Category: Uncategorized

  • আল্লাহর নিয়ামাত

    আল্লাহর নিয়ামাত

    কেউ যখন আল্লাহকে খুশি করতে ভাল কিছু করার নিয়ত করে, তখন আল্লাহর তরফ থেকে এত সুন্দর উদাহরণ চলে আসে! সুবহান আল্লাহ!

    ২০১৫ সালে ম্যাটার্নিটি লিভে থাকার সময় আমার দুজন ফ্রেন্ডকে দেখে রীতিমত অবাক হয়েছিলাম। একজন হল আমার স্কুল ফ্রেন্ড, আরেকজন কলেজ ফ্রেন্ড। দুজনই ময়দার মত ফর্সা, আর বেশ সুন্দরী মাশা আল্লাহ। এই দুজনই নিজেদের এই সৌন্দর্য শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বোরখা আর নেকাব করে পরপুরুষদের থেকে আড়াল করে রাখে। আমি ওদের ছবি দেখতাম আর ভাবতাম, “ওরা দুজন এত্ত সুন্দরী মাশা আল্লাহ, আমি তো ওদের কাছে কিছুই না! ওরা ওদের এত সুন্দর চেহারা আল্লাহর খুশীর জন্য ঢেকে রাখছে, আমি কেন পারছি না?!”

    আমি আল্লাহর কাছে দু’য়া চাইতে শুরু করলাম।

    আমি তাদের কালো বোরখায় আবৃত করা দেখে আল্লাহকে এটাই বলেছিলাম, “আল্লাহ, ওরা দেখতে এত সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের সৌন্দর্য দুনিয়ার মানুষের কাছে প্রকাশ না করে, তোমার দেওয়া বিধান অনুযায়ী তোমাকে ভালবেসে নিজেদের সৌন্দর্য ঢেকে রাখছে। তাহলে আমি তোমাকে ভালবেসে কেন পরিপূর্ণভাবে পর্দা করতে পারছি না! তুমি আমার জন্য পর্দা করা সহজ করে দাও।”

    আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ কৃপা যে উনি উনার রহমতের ছায়ায় আমার মত নগণ্য বান্দাকে স্থান দিয়েছেন। উনি আমার জন্য এই বোরখা আর নেকাব করা সহজ করে দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।

    এরপর আল্লাহ এক নও-মুসলিম বোনের পর্দা করা আমাকে দেখালেন হজ্জ সফরে গিয়ে৷ সুবহান আল্লাহ! আল্লাহ যেন আমাকে দেখানোর জন্যই সেই নও-মুসলিম আপুকে মুজিজা হিসেবে আমার সামনে পাঠিয়েছিলেন!

    আরেকজন আপুর কথা না বললেই নয়। আপু টা আমার বোনের ফ্রেন্ড। আমার স্কুল, কলেজ লাইফে সেই আপু অনেক কিছু নিয়েই আমাকে বুঝাতেন। নিশ্চয়ই আপু উনার মুনাজাতে আমার ও আমার পরিবারের জন্য দু’য়া করতেন৷ উনার দু’য়ায় আল্লাহ আমাকে কিছুটা হলেও দ্বীনের বুঝ দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ৷

    আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর দয়া এমনই৷ আপনি এক বিঘত আল্লাহর দিকে আগালে, আল্লাহ আপনার দিকে এক হাত এগিয়ে আসবেন।

    আবূ হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, “আল্লাহ বলেন, “আমি সেইরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সাথে থাকি, যখন যে আমাকে স্মরণ করে। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দার তওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি খুশী হন, যে তার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়।

    আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।”

    (বুখারী ও মুসলিম)

  • মুহাসাবা

    মুহাসাবা

    নিজের হিসাব নিজে নিয়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। সম্পদ, টাকা পয়সা, প্রতিপত্তি কিছুই না- একটা ভূমিকম্প আমাদের কিছুটা হলেও বুঝিয়ে দিয়েছে আশা করছি।

    সালাতের সময় কি সলাত আদায় করা হয়েছে? নাকি হয় নাই? আল্লাহের হক আদায় করলেও, বান্দার হক কি ঠিক রেখেছি? কারো হক কি মেরে খেয়েছিলাম? আজকে যে ভবনে বাস করছি কারো হকের জায়গা দখল করে তৈরী করি নাই তো?

