Author: sanjida-sharmin

  • বিচারের মানদণ্ড কী?

    বিচারের মানদণ্ড কী?

    নারী বিষয়ক দুটি ঘটনা সম্প্রতি ঘটে গেলো। একটিতে একজন নারী ক্রিকেটার ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময় উর্ধতন ব্যক্তিবর্গের দ্বারা এবইউজড হয়েছেন—নানা ভাবে যখন তখন গায়ে হাত দেয়া থেকে শুরু করে অশ্রাব্য ভাষায় কথা শুনানো, এমনকি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কুপ্রস্তাব। যা একজন নারীর ক্যারিয়ারের পথে মারাত্মক বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে যদি না সে তাতে সম্মত হয়।

    দ্বিতীয়ত, ডা. সাকিয়া হকের স্বামীর পরকীয়া প্রেমের ঘটনা, যেখানে তাঁরই বিছানায় দিনের পর দিন নষ্টামি চলেছে অথচ, ক্যারিয়ার ও ট্রাভেলিং নিয়ে ব্যস্ত ডা. সাকিয়া ঘুণাক্ষরে কিছু টের পায়নি।

    দুজন নারীই প্রকাশ্যে কেঁদেছে। তাদের উপর নিশ্চিতভাবে জুলুম হয়েছে। আমি আজ বলতে যাবো না, নারী হয়ে কেন একজন ক্রিকেট খেলতে গেল কিংবা মুসলিম হয়ে কেন আরেকজন হিন্দু পুরুষকে বিয়ে করতে গেল। আমি একজন নারী হিসেবে তাদের দুজনের ব্যাপারেই সমব্যথী। তাদের কান্না আমার অন্তরকেও কাঁদিয়েছে। কিন্তু যেই বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা হলো নারীসমাজের পারসেপসন।

    আমি দেখলাম, ড. সাকিয়া হকের ঘটনায় নারী সমাজ যতটা ভোকাল, নারী ক্রিকেটারের বেলায় তার কিছুমাত্রাও ছিল না। স্বামীর পরকীয়া ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তা এই দুটিই তো নারী সমাজের খুব কমন দুটি সমস্যা। অথচ আমাদের নারীসমাজ বেছে নিলো স্বামীর পরকীয়া ঘটনাটিকে, আর ঝেড়ে ফেলে দিল অন্য ঘটনাটিকে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তারা নারী ক্রিকেটারের ইস্যুতে এত নীরব? এখানে কি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, তারা ভাবে—“ঘরের বাইরে কাজ করতে গেলে টুকটাক এধরণের সমস্যা হতেই পারে। এসব ম্যানেজ করেই ক্যারিয়ার গড়তে হয়। এটা নিয়ে এত আবেগ আপ্লুত হওয়ার কি আছে!”

    তাদের দৃষ্টিতে, আবেগ আপ্লুত হতে হবে, সেই নারীর জন্য যে মুসলিম হয়েও এক কাফিরকে বিয়ে করল, যাকে বন্ধু বানাতে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বেস্ট ফ্রেন্ড বানালো। হোক তাদের সম্পর্ক আল্লাহর শরীয়তে অবৈধ।

    আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই একেকটা ঘটনা ঘটে। ঘটনাগুলোকে অনেকভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। কিন্তু যার অন্তরে যেটা গেঁথে থাকে সে সেভাবেই তা ব্যাখ্যা করে। একই ঘটনা কাউকে হেদায়াতের পথে নিয়ে যেতে পারে আর কাউকে নিয়ে যেতে পারে গোমরাহির পথে। তাই যা-ই ঘটুক আবেগ কিংবা অভিজ্ঞতার নিরিখে নয়—বিশ্লেষণের মানদণ্ড হওয়া উচিত শারীয়াহ।

  • নারীর ফিতরাত ও আল্লাহর বিধান

    নারীর ফিতরাত ও আল্লাহর বিধান

    নারী আর পুরুষ দুটি ভিন্ন সত্ত্বা, তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। ভ্রূণ অবস্থা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ধাপেই নারী এক স্বতন্ত্র সত্ত্বা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নারীকে সৃষ্টি করেছেন তুলনামূলক কোমল করে। খুব কঠিন কোন পরিস্থিতি একজন নারীর জন্য সহনীয় নয়। একজন পুরুষ যতটা শারীরিক পরিশ্রম ও কষ্ট করতে পারে একজন নারী তা পারে না। এটাই চিরন্তন সত্যি। এটা নারীর কোন দুর্বলতা নয়, এটা তার বৈশিষ্ট্য। আর আল্লাহ তায়ালাই নারীকে এসব বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। তিনিই তাদের ঘরে অবস্থান করতে বলেছেন, কারণ সেটাই তাদের জন্য অধিক কল্যাণকর। আর সাথে দিয়েছেন নারীদের জন্য অনেক অনেক রুখসাত।

    একজন পুরুষের জন্য কখনোই কোন অবস্থাতে সালাত পরিত্যাগ করা বৈধ নয়। অথচ আল্লাহর বিধানে একজন নারীকে সালাতের বিধানে ছাড় দেয়া হয়েছে, যখন সে ঋতুবতী হয়। যারা নারী ও পুরুষকে সমান প্রমাণ করতে চায়। এবং পুরুষের সমান কর্মদক্ষতা দিয়ে নারীকে মূল্যায়ন করতে চায় সেই নারীবাদী সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের জীবনের এই প্রাকৃতিক অবস্থার ব্যাপারে কি কোন ছাড় আছে! না নেই। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন নারীর জন্য সেই সময়গুলোতেও একই পরিমাণ কাজের চাপ অব্যাহত রাখা একটা জুলুম।

    তারপর যদি মাতৃত্বকালীন সময়ের কথা বলি, প্রেগ্ন্যান্সি পিরিয়ডে একজন নয় মাসের গর্ভবতী মাকে ডেলিভারির আগের দিন পর্যন্ত অসুস্থ শরীরটাকে নিয়ে ফুল টাইম অফিস করতে হয়। অথচ তখন সামান্য বিশ্রাম নিতেও তার মন কাঁদে, শরীর ভেঙে পড়ে। এটা কী নারীর প্রতি জুলুম নয়! এই অবস্থায় একজন নারী যে কতোটা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে তা জানে কেবল সে ও তার রব। কেউ কেউ হয়ত বলবে, চাইলে তো কিছুদিন আগেও মাতৃত্বকালীন ছুটি নেয়া যায়। হ্যা যায়, কিন্তু আমি দেখেছি, অনেক মা নবজাতকের সাথে আরও একটি দিন কাটানোর আশায় ডেলিভারির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অফিসে থাকেন—নিজের শরীরের সব কষ্ট যন্ত্রণা সয়ে।

    সন্তান জন্ম হওয়ার পর যখন চার কিংবা ছয়মাস বাদে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হয়ে যায়, কলিজার টুকরাকে রেখে অফিসে যেতে মায়ের অন্তরের উপর যে কী মানসিক চাপ পড়ে, তা বুক ছিঁড়ে কি দেখানো যায় এই নারীবাদী সমাজকে! একটা ব্রেস্টফিডিং বাচ্চাকে দুই বছর ফিডিং করানো হয়। অথচ একজন মা ছুটি পায় কিছু মাস। বাচ্চাদের ফিডিং-এর জন্য নির্দিষ্ট কোন টাইম নির্ধারিত নেই। যখন-তখন তার মাকে প্রয়োজন হয়। আবার যেই মা বাচ্চাকে ফিডিং করায়, তার জন্য অফিস টাইমের দীর্ঘ সময় দূরে থাকা কেবল মানসিক কষ্ট নয়, ভীষণ শারীরিক কষ্টের কারণও হয়ে দাঁড়ায়। আচ্ছা, নারীর এই কঠিন সময়ের ব্যাপারে পুঁজিবাদী সমাজ কী বলে!

