলেছে। হ্যা, এটা মেইন্টেইন করা অনেক কঠিন, শিক্ষকদের কথা শুনতে হয়, সহপাঠীরাও ভালোভাবে নেয় না। উল্টো অনেক হিজাবী মেয়েদের দেখেছি যারা খুব সহজেই ছেলেদের সাথে কথাবার্তা ও হাসাহাসি করে। পরিবেশটা খুবই ফেতনার। সত্যি বলতে, আমি আমার খুব কাছের হিজাবী-নেকাবি ও দ্বীন চর্চাকারী এক বোনকেও দেখেছি, কীভাবে সে একেবারেই দুনিয়াদার ছেলের প্রেমে পড়ে মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিল। আমি জানি, কীভাবে হিজাবি মেয়ে অন্য এক প্রাক্টিসিং ছেলের প্রেমে পড়ে যায়, অতঃপর দীর্ঘ ৪-৫ বছর চলে তাদের তথাকথিত হালাল প্রেম। আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কেউ যদি চায় এমন পরিবেশে পড়বে সে নিজে রিস্ক নিয়ে তা করবে, কিন্তু সবাই যে এই পরিবেশে ভালো থাকতে পারবে না—তা আমি শতভাগ নিশ্চিত।
৫) উচ্চশিক্ষার জন্য কাফিরদের দেখে গমন: সেটাও কি ইবাদাত হতে পারে?
মাস্টার্স ও পিএইচডি করার জন্য এখন ছেলে-মেয়ে সব শিক্ষার্থীর ফার্স্ট প্রায়োরিটি উন্নত বিশ্বের অমুসলিম দেশগুলো। তাদের দেশে শিক্ষার মান ও রিসার্চের কোয়ালিটি অনেক ভালো এটা সত্য। এক্ষেত্রে মাহারাম ছাড়া ভ্রমণ সাধারণভাবে মেয়েদের জন্য বৈধ না; হোক তা মুসলিম বা অমুসলিম দেশ। যদিও অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে নারীদের জন্য মাহারাম ছাড়া ভ্রমণ করার অনুমতি আলিমরা দিয়েছেন। আল-হাফিজ ইবন হাজর (রহঃ) বলেছেন:
“আল-বাগাওয়ী বলেছেন: স্কলাররা একমত হয়েছেন যে, কোনো মহিলার জন্য হজ্জ ছাড়া অন্যান্য উদ্দেশ্যে যাত্রা করা অনুমোদিত নয়, যতক্ষণ না সে তার স্বামী বা মাহরামের সাথে থাকে, তবে যদি সে কোনো শত্রু অঞ্চলে থাকে, যা ইসলামবিরোধী, তবে সে একা যাত্রা করতে পারে।” ফাতহুল-বারি, ৪/৭৬
উল্লেখ্য যে, নিরাপত্তা নিয়ে আশংকা না থাকলে, আরও কিছু জরুরী ক্ষেত্রে আলিমরা একাকি ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছেন। তবে, আমি জানি না, একজন মেয়ের জন্য পরিবার-পরিজন ছেড়ে গিয়ে একাকি ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি কিংবা অন্য কোন সাবজেক্টে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা কত বেশি জরুরী। এমন না যে বাংলাদেশে এসব ডিগ্রি অর্জন করার একেবারেই সুযোগ নেই, হয়তো সেই ডিগ্রির মর্যাদা মানুষের চোখে উন্নত দেশগুলো থেকে অর্জিত ডিগ্রির সমান নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আলেমগণ অলটারনেটিভ হালাল পথ খোঁজার যে শর্ত দিচ্ছেন, আমি স্পষ্টত তার লঙ্ঘন দেখতে পাচ্ছি।
৬) কাফির দেশে একজন মেয়ের জন্য একাকি বসবাস করে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?