    আমাদের কি কারো কাছে দেনা আছে? স্বামী হিসেবে কি স্ত্রীর হক দিচ্ছি অথবা স্ত্রী হিসেবে স্বামীর? বাবা মা, রক্তের সম্পর্কের হক কি ঠিক আছে? এই সকল প্রশ্নের সাথে সাথে নিজেদের আরো প্রশ্ন করা উচিত নিজেদের অন্তর, নফস কে কি খারাপ প্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা আমরা করছি? নাকি প্রবৃত্তি যা চায় তাই তাকে দিয়ে ঠাণ্ডা করি!

    মানুষ এখন যতটা স্বার্থপর হয়েছে এর আগে এরকম ছিল কি না আমি সন্দেহ করি। নিজেদের কে কোনো একটা জায়গায় তোলার জন্য বা কোনো একটা কাঙ্খিত সাফল্যের জন্য নিজের জন্ম দাতা পিতা মাতাকেও সিঁড়ির মত ব্যবহার করে। যখন ব্যবহার শেষ তখন বৃদ্ধাশ্রমে হয় তাদের ঠাঁই! নার্সিসিস্টিক আচরণ চারিদিকে।

    “Narcissistic” এর বাংলা অর্থ হলো আত্মমুগ্ধ অথবা আত্মকেন্দ্রিক। এর দ্বারা এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝানো হয় যার মধ্যে নিজের প্রতি অতিরিক্ত মুগ্ধতা, আত্ম-গুরুত্বের স্ফীত অনুভূতি, এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতির অভাব থাকে।

    আত্মমুগ্ধতা (Self-admiration): নিজের গুণাবলী সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারণা পোষণ করা এবং নিজের প্রতি অতিরিক্ত মুগ্ধ থাকা। নিজের প্রতি আকর্ষণ এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতির অভাবকে বোঝায়। আত্মকেন্দ্রিক (Self-centered): নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবা এবং অন্যদের প্রয়োজন বা অনুভূতিকে কম গুরুত্ব দেওয়া।

    একটু চারিদিকে খেয়াল করেন- নারী, পুরুষ, ছেলে, মেয়ে সবার মধ্যে এই প্রবণতা। যাদের মধ্যে কিছুটা সহমর্মিতা বাকি আছে তাদের মনে করা হচ্ছে “বোকা”! যারা নিজেদের আগে অন্যের জন্য আগ বাড়িয়ে কোনো কাজ করে দিচ্ছেন বা স্যাক্রিফাইস করছেন হোক সেটা কোনো গৃহিণী তার সংসারের জন্য অথবা কোনো গৃহকর্তা তার পরিবারের জন্য- তাদের প্রত্যেকটা প্রচেষ্টা কে taken for granted নেওয়া হচ্ছে! তখন এই অপরের জন্য নিবেদিত মানুষগুলো নিজেকে মূল্যহীন বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

    এই যে অস্থির একটা সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা পার হচ্ছিলাম! ভূমিকম্প টা আমাদের জন্য একটা রিমাইন্ডার হিসেবে আসলো। যে সমাজে পরকীয়া একটা ছেলে খেলার মত বিষয় হয়ে গেছে, অশ্লীলতার ছড়াছড়ি চারিদিকে! ইন্টারনেটে নীল পর্দায় আসক্ত যুব সমাজ থেকে প্রৌঢ় সমাজ! যেখানে মুসলিমের মুখ থেকে বের হয় “ইসলামী শরীয়ত চাই না!” অথবা ইসলামী শরীয়ত কে ভয় পায়! সম*কামীতাকে প্রমোট করার যারপর নাই চেষ্টা চলে! আর মুসলিম নামধারী বেশ কিছু মানুষ বলে “এতে অসুবিধা কই? এটা ব্যক্তি স্বাধীনতা!” বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টার হিসেবে একজন উলংগ নারীকে ভোট দিয়ে দেশের সম্মান বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়!