    এসব বিশেষ অবস্থা বাদই দিলাম। একেবারে সাধারণ সময় রোজ রোজ পুরুষদের ঠেলা ধাক্কা খেয়ে অফিসে যাওয়া ও একই যুদ্ধ করে অফিস থেকে ফেরা—কোন মেয়ের জন্যই স্বাচ্ছন্দের নয়। কোন কোন পুরুষের এতে মজা লাগতে পারে, কিন্তু যে নারীর ফিতরাত একেবারে বিকৃত হয়নি, এমন কারোরই এগুলো ভালো লাগে না। বরং প্রচণ্ড বিরক্ত লাগে।

    সারাদিনের অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে যখন ঘরে ফেরে স্বাভাবিকভাবেই একজন পুরুষের শরীরে যতটুকু শক্তি অবশিষ্ট থাকে, একজন নারীর ক্ষেত্রে তা থাকে না। কিন্তু তারপরও ঘরের কাজ, সংসারের দায়িত্ব, সন্তানের যত্ন—সবই তার কাঁধে, তখন প্রশ্ন জাগে—এ কি নারীর প্রতি অন্যায় নয়?

    ভেবে দেখুন তো, পুঁজিবাদী জীবন ব্যবস্থার নারীদের পুরুষসূলভ জীবনযাত্রা ভালো, নাকি আল্লাহ তায়ালা নারীর স্বভাব-চরিত্র, মন-মানসিকতার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে যে জীবনবিধান দিয়েছেন; যেভাবে নবী কন্যা, নবীর স্ত্রীগণ ও মুমিন নারীরা তাদের জীবন কাটিয়েছেন–সেটা ভালো। আর যে নিরুপায় হয়, তার কথা তো ভিন্নই।

  • হুদাইবিয়া থেকে ফিলিস্তিন: আল্লাহর নিখুঁত পরিকল্পনা

    হুদাইবিয়া থেকে ফিলিস্তিন: আল্লাহর নিখুঁত পরিকল্পনা

    ফিলিsতিনের যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর থেকে আমার কেবল হুদাইবিয়ার সন্ধির কথা মনে হচ্ছে, যদিও একটা হচ্ছে চুক্তি আর অন্যটি যুদ্ধ। কারণ, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন হুদাইবিয়ার সন্ধি করেছিলেন, তখন সবার কাছে মনে হয়েছিল এটা খুবই অবমাননাকর ও মুসলিমদের পরাজয়। এমনকি উমর (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলেছিলেন, “আপনি কি আল্লাহর রাসুল নন? আমরা কি হকপথে নই, আর তারা কি বাতিল পথে নয়?”

    রাসুল (সা.) বললেন, “অবশ্যই আমি আল্লাহর রাসুল। আমি তাঁর আদেশ অমান্য করব না, তিনিই আমাকে সাহায্য করবেন।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

    উমরাহ করতে আসা সাহাবীরা কেউই উমরাহ না করে ফিরে যেতে চাচ্ছিলেন না, পশু জবাই করে, মাথামুন্ডন করতে চাচ্ছিলেন না। তখন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের মাথা মুন্ডন করেন এবং তাঁর দেখাদেখি সাহাবীরাও একই কাজ করে। (সহিহ বুখারি)

    অন্যদিকে আমাদের বীর ফিলিsতিনি ভাইয়েরা আগ বাড়িয়ে হিসরাইলের মতো রাষ্ট্র, যাদের পিছনে আছে পৃথিবীর এক নাম্বার পরাশক্তি আমেরিকা, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় — সুবহানআল্লাহ! এরপর কত ধ্বংসয/জ্ঞ, কত রক্ত, কত বিচ্ছেদ, কত ক্ষুধা, কত পিপাসা, কত অঙ্গহানি, কত শাহাদাত — সুবহানআল্লাহ! রাসুলের সত্যিকার অনুসারীরা ভেঙে পড়েনি, থেমে যায়নি, আত্মসমর্পণ করেনি। অথচ এসিরুমে শুয়ে বসে গাজার নিউজ দেখা আমাদের মতো বিশ্বের নামধারী মুসলিমরা বলেছে—“কী ভুলটাই না Haমাস করেছে! কেন ওরা আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করতে গেল? ওরা নিজেরাই খাল কেটে কুমির এনেছে!”

    ওদের প্রতি করা গণহত্যা দেখে একসময় আমার ভয় হতো—ওদের সবাই হয়তো একে একে জান্নাতের পাখি হয়ে যাবে, যেমনটি হয়েছিল সূরা আল-বুরুজে বর্ণিত আসহাবুল উখদূদের ঘটনায়। আর এই নিফাকের যুগে সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে! কিন্তু সেটাও পরাজয় নয়। স্বয়ং আল্লাহ তাদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন—ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيرُ — “এটাই মহাসাফল্য।”

    আর ঠিক দুবছর পর, আল্লাহর ইচ্ছায় সত্যি যুদ্ধ বিরতি হয়েছে, যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। অথচ এর আগে কতবারই না যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি হতে না হতেই তা ভেঙেছে বর্বর হিসরাইল। এখন হয়তো পৃথিবীর নামধারী মুসলিমরা বুঝতে পারছে—ফিলিস্তিন যুদ্ধে Haমাসই বিজয়ী। যুগ যুগ ধরে কারাগারে অত্যাচারে জর্জরিত নিরপরাধ মুসলিমরা ছাড়া পাচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ শাহাদাতের মর্যাদা নিয়ে জান্নাতে চলে গেছে ইনশাআল্লাহ, মুমিনরা ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, এবং আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা উন্নীত হয়েছে, মুনাফিকদের চেহারা উন্মোচিত হয়েছে, মানবতার ফেরিওয়ালাদের আসল চেহারা বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ পেয়ে গেছে, কফিররা মুসলিম নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ উপর যে নির্মমতা চালিয়েছে, তারা নিজেদের জাহান্নামের নিকৃষ্টতম শাস্তির উপযুক্ত করে নিয়েছে ইনশাআল্লাহ — এবং আরও অনেক কিছু।

    ভয় হয়, আমরা যারা নিজেদের ঈমানদার বলে দাবি করি, ফিলিsতিনি মুসলিমদের ঈমানের কাছে আমাদের ঈমান তো কিছুই না। অথচ আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেছেনঃ তারা কি মনে করেছে, “আমরা ঈমান এনেছি” বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? [সূরা: আল-আনকাবূত] রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—“তোমাদের পূর্ববর্তী একজন ব্যক্তির শরীর লোহার চিরুনি দিয়ে চিরে ফেলা হত, তার মাংস ও হাড় আলাদা করা হত, তবুও সে তার ধর্ম ত্যাগ করত না।” (সহিহ বুখারি)

    বড্ড ভয় হয়, ঈমানের সাথে মরতে পারব কিনা। এই ঈমান আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে কিনা। ইয়া আল্লাহ আপনি আমাদের ঈমানের সাথে মৃত্যু দেন এবং আপনার সেই জান্নাতে একটু জায়গা দেন যার প্রশস্ততা আসমান ও পৃথিবীর সমান।

  • থাকলে কামাই, লাগে না জামাই?

    থাকলে কামাই, লাগে না জামাই?

