
লিঙ্গ বিভ্রান্তি ও ইসলাম
ছোটবেলা থেকেই আমি হিজড়াদের অসম্ভব ভয় পেতাম। ফাটা বাঁশের মতো ক্যারক্যারানি কণ্ঠ, নারীদের পোশাক পরা অথচ বিশালদেহী। দেখলেই দানব মনে হতো। এই যে হিজড়ারা পুরুষের মতো কণ্ঠ, উচ্চতা ও গঠনের সঙ্গে নারীর বেশ ধারণ করে, এটা কি ঠিক? ইসলাম কি বলে?
একটি হাদিসে এসেছে: একদিন এক হিজড়াকে নবী ﷺ-এর নিকট আনা হলো। তার হাত-পা মেহেদী দ্বারা রাঙানো ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “এর এই অবস্থা কেন?” বলা হলো, “হে আল্লাহর রাসূল! সে নারীর বেশ ধারণ করেছে।” রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে আন-নকী নামক স্থানে নির্বাসনের নির্দেশ দিলেন।
— সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯২৮
এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, যারা জন্মগতভাবে হিজড়া অর্থাৎ ইন্টারজেন্ডার, তাদের ক্ষেত্রেও পুরুষালী শরীর নিয়ে নারীর বেশ ধারণ করা নিষিদ্ধ। অথচ এক শ্রেণীর হিজড়া এটাকেই তাদের ব্যবসার পুঁজি বানিয়ে নিয়েছে।
আল্লাহ যাদের নারী বা পুরুষ বানিয়েছেন, সেটাই তাদের আইডেন্টিটি। তাদের জন্য অন্য লিঙ্গের পোশাক পরা নিষেধ। অথচ আমরা দেখেছি নারীরাই প্রথম পুরুষদের পোশাক নিজেদের গায়ে জড়িয়েছে — শার্ট-প্যান্ট, জিন্স, টিশার্ট মেয়েরাই আগে পরেছে। সেটাকে বলা হয় আধুনিকতা। এরপর পুরুষদের মধ্যেও কিছু কিছু নারীর পোশাক পরার প্রবণতা ঢুকেছে, যেমন ওড়না পরা, হাতে-কানে অলংকার পরা। অথচ আল্লাহর রাসূল আমাদের এ বিষয়ে কী বলেছেন:
“আল্লাহর রসূল ﷺ নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষদের এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারীদের অভিশাপ করেছেন।”— সহীহ বুখারী
অথচ একদল মানুষ এখন পুরুষ হয়ে নিজেদের নারী দাবী করছে, আর আরেকদল নারী নিজেদের পুরুষ দাবী করছে। এরা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরছে, সেভাবেই সাজ-সজ্জা করছে। কী একটা মগের মুল্লুকে এসে পড়লাম! এই শ্রেণীর মানুষদের রাসূলুল্লাহ ﷺ দেখলে কী করতেন! একটি ঘটনা থেকে তার একটু ইঙ্গিত পাওয়া যায়:
একবার পারস্যের সম্রাট কিসরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে দুইজন দূত পাঠিয়েছিলেন, যাদের দাড়ি ছিল না এবং গোঁফ ছিল বড়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের এই চেহারা দেখে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “ধ্বংস তোমাদের উপর! কে তোমাদেরকে এমন চেহারা ধারণ করতে বলেছে?”— (তারীখ আত-তাবারী)
আরেকটা হাদিসে এসেছে: “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দাড়ি কেটে নারী-পুরুষের মতো হওয়ার চেষ্টা করে, সে আমাদের সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত নয়।’”— মুসনাদ আহমাদ
আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে, এই পুরুষ বেশী নারী ও নারী বেশী পুরুষরা সার্জারি ও হরমোন থেরাপির মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। নিজেদের ট্র্যান্স/জেন্ডার দাবী করছে। এমন বিকৃত রুচির প্রভাবে তাদের আল্লাহর দেওয়া সুন্দর শরীরটাও বিকৃত করছে, হিজড়াদের মতো। এমনকি প্রজনন ও স্বাভাবিক যৌনকর্মেও তারা অক্ষম। এদের পরিণতি কী হতে পারে, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তনকারীকে অভিসম্পাত করেছেন — সামান্য ট্যাটু আঁকা কিংবা ভ্রূপলাকের মতো ছোট বিষয়েও।
আরও বড় বিষয় হচ্ছে, এই ট্রান্স/জেন্ডাররা সমলিঙ্গের মানুষকে তাদের পার্টনার হিসেবে বেছে নেয়; অনেককে আবার বিয়েও করে। এভাবেই তারা সমকামিতার মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়—অথচ এই পাপে লিপ্ত থাকার দরুন আল্লাহ তায়ালা লূত (আ.)এর গোটা জাতীকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা নবী মুহাম্মাদের উম্মাত হিসেবে আমাদের ও এই পাপাচারী মানুষদের ছাড় দিচ্ছেন, তবে ছেড়ে দিবেন না। “নিশচয়ই আল্লাহর পাকড়াও বড় কঠিন।” (সূরা আল-বুরূজ, আয়াত ১২)