    তখন আসলে আশ্চর্য হই না, কেন অনেক বড় আযাব এই দেশের উপর আসলেও আসতে পারে। নবী ﷺ অশ্লীলতা (ফাহিশা) সমাজে ছড়িয়ে পড়লে আজাব নাজিল হওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি সহিহ হাদিসে সতর্ক করেছেন। নিচে হাদিসগুলো দেওয়া হলো:

    ১. অশ্লীলতা প্রকাশ্য হলে আল্লাহর আজাব আসে

    সহিহ ইবন মাজাহ- হাদিস ৪০১৯

    রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

    “যখন কোনো জনগোষ্ঠীতে অশ্লীলতা (ব্যভিচার/অশ্লীলতা) প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের মধ্যে যে রোগ ও ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে তা এমন যা তাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে ছিল না।”

    ২. পাপ প্রকাশ্যে করলে শাস্তি সাধারণে নেমে আসে

    সুনান আত-তর্মিজি – হাদিস ২১৬৮ (হাসান)

    নবী ﷺ বলেন:

    “যখন কোনো সম্প্রদায়ে অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা প্রকাশ্যে তা করতে থাকে, তখন আল্লাহ সবার উপর এমন শাস্তি পাঠান যা শুধু অপরাধীদের নয়, সকলকে আঘাত করে।”

    ৩. সমাজে ফিতনা ও দুর্নীতি ছড়ালে আযাব সবার উপর আসে

    সহিহ বুখারি- হাদিস ৭১০৮

    রাসূল ﷺ বলেছেন:

    “আল্লাহর শাস্তি যখন আসে, তখন তা সৎ-অসৎ সকল মানুষের উপর নেমে আসে; তারপর প্রত্যেককে তার নিয়ত অনুযায়ী পুনরুত্থানের দিনে উত্থিত করা হবে।”

    মুসলিম হিসেবে আমাদের সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ জারি রাখতেই হবে। তানাহলে শনিবার ওয়ালাদের মত বানর, শুকরে পরিণত হবার আযাবে আমরা চুপ থাকার জন্যও পড়ে যেতে পারি!

    কারা ছিল এই শনিবার ওয়ালারা?

    সূরা আল-বাকারা ২:৬৫, সূরা আল-আ’রাফ ৭:১৬৩–১৬৬ এ আমরা পাই, আল্লাহ বনি ইসরাইলের এক জনগোষ্ঠীকে আদেশ করেছিলেন- শনিবার দিনে কোনো ধরনের শিকার করা যাবে না।

    কিন্তু তাদের পরীক্ষার জন্য শনিবারে প্রচুর মাছ পানির ওপরে এসে যেত, আর অন্যদিন প্রায় থাকত না।

    তখন জনগণের একটি দল ধূর্ত উপায় বের করল:

    শনিবার মাছকে ফাঁদে আটকে রাখত, আর রবিবার ধরে নিত। বাহ্যত আদেশ মানার ভান, আসলে অবাধ্যতা।

    তিন দলের আচরণ:

    আলেমগণ বলেন, সেই সমাজ তিন দলে বিভক্ত হয়েছিল:

    ১) পাপকারী দল

    শনিবার মাছ ধরা বন্ধ করল না- চাতুরী করে নিয়ম ভাঙল।

    ২) নিষেধকারী দল

    তারা বলত:

    “আল্লাহকে ভয় করো! এটা করবে না!”

    তারা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল।

    ৩) নীরব দর্শক দল

    তারা বলল:

    “এদের নিষেধ করে কী হবে? আল্লাহ তো শাস্তি দেবেনই…”

    আল্লাহ বলেন:

    “তারা যখন নিষেধ করা বিষয়ের উপর জেদ ধরে দাঁড়িয়ে রইল, তখন আমি বললাম: ‘হও অপদস্থ বানর!’ (আল-আ’রাফ ৭:১৬৬)

    এখানে শিক্ষাটি কী?