    বর্তমান সময়ে মেয়েদের মাঝে বিয়ের ব্যাপারে বেশ অনিহা দেখা যায়। বিয়ের বদলে তারা লেখাপড়া ও ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে। আর এই ব্যাপারে মেয়েদের উৎসাহ উদ্দীপনা যোগায় অনেক সময় তার পরিবার—বাবা-মারাই। তাদের অনেককে গর্ব করে বলতে শোনা যায়: আমার মেয়ে আগে নিজ পায়ে দাঁড়াবে। তারপর তার বিয়ের চিন্তা করব।

    অনেকে মনে করে, ফিনানশিয়াল কন্ট্রিবিউশন না থাকলে স্বামীর সংসারে তার কোন দাম থাকবে না। পায়ের নিচে কোন মাটি থাকবে না। যেসব মেয়েরা চাকুরী করে না বা নিজেস্ব কোন আর্নি নেই, তারাই যেন কেবল মারাত্মক অত্যাচারের শিকার হয়! ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার কারা হয়? কেন হয়? এবং এর সমাধানের জন্য করণীয় কি তা এক ভিন্ন আলোচনা। তবে কিছু জরিপ থেকে আমাদের ধারণা উল্টো চিত্র দেখা যায়, যেখানে গৃহিনীদের তুলনায় কর্মজীবি নারীরাই অধিক সহিংসতার শিকার হয়েছে (Shafayatul Islam Shiblee et al.)।

    আমি এমন এক বোনের গল্প বলতে চাই, যে তার বাবা-মায়ের বড় মেয়ে। তার কোন ভাই নেই। ছোটবেলা থেকেই তাকে বড় করা হয়েছে এমন মানসিকতা নিয়ে যেন সেই সংসারের বড় ছেলে। আর একসময় তাকেই সংসারের হাল ধরতে হবে। মেয়েটা দেশের অন্যতম ভার্সিটি থেকে পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে, কোমর বেঁধে নামে একটা সরকারি চাকুরির জন্য। এর মাঝে বিভিন্ন সময় তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে, কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে অনড়—আগে ভালো একটা চাকুরিতে ঢুকবে, সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে আর তারপর বিয়ে। একটা সরকারি চাকুরির তার হলো বটে তবে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বয়স গড়িয়ে গেল অনেকটা। এখন আর তেমন কোন প্রস্তাব আসে না মেয়েটার। হ্যাঁ, এখন মেয়েটার স্ট্যাবল আর্নি আছে। কিন্তু এই আর্নিং কি তার জন্য যথেষ্ট!

    আচ্ছা, কেবল ভরণপোষণ পাওয়ার জন্যই কি একটা মেয়ে বিয়ে করে! তাহলে কেন মানুষ বিয়েকে চাকুরির মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়! একটা চাকুরী কি একজন মেয়েকে দিতে পারে দাম্পত্য জীবনের সুকুন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে ভালোবাসার পবিত্র বন্ধন আল্লাহ তায়ালা দিয়ে দিয়েছেন, একটা চাকুরী কি পারে সেটা দিতে? আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে বিয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেনঃ

    “আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে এটা রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও; আর তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন।সূরা রূম, আয়াত ২১

    তিনি আরও বলেনঃ “নারীরা তোমাদের পোশাক, আর তোমরা তাদের পোশাক।” সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৭

    বিয়ে হচ্ছে হালাল্ভাবে নারী ও পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের মাধ্যম। বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সোয়াব লাভের উপায়। তাছাড়া দম্পতিদের একজন হতে পারে আরেকজনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু, সবচেয়ে প্রিয়জন—যাকে নিজের মনের সব খুলে বলা যায়; যেখানে থাকে না কোন ভঙ্গিতা। পারস্পরিক কল্যাণকামীতাই এই সম্পর্কের বুনিয়াদ। চাকুরী কি পারে মানুষের সেই জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে?

    একজন মেয়ে পড়াশুনা বা চাকুরিতে ভালো করার জন্য, প্রমোশন পাওয়ার জন্য কত চেষ্টা সাধনাই না করে, যদি সংসারকে সুকুনের জায়গা বানানোর জন্য ও স্বামীর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, অয়াস্থাভাজন-হওয়ার জন্য সে কিছু চেষ্টা সাধনা করত!

    তাছাড়া একজন নারীর মাঝে মাতৃত্ব একটা ফিতরাত। একটা চাকুরী কি পারে আমাদের ফিতরাতের এই চাহিদা মেটাতে! একজন নারী মন থেকে চায় সন্তানের মা হতে। সন্তানদের সাথে সময় কাটাতে। আদর-যত্নে গড়ে তুলতে কাদামাটির মতো নরম তুলতুলে তার ছোট্ট শিশুটিকে। কিন্তু একটা মানব সন্তান প্রতিপালন করা ততটা সহজ নয়, তার দরকার সার্বক্ষনিক আদর-যত্ন-ভালোবাসা। কিন্তু একজন চাকুরীজীবী মা খুব স্বল্প সময়ই পায় তার সন্তানের জন্য। এই অবস্থায় তাকে সবচেয়ে বেশি ডিলেমাতে পড়তে হয়, সেকুলার কিংবা ইসলামী—সব ঘরানার নারীই যাদের মনে মাতৃত্বের ফিতরাত নষ্ট হয়নি—চায় সন্তানের জন্য চাকুরী ছেড়ে দিতে। কিন্তু অধিকাংশের ক্ষেত্রেই সেই চাওয়া পূরন হয় না। চাকুরির জন্য সন্তানের অধিকার হনন করা হয় নির্মমভাবে।

    তাই কামাই থাকলে জামাই লাগে না—এই চিন্তা একেবারেই অবান্তর ও অবাস্তবসম্মত। এটা নারীকে পুঁজির বাজারে যথেচ্ছা ব্যবহার করার জন্য নির্মিত এক বয়ান। বোনেরা, আপনাদের মন-মগজে যদি এমন কিছু ঢুকে গিয়ে থাকে তবে তা যতদ্রুত সম্ভব সরিয়ে ফেলুন। যতদ্রুত জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে বুঝবেন, আপনার জন্য ততই কল্যাণকর।

  • সুন্দরী প্রতিযোগিতা

    সুন্দরী প্রতিযোগিতা

    ঝকঝকে আলো, ঝলমলে স্টেজ, চোখ ধাঁধানো গ্ল্যামার—এক ঝাঁক তরুণী লাজলজ্জা ঝেড়ে বুকে গর্ব নিয়ে হেঁটে চলেছে। সারাক্ষণ মুখে মেকী হাসি, দর্শকের মন জয় করা তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

    হ্যাঁ, আমি সুন্দরী প্রতিযোগিতার কথা বলছি। সারা বিশ্বে যেমন জনপ্রিয়, বাংলাদেশেও এর খ্যাতি কম নয়।

    কিন্তু স্টেজের আলো আর মঞ্চের চাকচিক্যের পেছনে কি? কি উদ্দেশ্য এই প্রতিযোগিতার? কেবলই কি সেরা সুন্দরিকে খুঁজে বের করা নাকি আরও কিছু আছে?

    ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় সুন্দরী প্রতিযোগিতার সূচনা হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিমা বিশ্বে। ১৮৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বড় ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দর্শক আকর্ষণ, বিনোদন এবং ব্যবসা বৃদ্ধি। আর ১৯৫১ সালে “মিস ওয়ার্ল্ড” প্রতিযোগিতা শুরু হয়, এরপর আসে “মিস ইউনিভার্স”। এগুলো দ্রুতই আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং বহুজাতিক কর্পোরেট কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকত্বে বিশাল বাজার তৈরি করে।

    এ ধরণের আয়োজনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল প্রসাধনী, ফ্যাশন ও বিনোদন শিল্পের জন্য নারীকে প্রচারণার হাতিয়ার বানানো। সুন্দরী প্রতিযোগিতা কেবল একটি সৌন্দর্য প্রদর্শনী নয়; বরং এটি স্পনসরশিপ, মিডিয়া রাইটস, ফ্যাশন, কসমেটিকস, পর্যটন ইত্যাদি খাতের সঙ্গে মিলে গড়ে উঠেছে একটি বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রি। এজন্য একে বলা হয় “মাল্টি-মিলিয়ন ডলার বিজনেস”।

    আচ্ছা, বিজনেস বুঝলাম। কিন্তু বিক্রেতা কে? আর বিক্রি করছেই বা কি?