কাফির দেশে বসবাস করাকে ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন: “আমি সেই মুসলিম থেকে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করছি, যে মুশরিকদের মধ্যে বসবাস করে।” — (আবু দাউদ)
কাফিরদের দেশ মুসলিমদের জন্য উপযুক্ত স্থান না, যদিও দৃশ্যত তা নিরাপদ মনে হয়। কারণ, সঙ্গ একটা বড় বিষয়। কাফিরদের সংগ একজন মানুষকে দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন করে তুলতে পারে, তার মন-মানসিকতা, কিংবা ধ্যান ধারনায় মারাত্মক ও বিধ্বংসী পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। যেহেতু, তাদের জীবনের মূল লক্ষ্যই ভোগ-বিলাস ও পার্থিব জীবনের সাফল্য—এই বিষয়টি খুব সুক্ষ্মভাবে একজন মুসলিমের মাঝেও ঢুকে যেতে পারে। তাদের উন্নত জীবন, আমোদপ্রমোদ ও সৃস্তিকর্তা সম্পর্কে অজ্ঞতা, নাস্তিকতা, সেকুলারিসম—প্রভৃতি এবং আরও মারাত্মক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। তাই দ্বীনের প্রতি যারা অত্যাধিক পরিমানে কমিটেড নয়, তাদের জন্য কিছুতেই সেই পরিবেশ বসবাসের জন্য অনুকূল না। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দেশে থাকতে মোটামুটি বোরকা পরত, পর্দা করত, কিন্তু কাফির দেশে গিয়ে আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসিয়ে বোরকা-হিজাব বাদ দিয়ে টপস আর জিনস পরা স্মার্ট মেয়ে হয়ে গেছে।
অথচ, সে বিদেশে গিয়ে যে জ্ঞান অর্জন করছে, একজন নারীর জীবনে তার গুরুত্ব কতক্ষানি। আমি দেখেছি, ফুল স্কলারশীপ পেয়ে কীভাবে একটা টডলার বেবির মা ও একজন পুরুষের একমাত্র স্ত্রী একাকী চলে গিয়েছে দূর দেশে। এক্ষেত্রে তার প্রায়োরিটি কি হওয়া উচিত ছিল! আল্লাহ তার কাছে কোন দায়িত্বে অবহেলার জন্য জিজ্ঞাসা করবেন—সন্তান, সংসার নাকি উচ্চশিক্ষা!
শেষ কথা, একজন মেয়ে যখন দুনিয়াবি জ্ঞানার্জনের পথে বের হয় সে অনেক রিস্ক নিয়েই সে পথে চলে। এরপর আসে একের পর এক বাঁধা অতিক্রম করার পালা—কো-এডুকেশনে পড়ে নিজের ঈমান, ইখলাস ধরে রেখে যদি সে বেরিয়েও আসে; সে কিন্তু বাইরের জগতটাকে আরও সংকীর্ণ পাবে। গুটি কয়েকটি প্রফেশন ছাড়া (যেমন: গাইনি ডাক্তার, কিছু কিছু সেক্টরের নারসিং ও টিচিং) আর কোথাও উল্লেখিত চারটি শর্ত মেইন্টেইন করে জব করতে পারবে না। মূলত জব করা ও উম্মাহের জন্য অবদান রাখার জন্যই তো এত কিছু। কিন্তু, পর্দা মেইন্টেইন করে, পুরুষদের সাথে হরহামেশা কথা না বলে, চোখ নিচু রেখে, কণ্ঠ নামিয়ে—একজন মেয়ের জন্য জব করা অসম্ভব। তাকে অবশ্যই ছাড় দিতে হবে, যে ছাড় হয়ত তাকে শিক্ষাজীবনে দিতে হয়নি। এভাবেই একজন দ্বীনি নারী এত দূর পথ পারি দিয়ে মাঝপথে গিয়ে ইসলামের বিধান ঠিকমতো না মানতে পারার কারণে হতাশার সাগরে হাবুডুবু খায়।