    ১) মন্দ কাজ নিষেধ করা না করলে সমষ্টিগত শাস্তি নেমে আসে

    হাদিসে নবী ﷺ বলেন:

    “যখন কোনো সমাজে পাপকে দেখে কেউ প্রতিরোধ না করে, তখন শীঘ্রই আল্লাহ সবার উপর সমষ্টিগত শাস্তি পাঠান।”

    — সুনান আত-তিরমিযি, হাদিস ২১৬৮

    ২) ‘নিষেধকারী’ দলই রক্ষা পেয়েছিল

    আল-আ’রাফে ইঙ্গিত আছে—

    যারা নিষেধ করেছিল তারা রক্ষা পেয়েছিল, আর যারা নিষেধ করেনি তারা শাস্তি পেয়েছিল—even if they personally didn’t do the sin.

    ৩) শুধু নিজে সৎ হওয়া যথেষ্ট নয়

    ইসলাম চায়— নিজে সৎ হও, অন্যকে সৎ কাজের দিকে ডাকো। মন্দ কাজে সতর্ক করো। এটাই উম্মাহ’র দায়িত্ব।

    সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজ নিষেধ: শক্তিশালী নীতি

    কুরআন বলে:

    “তোমরা মানুষদের জন্য উদ্ভূত সেরা উম্মাহ — তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজ নিষেধ করো।”

    (আল ইমরান ৩:১১০)

    আমরা আমাদের দায়িত্ব থেকে দূরে সরে গিয়েছি। না নিজে নিজেদের পাপ কাজের হিসাব রাখি আর না পাপ কাজে বাঁধা দেই! পশ্চিমারা আমাদের বুঝাতে সফল হয়েছে যে, পাপ কাজে বাঁধা দেওয়ায় অনধিকার চর্চা প্রকাশ পায়। যে করছে তার ব্যাপার! আর আমার মনস্তাত্ত্বিক ও মতাদর্শিক আগ্রাসনের শিকার জাতি সেটাই ভালো মনে করি যা তারা (পশ্চিমারা) ভালো মনে করে; আর তাই খারাপ মনে করি যা তারা (পশ্চিমারা) খারাপ মনে করেন।

    আল্লাহ্ আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দেন, জ্ঞান দেন ও নিজের জীবনে আমল করার তৌফিক দেন। মৃত্যুর আগে নিজের হিসাব নিজে নেওয়ার তৌফিক দেন। আত্ম অহংকার নয় বরং আত্ম সমালোচনার মনমানসিকতা দেন। নিজের চারিত্রিক উন্নতিতে মনোযোগী হবার তৌফিক দান করেন। মুসলিম হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব- সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ করার তৌফিক দান করেন। তাহলেই আমরা আশা করতে পারি, হঠাৎ বিপদে পড়লেই আল্লাহের নাম উচ্চারণ করা জাতি বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে, আল্লাহের আযাব থেকে রক্ষা পাবে। إن شاء الله

  • ডাস্টবিনে নবজাতক: শতাব্দীর সেরা জাহেলিয়াত

    জাহেলি যুগে জীবন্ত কন্যা শিশু মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করার কথা কে না জানে। সেই কত বছর পূর্বেকার কথা! তবুও মানুষ মনে রেখেছে। নারীর প্রতি চরম অবমূল্যায়ন বোঝাতে অনেকেই এই উদাহরণ টা টেনে থাকেন। অথচ নব্য জাহেলিয়াতের খবর পত্রিকার পাতার ছোট্ট একটা কোণে‌ পড়ে থাকে।

    নিয়মিত পত্রিকা পড়ে না থাকলে গুগলে একটু সার্চ করে দেখতে পারেন। ভার্সিটির পাশে ময়লার স্তূপে নবজাতক! বুয়েট থেকে শুরু করে দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ময়লার স্তূপে নবজাতক! আর এ সংখ্যা একটি নয়; শত শত, হাজার হাজার। মেডিকেল কলেজগুলোর কথা বাদই দিলাম।