    সোজাসাপ্টা উত্তর হচ্ছে—এখানে বিক্রেতা হচ্ছে আয়োজকরা, যারা সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং “নারীর সৌন্দর্য”কে পণ্য বানিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করে। কীভাবে?

    যেমন ধরুন ছোট পরিসরে Lux Channel i Superstar–এর কথাই বিবেচনা করা যাক। Lux মূলত ইউনিলিভার লিমিটেডের একটি প্রোডাক্ট। মূলত টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন এদের ব্যবসার অংশ। এই স্পনসর ব্র্যান্ড কোটি টাকা দিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। যেহেতু সুন্দরী প্রতিযোগিতা সরাসরি “সৌন্দর্য, আভিজাত্য, গ্ল্যামার” এর সঙ্গে যুক্ত; যখন কোনো কসমেটিকস, ফ্যাশন, পারফিউম বা টেলিকম ব্র্যান্ড এটি স্পনসর করে, তখন গ্রাহকের চোখে ব্র্যান্ডটি হয়ে ওঠে “আধুনিক, গ্ল্যামারাস, ট্রেন্ডি”। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে Lux দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরী প্রতিযোগিতা স্পনসর করেছে, যার ফলে ব্র্যান্ডটি এখনো নারীদের কাছে “সৌন্দর্যের প্রতীক” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

    প্রতিযোগিতার সময় ও পরবর্তী সময়ে স্পনসর ব্র্যান্ডের নাম সব জায়গায় প্রচারিত হয়—টিভি বিজ্ঞাপন, ব্যানার, অনলাইন নিউজ, সোশ্যাল মিডিয়া। দর্শকের মনে গেঁথে যায় যে, সৌন্দর্যের সঙ্গে এই ব্র্যান্ডই সম্পর্কিত। যেমন—“Lux Channel i Superstar” শোনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে প্রথমে ভেসে ওঠে “Lux সাবান”।

    তাছাড়া প্রতিযোগিতার বিজেতারা সাধারণত স্পনসর ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে যায়। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে সাধারণ নারী-পুরুষ মনে করে—“সে সুন্দর হয়েছে এই পণ্য ব্যবহার করে”—ফলে পণ্যের বিক্রি বাড়ে। বাংলাদেশে সৌন্দর্য প্রসাধনী ও কসমেটিকস মার্কেট বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার; এই প্রতিযোগিতা সেই বাজারকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

    সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন হলে তা নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হয়—খবর, রিপোর্ট, টক শো। এতে স্পনসর ব্র্যান্ডের নাম বারবার উচ্চারিত হয়, যা কার্যত “ফ্রি বিজ্ঞাপন”।

    সুন্দরী প্রতিযোগিতা তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করে। এই বয়সেই যদি কোনো মেয়ে বা ছেলে মনে করে “Lux সাবান মানেই সুন্দর”, তবে সে হয়তো বহু বছর ধরে একই ব্র্যান্ড ব্যবহার করবে। এতে কোম্পানির জন্য তৈরি হয় লাইফটাইম কাস্টমার ভ্যালু, যা বহু গুণ বেশি লাভজনক।

    সুন্দরী প্রতিযোগিতা স্পনসর করে কোম্পানিগুলো—ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ায়, পণ্যের বিক্রি বাড়ায়, বিনামূল্যে মিডিয়া প্রচার পায় এবং দীর্ঘমেয়াদি গ্রাহক ধরে ফেলে। তাদের জন্য এটি আসলে একটি বিনিয়োগ, যার রিটার্ন অনেক বেশি।

    কেন সুন্দরী মেয়েরা পণ্য হয়ে অন্যের পকেট ভরছে?

    কারণ তাদেরকে লোভ দেখানো হচ্ছে—অর্থের লোভ, মিডিয়ায় স্টার হওয়ার লোভ, জনপ্রিয় হওয়ার লোভ। তবে, হাজার হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে থেকে শুধুমাত্র একজনকে বেছে নেওয়া হয়—এটাই সুন্দরী প্রতিযোগিতার কঠিন বাস্তব। যদিও বিজয়ী হওয়া মানে নগদ অর্থ, নতুন গাড়ি, গিফট হ্যাম্পার এবং Lux বা অন্যান্য ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরশিপের সুযোগ। সঙ্গে মিডিয়া, ফটোশুট, নাটক ও বিজ্ঞাপন—এগুলো বিজয়ীর জন্য “স্বপ্নের সুযোগ” মনে হলেও, প্রকৃতপক্ষে এই সুযোগই আয়োজক ও স্পন্সরের কোটি কোটি টাকার ব্যবসার মূল চালিকা শক্তি। প্রতিযোগী নারী যত বেশি সময়, অর্থ ও শ্রম খরচ করে, তারা ততই এই ব্যবসার চক্রে যুক্ত হয়। আর হাজার হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে বিজয়ী এক হওয়ায় বাকিরা সীমিত বা শূন্য আর্থিক সুবিধা পায়।

    এই চক্রে প্রতিযোগীদের সৌন্দর্য, শ্রম ও আত্মবিশ্বাস—সবই অন্যের লাভের জন্য ব্যবহৃত হয়। লোভ দেখিয়ে, “বিজয়ী হলে সব সুযোগ পাবে” বলে সবাইকে মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। দর্শক মুগ্ধ হয়, মিডিয়া রেটিং বাড়ে, স্পন্সর কোটি কোটি টাকা আয় করে, কিন্তু প্রতিযোগীদের বাস্তব ক্ষতির দিকে কেউ মনোযোগ দেয় না। ফলে স্টেজের ঝলমলে আলো আর মেকী হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক কঠিন বাস্তবতা: প্রতিযোগী নারীদের শ্রম ও সৌন্দর্যকে অন্যের পকেট ভরানোর হাতিয়ার করে তোলে।

    আচ্ছা, প্রতিযোগীদের ক্ষতিটা আবার কি?

    প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির জন্য কয়েক মাস সময় দিতে হয়—ডায়েট, ফিটনেস, গ্রুমিং, রিহার্সাল, ট্রেনিং ইত্যাদি। এই সময় তাদের কেউ কেউ পড়াশোনায় পিছিয়ে যায় কিংবা চাকরির সুযোগ হারায়। অনেকেই প্রতিযোগিতার পর ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।

    সৌন্দর্য বিচার মানে তুলনা—কার চেহারা, শরীরের গঠন কেমন। এই অসুস্থ তুলনার ফলে অনেক প্রতিযোগী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, আত্মবিশ্বাস হারায়। অনেকে নিজেকে “অসুন্দর” ভাবতে শুরু করে, যা দীর্ঘমেয়াদে হতাশার জন্ম দেয়।

    প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মেয়েদের অনেক সময় পরিবার, আত্মীয় বা সমাজের কাছ থেকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এতে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, পারিবারিক সুনাম, এমনকি বিয়ের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ে।

    প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পোশাক, মেকআপ, ফটোশুট, গ্রুমিং, ট্রেনিং—এসবের জন্য অনেক খরচ হয়। বেশিরভাগ প্রতিযোগী নিজের খরচেই এগুলো করে, অথচ বিজয়ী না হলে সেই টাকা একেবারেই “জলে গেল” অবস্থা হয়ে যায়।

    দর্শকদের উপর এর প্রভাব কি?

    এ ধরনের সুন্দরী প্রতিযোগিতা দর্শকদের উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। অনেক মেয়ের মনোভাব প্রভাবিত হয়—তারা নিজেকে সেই ঝলমলে স্টেজে দেখতে চায়। যদি মনে হয় সে যথেষ্ট সুন্দরী নয়, তবে এটি হতাশা ও আত্মসম্মানহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে যারা মনে করে তারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে, তারা অতিরিক্ত সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে মেকাপ, সাজসজ্জা, পোশাক ইত্যাদির জন্য, অথচ তাদের আসল সম্ভাবনা ও মেধা উপেক্ষিত থাকে। ফলে সময়, অর্থ ও প্রতিভা নষ্ট হয়।

    পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রভাব ভিন্ন হলেও সমানভাবে গভীর। মেকাপ করা, গ্ল্যামারাস সাজের নারীদের দেখলে অনেকের মনেই তৈরি হয় “একেবারে সেই ধরনের নারীই চাই”। অবিবাহিত পুরুষরা বাস্তবতা না বুঝে সেই ধারণার মধ্যে আটকে যায়। বিবাহিত হলে যদি পুরুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে স্টেজের প্রতিযোগিতার নারীর তুলনা করতে থাকে, তখন দাম্পত্য জীবনেও অসন্তোষ ও মনঃক্ষতি দেখা দিতে পারে।

    ইসলাম নারীর সৌন্দর্য ও সম্মানকে কীভাবে দেখে?

    ইসলাম নারীকে শুধু সৌন্দর্যের আইটেম হিসেবে নয়, বরং একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে সম্মান দেয়। নারীকে কখনোই পুজিবাদি বা ব্যবসায়িক সিস্টেমের পণ্য হিসেবে দেখতে চায় না। আল্লাহ তাআলা নারীকে মানুষের মর্যাদা দিয়েছেন—পুরুষের মতোই সমান মর্যাদা ও অধিকারসহ।

    নারীর সৌন্দর্য আল্লাহ প্রদত্ত এক অসাধারণ নিয়ামত। আল্লাহ যে কাউকে বেশি দিয়েছেন, যে কাউকে কম—এটি মানুষের কাছে বিচার্য নয়। ইসলাম শিখায়, নারীকে শুধুমাত্র সৌন্দর্য দিয়ে বিচার করা ঠিক নয়। এমনকি বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সৌন্দর্যকে সর্বশেষ বিবেচ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

    কিন্তু এই পুজিবাদি, ভোগবাদী সুন্দরী প্রতিযোগিতার সমাজে, নারীকে তার যৌবনকালে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যতদিন সে মেকাপ ও চেহারার কারসাজি করে আকর্ষণীয় থাকবে, ততদিনই তার “মূল্য” আছে। ডায়েট, স্লিম শরীর, ঝকঝকে চুল—সবই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী। কিন্তু সামান্য ওজন বেড়ে গেলে বা বয়স বাড়লে, তার মূল্য নেই। নিঃসন্দেহে এই মানসিকতা ও এ ধরনের প্রতিযোগিতা নারীর সম্মান ও মর্যাদাকে মারাত্মকভাবে বিনষ্ট করে।

  • নারীর নিরাপত্তা বিধান কি চাকুরিতে নিহিত?

    নারীর নিরাপত্তা বিধান কি চাকুরিতে নিহিত?

    নারীরা সংসারে নিপীড়িত বা সহিংসতার শিকার হতে পারে, তার স্বামী, বাবা বা আপন আত্মীয় তার দায়-দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করতে পারে, সংসারে তার কোন মর্যাদা না থাকতে পারে যদি তার আর্থিক কোন অবদান না থাকে—এ জাতীয় কথা প্রায়ই শোনা যায়। তাই অনেকে মনে করেন চাকুরিই হতে পারে এই সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান। আসলেই কি তাই?

    আমি নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার বিরোধী নই বা তার শিক্ষার্জনেরও না। তবে, এই চাকুরি ও শিক্ষা যদি একজন নারীকে সংসার বিমুখী করে তোলে বা সন্তান জন্মদানে অনাগ্রহী করে কিংবা তাকে এমন কোন পরিবেশে বা পরিস্থিতিতে ফেলে যা তার বর্তমান নিরাপত্তার জন্য হুমকি ও ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক—সেখানেই আমার আপত্তি। আমি এমন বোনকে চিনি যার সন্তান হয় না, এবং সে পর্দা করে ইসলামী পরিবেশে চাকুরি করছে, আমি বলব না—“বোন চাকুরি করো না।”

    আমি নিষেধ করি আমার সেই বোনদের যাদের বাসায় ছোট ছোট বাচ্চা আছে, যাদের চাকুরির পরিবেশ মোটেও ভালো নয়। কেন করি? তার বাচ্চাদের জন্য করি, তার নিজের ঈমান ও আখলাকের নিরাপত্তার জন্য করি। আমার স্বার্থ কোথায়!

    অনেক বাবা-মা মনে করেন, তাদের মেয়েকে চাকুরি করতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, যেন স্বামী অত্যাচারী হলেও সে আর্থিক কষ্টে না ভুগে। তাদের উদ্দেশ্য হয়তো মহৎ। কিন্তু চাকুরী তার জীবনক্যা আরও কঠিন করে দিতে পারে এবং তার সন্তানদের জীবনকেও, সেটা তাদের মাথায় থাকে না।

    আমাদের সমাজে চাকুরিকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার একমাত্র পথ মনে করা হয়, আমি কিন্তু তা মনে করি না। আমি দেখেছি, একটা মেয়ে শিশুর অনেক সম্ভাবনা থাকে। সে অনেক কিছু করতে চায়। কিন্তু বাবা-মা তার লেখাপড়া ছাড়া আর কিছুই করাকেই অপছন্দ করেন। দিনরাতে জীবন-যৌবন দিয়ে শুধু পড়তে হবে—এটাই তার একমাত্র দায়িত্ব হিসেবে পারিবারিকভাবেথক শেখানো হয়। তার স্কিল ডেভোলেপমেন্টের ইচ্ছা মুকুলেই ঝরে পড়ে। সবাই যে লেখাপড়ায় সমান ভালো না, এটাও তারা বুঝতে চায় না। লেখাপড়ার উদ্দেশ্য জ্ঞানার্জন থাকে না, কেবল চাকুরি করা বা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই হয়ে যায়। এভাবে একজন ছেলে বা মেয়ে তাদের দায়িত্বের পরিধি নির্ধারণ করতে অক্ষম হয়ে যায়। যদিও রুটিরুজি পুরুষের প্রধান দায়িত্ব তাই তাদের ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা করে না, তবে নারীরা এই ইঁদুর দৌড়ের চক্রে পড়ে তাদের প্রধান দায়িত্বে অবহেলা করছে। তারা হয়ে উঠছে টাকা কামানোর মেশিন—তাদের স্বামী, সন্তান ও সংসারের অন্যরা তাদের উপার্জিত অর্থের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে, যদিও তারা উপার্জন না করলেও সব চলতো। আমি জানি, অনেক চাকুরীজীবী বোনের ব্যাংকের চেক বই বা এটিএম কার্ড থাকে স্বামীর কাছে, স্বামী না চাইলে টাকা তুলতে পারে না। এই হল তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা!

    অন্যদিকে, আমি চিন্তা করি, সেসব নারীর কথা যারা সন্তান প্রতিপালন, সংসার সামলে সমাজে অবদান রাখে, প্রতিনিয়ত স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে, জ্ঞানার্জন করে; আর যদি সেখান থেকে কোন আয়-রোজগার হয়, তবে তা তার নিজের। আমি সত্যি আমাদের সংসারী নারীদের প্রতিভা দেখে বিস্মিত। একজন চাকুরিজীবী নারী কেবল অফিসে কাজ করতে করতে এতটা ক্লান্ত হয়ে যায় যে নিজের বাচ্চা ও সংসার সামলাতে হিমশিম খায়, সেখানে একজন গৃহিণী বাচ্চা ও সংসার সামলে কত কিছু করছে! একেকজন মা যেন একেকজন বিজ্ঞানী। তারা বাচ্চা প্রতিপালন, তারবিয়াত ও শিশুদের শেখানোর নতুন নতুন থিউরী আবিষ্কার করছে।