    ভাবতে পারেন? দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে উচ্চ শিক্ষা দেওয়া হয়, মানুষ গড়া হয়। সেখানকার ময়লার স্তূপ থেকে নাকি নবজাতকের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে!কখনো পলিথিনে মোড়ানো, কখনো বা রাস্তার কুকুরের মুখে রক্ত মাংসে গড়া একটা মানুষ! চিন্তা করা যায়! যেটা ভাবতে গা শিউরে ওঠে আমাদের। অথচ অহরহ ঘটছে চারপাশে।

    কিন্তু এ দায় কার? হত্যাকারীরা ‘ডোন্ট কেয়ার ভাব করে’ এমনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেন বাচ্চাটি একা একাই পৃথিবীতে এসেছে। একটি নবজাতকের কান্না শোনার জন্য কত নিঃসন্তান দম্পতি হা হুতাশ করছে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা। এমন অনেককেই দেখেছি একটা সন্তানের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে। অথচ ময়লার স্তূপে পড়ে থাকা ঐ নবজাতকগুলোর কান্না কেবল ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো শুনছে।

    একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে হত্যা করলে যে তদন্ত হয়, বিচার হয়, একটা নবজাতককে হত্যা করলে তার ছিটেফোঁটাও হয় না কেন? একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ হত্যা যে অপরাধ,একটা নবজাতক-একটা ভ্রূণ হত্যাও সমান অপরাধ । ও তো পূর্ণাঙ্গ মানুষ। অন্য সবার মতো ওরও অধিকার আছে এই পৃথিবীর আলো বাতাস ভোগ করার। ওর অপরাধ কি? একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ অপরাধী হতে পারে। কিন্তু ও তো নিষ্পাপ। ওকে কেনো পৃথিবীতে এনেই হত্যা করা হলো?

    এ বিষয়ে যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই,পদক্ষেপ নেই, চিন্তা নেই। বিশাল শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে, উন্মুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সুযোগ সুবিধা। পাশাপাশি উন্মুক্ত হচ্ছে প্রকাশ্য-গোপন জিনা ব্যাভিচারের দ্বার। দিনের পর দিন চলছে নবজাতক হত্যার প্রতিযোগিতা । তবে কি ৯১.০৪ শতাংশ মুসলিম দেশের পিতা-মাতারা ঘরে ঘরে হত্যাকারী লালন করছে?

  • আমি কি একজন নারীবাদী?

    আমি কি একজন নারীবাদী?

    অনেকেই বলে, আপনি এই কাজ করেন, সেই কাজ করেন; তাহলে আপনিও তো একজন নারীবাদী। আসলেই কি তাই?

    একজন বিবাহিত পুরুষ যেমন তার স্ত্রীর পরিচয়ে পরিচিত হয় না, একজন বিবাহিত নারী হিসেবে আমিও স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত হতে পছন্দ করি না। আমার বলতে ভালো লাগে না, আমি ‘মিসেস অমুক’; যেভাবে পশ্চিমা কালচারে বলা হয়। বরং আমি খুব আনন্দ বোধ করি, যখন আমি নিজেকে বিনতে ফুলান কিংবা উম্মু ফুলান নামে পরিচয় দেই, ঠিক যেমনভাবে ইসলামী রীতিতে প্রচলিত। তার মানে এই নয় যে, আমি সংসারের কর্তা হিসেবে স্বামীকে অস্বীকার করছি বা নিজেকে সবদিক থেকে তার সমান মনে করছি।

    হ্যা, আমার মাঝে এক প্রতিবাদী সত্ত্বা আছে। আমি প্রতিবাদ জানাই, যখন দেখি: কোন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করছে; যদিও সেই স্ত্রী লোকটি সংসারের জন্য দিনরাত খেঁটে যাচ্ছে।

    যখন তাকে বলা হচ্ছে, সংসারে তার কোন অবদান নেই।

    বলা হচ্ছে, সংসারের আয়-উপার্জনে হাত লাগাতে!