    সেগুলো তারা অন্য মায়েদের সাথে শেয়ার করছে, কেউ কেউ ছোটখাটো ব্যবসা করছে, কেউ বা আবার রান্নাবান্না করে হোম ডেলিভারি করছে, কেউ কেউ নিজের বাচ্চাদের সাথে আরও দু-চারটা বাচ্চাকে শিখাচ্ছে। কেউ কেউ ইলম অর্জন করছে ও অন্য নারীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে জ্ঞানের আলো—মাশাআল্লাহ। এগুলো হয়তো কেউ আর্থিক সংকটে পড়ে করে, কেউ বা আবার শখে করে, আবার কেউ করে অবদান রাখার জন্য। তারা চাকুরি করে না বলে তাদের অবদানকে আমরা ছোট করতে পারি না।

    এখন কোন নারীর স্বামী যদি অত্যাচারী হয় কিংবা কারো স্বামী মারা গেলে সে কি করবে? কে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে? পথে পথে ভিক্ষা করবে? ইসলামী আইনে পরিচালিত দেশে, এই প্রশ্ন আসবেই না। কিন্তু আমাদের তো সেই সৌভাগ্য এখন পর্যন্ত নেই কিন্তু তারপরও বলছি, না সে ভিক্ষা করবে না। রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। স্বামী বা বাবা একজন নারীর রিজিক তার কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম। তারা রিজিকদাতা নয়। মাধ্যম পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু রিজিকদাতা পরিবর্তন হয় না। আল্লাহ তায়ালা কীভাবে রিজিক দেবেন সেটা তিনি জানেন। তবে আমরা কেবল চেষ্টা করতে পারি। আমরা ইলম অর্জন করি, স্কিল ডেভেলপমেন্ট করি, অবসরকে কাজে লাগাই, সমাজে অবদান রাখার চেষ্টা করি—রিজিক স্বামী, বাবা নাকি আমার নিজের হাতে দেবেন সেটা আল্লাহর ইচ্ছা। হাদিসে এসেছে, “রাসূল ﷺ বলেছেন: ‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তাকে যথেষ্ট করেন। তোমরা যদি আল্লাহর উপর সঠিকভাবে তাওয়াক্কুল করতে, তবে তিনি তোমাদের এমনভাবে রিজিক দিতেন যেমন পাখিকে দেন; সকালবেলা খালি পেটে বের হয়, সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৪৪)”

    স্বামীর কিছু যদি হয় সেই ভয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য শুরু থেকেই চাকুরি করার (সংসার ও সন্তানের হক যথাযথভাবে আদায় না করে) বিষয়টা শুনতে অনেকটা এমন নয় কি, এক লোক প্রতিমাসে বেতন থেকে ৫ হাজার টাকার ডিপিএস করে, এর কারণ জানতে চাইলে সে বলে, যদি বড় কোন অসুখ-বিসুখ হয়, তাই পূর্ব প্রস্তুতি। সেই ব্যক্তি নিশ্চিত নয়, তার বড় কোন অসুখ হবে কিনা! কথায় আছে– “নিয়তের গুণে বরকত হয়”। এরপর দেখা যায় ওই ব্যক্তির সত্যি কোন বড় অসুখ হয়ে গেল আর সারাজীবনের জমানো অর্থ নিমিষেই শেষ!

    অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আশঙ্কাকে ঘিরে বর্তমানের দায়িত্বে অবহেলা না করি। আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব—সন্তান প্রতিপালন, স্বামী-সংসারের হক—এগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি। রিজিকের ব্যবস্থা তিনিই করবেন।

  • মেয়েটি কত সুন্দর…

    মেয়েটি কত সুন্দর…

    তারুণ্যের বয়সটা দারুণ। একটা মেয়ে এই বয়সেই সবচেয়ে লাবণ্যময়ী হয় দেখতে। চামড়ায় থাকে না কোনো ভাঁজ বা দাগ। অল্প বয়সের সব মেয়েকেই দেখতেই দারুণ লাগে। তার ওপর যদি সামান্য একটু মেকআপ করা হয়—একটু লিপস্টিক, চোখে আইলাইনার টানা হয়—দেখতে বোঝা যায় না সে সেজেছে, কিন্তু অপরূপ লাগে। এমন এক তরুণী যখন রাস্তায় হাঁটে, পাশের কেউ না কেউ বলে ওঠে—”মেয়েটা কত সুন্দর!” আর না বললেও, সব চোখ ঘুরে যায় তার দিকে। যেন এটাই তার নারীসত্তার পূর্ণতা।

    প্রেমের প্রস্তাব আসে একের পর এক। সে কারও সঙ্গে জড়ায় না, আবার কাউকে হতাশও করে না। তার চারপাশে একটা রোমান্টিক আবহ সৃষ্টি করে রাখে।

    অনেক তরুণীর মধ্যেই এই বিষয়গুলো কম-বেশি কাজ করে। কিন্তু আমি এমন এক তরুণীর কথা বলতে চাই, যে ছিল অনিন্দ্য সুন্দরী—যার পেছনে ছেলেরা ছায়ার মতো লেগে থাকত। যার হাতটা একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য কত ছেলে যে হাত বাড়িয়ে দিত। সেই মেয়ে তার যৌবনকাল কাটিয়েছে ঠিক সেভাবেই, যেভাবে তার ইচ্ছা হয়েছে।

    কিন্তু একটা সময় তার চামড়াগুলো কুচকে গেল, কপালে পড়ল বলিরেখা, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো। একদিনের কথা—সে অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে ছিল এক ব্যস্ত রাস্তার ধারে। হাতে একটা স্টিক। প্রত্যেক পথচারীকে অনুরোধ করছিল—“হাতটা ধরে রাস্তা পার করে দিন।” কিন্তু কেউ ফিরে তাকায়নি তার দিকে। কেউ ধরেনি তার দুর্বল হাতটা। তরুণীদের আশেপাশে ভিড় জমানো পুরুষগুলো যে কেবল দুধের মাছি, সেটা তখন তার বুঝে নিতে সময় লাগেনি।

    প্রায়ই দেখা যায়—শৈশবে যাদের রূপে আমরা মোহিত ছিলাম, সেই অতিসুন্দরী মডেল ও নায়িকাদের ছবি এখন টাইমলাইনে আসে—চুলে পাক ধরা, মুখে বার্ধক্যের ছাপ স্পষ্ট। কই গেল সেই রূপ-যৌবন? সেই মোহ?

    একজন নারীর সৌন্দর্য আল্লাহর দান। আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য নেয়ামতের মাঝে এটিও একটি, এবং এটিও একটি পরীক্ষার মাধ্যম। যে মেয়েটা যত বেশি সুন্দরী, তার পরীক্ষা তত কঠিন—নিজের সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখার পরীক্ষা, নিজেকে ও অন্যদের ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখার পরীক্ষা। মেয়েরা প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে, কিন্তু যে প্রশংসনীয় হওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর জন্য নিজেকে ঢেকে রাখে, সে উত্তম? নাকি যে নিজেকে দেখিয়ে বেড়ায়?

    পর্দা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়—যে মন চাইলে করলাম, না চাইলে করলাম না। এটা সেই রবের আদেশ, যিনি আমাদের সুন্দর করে বানিয়েছেন, তিনিই তো নিষেধ করেছেন সৌন্দর্যকে দেখিয়ে না বেড়াতে।

    অনেক বোন আছেন, যাদের পায়ের তলে সব সম্পদ ঢেলে দিলেও—even বন্দুকের নলের সামনেও দাঁড় করালেও—তারা নিজেকে অনাবৃত করবেন না। আর অনেকে আছেন, সামান্য অর্থের বিনিময়ে সব কিছু বিলিয়ে দেবেন, সামান্য বাহবার জন্য অর্ধনগ্ন হয়ে যাবেন।

    বোনেরা, বিনিময় হিসেবে কি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও জান্নাত উত্তম নয়?

  • আমাদের পাপ বনাম পৃথিবীর বিপর্যয়

    আমাদের পাপ বনাম পৃথিবীর বিপর্যয়

    গত দুদিন ধরে নিঃশ্বাসও যেন ভার হয়ে এসেছে।আমাদের মা-বোনদের মনে নেই একটুও শান্তি। চোখ বন্ধ করলেও দেখা যায়—আগুনে ঝলসে যাওয়া নিষ্পাপ শিশুদের ক্ষত-বিক্ষত শরীর। চোখ খোলা রাখলেও তাড়া করে সেই বিভীষিকা।বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে বুক কাঁপে। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম—সবকিছু থেমে গেছে যেন।

    আর যেসব নিষ্পাপ ছোট ছোট শরীরগুলো হাসপাতালের বেডে যন্ত্রনায় কুঁকড়ে উঠছে ও যেসব বাবা-মায়ের কলিজার টুকরা পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে তাদের সেই ব্যথা বুঝে ওঠার ক্ষমতা আমাদের নেই।এই দৃশ্য কেঊ সহ্য করতে পারে না। মুমিনদের মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে—”হে আল্লাহ! এত ভয়াবহ! এত নির্মম! এত কঠিন!”

    কিন্তু কুরআনে আল্লাহ নিজেই তো বলে দিয়েছেন: “তোমাদের যে বিপদই আসে, তা তোমাদের কৃতকর্মের ফল।” (সূরা আশ-শূরা, আয়াত ৩০)

    আমরা নিজেরা যা করেছি, আজ তারই ফল ভোগ করছে আমাদের সন্তানরা। তাদের ভালো রাখার নামে আমরা বানিয়েছি এক বিশাল পাপের প্রাসাদ। ঘুষে, সুদে, চাটুকারিতায়, দুর্নীতিতে গড়ে তুলেছি সন্তানদের জন্য “সুবিধা”।কিন্তু সে সুবিধার ভিতটা যে এক গভীর নৈতিক পতনের উপর দাঁড়িয়ে! এই জাতির সিস্টেমের প্রতিটি স্তম্ভে, প্রতিটি কোণায় জমে আছে পাপ। পৃথিবীর অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ আমাদের ৯০ ভাগ মুসলিমের এই দেশ বাংলাদেশ!

    ২০০৯ সালে নিউ ইয়র্কে ইউএস এয়ারওয়েজ ফ্লাইট ১৫৪৯-এর ঘটনা, বিমানটি নদীতে পড়ে গেলেও ১৫৫ জন যাত্রী সকলেই বেঁচে যান। কারণ প্রতিটি সিস্টেম, প্রতিটি কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে। উদ্ধারে ছুটে গিয়েছে স্পিডবোট, মুহূর্তেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।ভাবুন তো, আমাদের দেশে এমন কিছু হলে কী হতো? কতজন জীবন নিয়ে ফিরতে পারত?

    এই জাতি একদিন মজলুম ছিল। বছরের পর বছর জুলুমে পিষ্ট হতে হতে তারা আজ নিজেরাই হয়ে উঠেছে জালিম। মনোবিজ্ঞান বলে, যারা ছোটবেলায় নির্যাতনের শিকার হয়, তাদের মধ্যেই ভবিষ্যতে নির্যাতনকারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। আমাদের জাতির আজ সেই অবস্থা।আমরা ন্যায়ের কথা বলি, কিন্তু অন্যায়ের ওপরই দাঁড়িয়ে থাকি। আমরা শিশুদের স্বপ্ন বুনে দিই, কিন্তু বাস্তবটা তৈরি করি আগুন আর ধ্বংসের।

    আর রাষ্ট্র যেন তাসের ঘর—একটা ত্রুটি মানেই ধসে পড়া সব কিছু।

    আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের গাফেলতা, অন্যায়, পাপ—সবকিছুর শাস্তি যেন আমাদের সন্তানদের গায়ে এসে না পড়ে। আমাদের চোখ খুলে দিন—যেন আমরা এই ভঙ্গুর কাঠামো ভেঙে আদর্শ, সততা ও ঈমানের ওপর দাঁড় করাতে পারি নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।

  • স্বামীর অনুমতি: একপাক্ষিক কর্তৃত্ব নয়, পারিবারিক শৃঙ্খলা

    স্বামীর অনুমতি: একপাক্ষিক কর্তৃত্ব নয়, পারিবারিক শৃঙ্খলা

    নারীপুরুষ দুজন ভিন্ন সত্তা—যাদের শারীরিক ও মনবিত্বীয় পার্থক্য অস্বীকার্য। আল্লাহ তায়ালা এই দুই প্রজাতির মাধ্যমে অসাধারণভাবে মানব সভ্যতা টিকিয়ে রেখেছেন যুগ যুগ ধরে; যেখানে একজন নারী তার ঘরের সার্বিক দেখভাল করে এবং একজন পুরুষ বাইরের অ্যাফেয়ার্সগুলো সম্পন্ন করে। এভাবেই যুগ যুগ ধরে কালে কালে হয়ে এসেছে। এর মানে এই না যে, নারীরা কখনোই কোন অবস্থাতেই বাইরে কাজ করেনি। আর পুরুষেরা কখনো ঘরের কাজ করতে পারে না। তবে, দুজনের ওয়ার্কিং স্টেশন ভিন্ন।

    এবার আসা যাক একজন নারীর বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি চাওয়া প্রসঙ্গে। বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনত, কিংবা জরুরি কিছু লাগলে আমি বাইরে যাই; এবং প্রতিবার বাইরে যাওয়ার আগে আমি আমার স্বামীর অনুমতি চাই না। তবে ভাইবোন কিংবা কোন বান্ধবির বাসায় যাওয়া দরকার হলে তাকে জানাই। সে নিষেধ করলে যাওয়া থেকে বিরত থাকি। মূলত যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে যাই তখন জানাই। কেন জানাই? আমি মনে করি, আমাদের সংসারের কর্তা তিনি। তার অনুমতি নেওয়া জরুরি। আমি চাইলেই, তার অনুমতি ছাড়া দীর্ঘক্ষণ বাসার বাইরে থাকতে পারি না। সে যদি বাসায় এসে আমাকে অনেকক্ষণ যাবৎ না পায়, তবে তার রাগ হওয়ার অধিকার আছে। বাসায় একজন পুরুষ স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল, ঠিক যেমন স্ত্রী বাইরে কোথাও গেলে পুরুষের উপর নির্ভরশীল। বাসায় খাবার পরিবেশন, স্বামীকে সঙ্গ দেওয়া স্ত্রীর দায়িত্ব। কেবল শারী/রিক ঘনি/ষ্ঠতার জন্যই যে স্ত্রীকে ২৪/৭ বাসায় বসে থাকতে হবে তা না। তবে, অবশ্যই এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

    মাযহাবগুলো এ সম্পর্কে কি বলে? চার মাযহাবের আলেমরা এই বিষয়ে একমত:

    হানাফি ফিকহ অনুসারে, স্ত্রী যদি বিনা অনুমতিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে বের হয়, তবে তা অবাধ্যতা হিসেবে গণ্য হয়।

    শাফেয়ি ও মালিকি মাযহাব অনুসারে, স্ত্রীর বাইরে যাওয়া যদি ঘরের দায়িত্বের ক্ষতি করে বা স্বামীর অধিকার ব্যাহত করে, তবে তা হারাম।

    হাম্বলি ফিকহ অনুসারে, স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর ঘরের বাইরে যাওয়া নাজায়েয, যদি তা প্রয়োজনীয় না হয়।

    আচ্ছা, আলিমগণ যে নারীদের স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন, এটা কি তার উপর জুলুম।তাকে কি কেবল স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্যই ২৪/৭ ঘরে বসে থাকতে বলা হয়েছে? ইসলামে পুরুষকে কি অস্বাভাবিক জৈ/বিক চাহিদাসম্পন্ন প্রাণী হিসেবে দেখানো হয়; যে প্রয়োজন হলে একেবারে ধৈর্য ধরতে পারবে না। বাস্তবতার নিরিখে একটু চিন্তা করে দেখা যায়। পুরুষ কি সারাদিন যখন তখন ঘনি/ষ্ঠতার প্রয়োজনে ছুটে এসে ঘরে স্ত্রীর উপর আগ্রাসী হয়। এটা কি বাস্তবসম্মত! একজন পুরুষ সে অফিসে থাকতে পারে, ব্যবসার কাজে ব্যস্ত কিংবা অন্য যেকোন কাজে ব্যস্ত থাকতে পারে। আর এ অবস্থায় তার স্ত্রীকে প্রয়োজন হলে, তার পক্ষে কি সর্বাবস্থায় ছুটে আসা সম্ভব? কখনোই না। আর সেক্ষেত্রে তার করণীয় কী? আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সংযম; যা পশুর জন্য সম্ভব না।

    আর ঘরে ওয়ার্কিং স্টেশনে একজন নারীর যদি ঘনি/ষ্ঠতা প্রয়োজন হয়, তবে ‘যদি প্রয়োজন হয়’—এই অজুহাতে স্বামী কি সারাদিন বাসায় বসে থাকবে! নাকি ওই স্ত্রী স্বামীর অফিসে ছুটে যাবে। এক্ষেত্রে একজন স্ত্রীর দায়িত্বও সেই পুরুষের মতো যে সংযম করেছিল। উভয়ের ক্ষেত্রেই সংযম জরুরি। তবে, তাদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে স্বামী বাসায় আসে, স্ত্রী বাইরে যায় না। এটাই ব্যালান্স—আল্লাহর দেওয়া ব্যালান্স। আল্লাহ তায়ালা নারীদের ঘরে থাকতেই বলেছেনঃ ““তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো এবং পূর্ব জাহেলিয়াতের যুগের ন্যায় প্রকাশ্যে সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।”— [সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৩৩]

    সুতরাং, মাজহাবসমূহে বর্ণিত নারীর ঘরে অবস্থান এবং স্বামীর অনুমতি ছাড়া বের না হওয়া—এটা কোনো অবমূল্যায়ন নয়; বরং পারিবারিক ভারসাম্য ও দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে গঠিত ইসলামী জীবনব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম, যার উপর ইজমা রয়েছে।

    একইভাবে, স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা কোনো একপাক্ষিক অধিকার নয়; এটি দুটি আত্মার মাঝে মমতা ও সম্মতির স্পর্শ।এটি কোনো “রেডিমেড এক্সেস” না, বরং আদব, ভালোবাসা ও তাকওয়ায় গড়া সম্পর্ক।ইসলাম নারীকে সেবিকা হিসেবে ট্রিট করে না—বরং তাঁকে সম্মানিত অবস্থানে রাখে, আর পুরুষকে হাইপার-সে#ক্সচুয়াল কোন চরিত্রে তুলে ধরে না—বরং তাকওয়ার সঙ্গে সংযমের আদর্শে গড়ে তোলে।

  • ইসলামে নারী কি কেবল জৈবিক চাহিদার বস্তু?

    ইসলামে নারী কি কেবল জৈবিক চাহিদার বস্তু?

    প্রাণীজগতের সব পশু-পাখির সাথে মানুষের বেশকিছু মিল আছে, কারণ মানুষও একটি প্রাণী। এটাকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। ওদের যেসব জৈবিক চাহিদা আছে, আমাদেরও আছে—খাদ্য, ঘুম, বাসস্থান, ঘনিষ্ঠতা ইত্যাদি। তবে, যে জিনিসটা মানুষকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে সেটা হলো—বিবেক, যুক্তি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ (self-control)।

    ক্ষুধা পেলেই মানুষ যেখানে খাবার পাবে, আগপাছ না ভেবে খেয়ে নেবে না; একটা পশু নেবে। সে যার তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াবে না—পশুরা জড়বে। আর একজন মানুষ যত ভালো মুসলিম, সে তত উন্নত, কারণ তার নিয়ন্ত্রণক্ষমতা আরও বেশি। কারণ, একজন মুসলিম সব চাহিদা পূরণের আগে হালাল-হারামের কথা ভাবে।

    তাই বলে জৈবিক চাহিদাগুলোকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। ইসলামও বলে না, আমাদেরকে এসব চাহিদা থেকে ঊর্ধ্বে উঠে ফেরেশতা হয়ে যেতে হবে। বরং ইসলাম আমাদের চাহিদাগুলো মেটানোর একটি সীমারেখা দেয়, যার মধ্যে থেকে একজন মুসলিম শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে জীবনযাপন করতে পারে।

    যদি কারো ক্ষুধা লাগে, সে হালাল উপায়ে খাবার সংগ্রহ করবে। টাকা না থাকলে ভিক্ষা করতে পারে—যদিও তা নিন্দনীয়; কিন্তু সে চুরি করবে না, অন্যেরটা মেরে খাবে না। তেমনি, যদি কারও শারীরিক ঘনিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়, সে যার তার কাছে যাবে না—সে যাবে তার বৈধ সঙ্গীর কাছে, যে স্বেচ্ছায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রয়োজন পূরণ করবে। এ ক্ষেত্রে বিনাকারণে একজন নারীর উচিত নয় তার স্বামীকে বাধা দেওয়া। এর পক্ষে বহু সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন, রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেছেন

    “দুনিয়া সাময়িক ভোগ-বিলাস; আর দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ভোগ হলো নেককার স্ত্রী।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৪৬৭)

    “যদি স্বামী স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চায়, সে চুলার ওপরে থাকুক (অর্থাৎ ব্যস্ত থাকুক)—তবুও সে যেন তার ডাকে সাড়া দেয়।” (তিরমিজি: ১১৬০; ইবন মাজাহ: ১৮৫৩)

    “যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে তার বিছানায় আহ্বান করে এবং স্ত্রী সাড়া না দেয়, ফলে সে (স্বামী) মনঃক্ষুণ্ণ হয়—তাহলে ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত স্ত্রীর জন্য দুআ করে না।” (সহীহ বুখারী: ৩২৩৭; সহীহ মুসলিম: ১৪৩৬)

    নারীরও চাহিদা থাকলে, সে তার স্বামীর কাছেই যাবে এবং তার চাহিদা পূরণ করবে। এখন যদি কেউ বলে—একজন মানুষ তার বৈধ সঙ্গীর কাছেও প্রয়োজনে চাহিদা পূরণ করতে পারবে না, তাহলে সেটা নাকি “পশুবৃত্তি”? তাহলে বলেন মানুষটা যাবে কোথায়? আল্লাহ তো যালিম নন যে, একটি চাহিদা সৃষ্টি করবেন অথচ তা পূরণের বৈধ রাস্তা রাখবেন না।

    দুঃখজনক হলেও সত্য, তথাকথিত ইসলামি ফেমিনিস্টরা এই সাধারণ বিষয়গুলোকে অস্বাভাবিকভাবে জটিল করে তোলে এবং অপব্যাখ্যা করে। এর মাধ্যমে তারা কমজ্ঞানসম্পন্ন মুসলিম তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ইসলাম ও আলিমদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, শত শত বছর ধরে আলিমরা কুরআনের অপব্যাখ্যা করে গেছেন!

    এই ধরণের মানুষ অনেক সময় কুরআনবাদীদের মতো আচরণ করে—যারা কেবল কুরআন মানে, হাদীস মানে না। এদের ঈমানের ব্যাপারে আলিমরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। যেমন, ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন:

    “যে ব্যক্তি বলে, ‘আমি কেবল কুরআনই মানি, হাদীস মানি না’, সে ইসলামের সীমানা অতিক্রম করে।” (আর-রিসালাহ, আল-উম্ম)

    আল্লাহ যেন সবাইকে হিদায়াত দিন এবং সঠিক পথে ফিরে আসার তাওফিক দিন। আমিন