    তখন আমার সেই নারীর পক্ষ হয়ে পুরুষটিকে বলতে ইচ্ছা করে—“আয়-উপার্জন তো আপনারই দায়িত্ব। কেন বেচারীকে ঠেলে দিচ্ছেন অনিশ্চয়তার দিকে? কেন তার উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন এমন বোঝা যা আল্লাহ তাকে দেননি? আপনিই কষ্ট করে উপার্জন করে তাকে খাওয়াবেন—এটা তার অধিকার।”

    আর তখনও আমি চুপ থাকতে পারি না, যখন কোন নারীর উপার্জন আছে বলে; স্বামী নিজেকে স্ত্রীর আর্থিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত ভেবে বসে। সংসারে ব্যয় করতে অনিহা প্রকাশ করে; কিংবা স্ত্রীকে চাপ দিয়ে তার উপার্জিত অর্থ নিয়ে নেয়। এরপর নিজের মতো তা ব্যবহার করে এবং তার কোন হিসাব রাখে না। এমনকি স্ত্রীর কাছ থেকে নেয়া অর্থ ফেরত দেয়ার কথাটি চিন্তায়ও আনে না। আমি তখন সেই নারীর সম্পদ সংরক্ষণের অধিকারের কথা বলতে চাই, যে আর্থিক অধিকার আল্লাহ তায়ালা তাকে দিয়েছেন সেই অধিকারের কথা। এর মানে আমি বলি না, স্বামীর নিষেধ অমান্য করে, ক্যারিয়ার গড়তে হবে, অনেক সম্পদের পাহাড় গড়তে হবে।

    যখন কোন ভাই তার ওয়ারিশের সম্পদ বোনকে বুঝিয়ে দেয় না; তখন আমি সেই নারীর পক্ষে কথা বলি। তার ন্যায্য দাবি ফিরিয়ে দিতে বলি। তবে আমি এই প্রশ্ন করি না যে, “কেন ভাই ও বোনের মাঝে বাবার সম্পদের সমান বন্টন হবে না?” আমি বলি, “আল্লাহ বোনকে যা দিয়েছেন সেটুকু দাও। অন্যায়ভাবে নারীর সম্পদ ভক্ষণ করো না।”

    আমি জ্ঞানার্জন করতে ভালোবাসি। দ্বীনের খেদমত করতে চাই। কিন্তু নারী হিসেবে আমার কাছে স্বামী ও সন্তানের হক আদায় করার গুরুত্ব এর চেয়ে বেশি। তাই আমি আমার ভালোলাগার কাজগুলো পাশে সরিয়ে রাখি। যখন ফরজ দায়িত্ব পালন করে সামান্য কিছু সময় পাই, ঠিক তখনই সেই কাজে হাত দেই। পাশাপাশি নারীর অধিকারের আদায়ের জন্য লিখালিখি করি, চাকুরী না করার স্বাধীনতা ও পরিপূর্ণ পর্দা করার স্বাধীনতার জন্য লিখালিখি করি। আমি আল্লাহর দেয়া নারী অধিকারের কথা বলি এবং সেই অধিকার সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করি।

    আর নারীবাদ—সেটা তো পশিমা সভ্যতা থেকে ধার করে আনা বস্তাপচা মাল। পশ্চিমা নারীবাদ কি আদৌ সাধারণভাবে সকল নারীর অধিকারের কথা বলে? নাকি তা এখন পরিণত হয়েছে র‍্যাডিক্যাল ফ্যামিনিসমে; যা নারী-পুরুষের স্বাভাবিক পার্থক্যকে অস্বীকার করে, পরিবার কাঠামো, মাতৃত্ব, ও পুরুষের দায়িত্বের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, এবং সর্বোপরি ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক নীতির বিরোধিতা করে। তাই ঐ ডিসফাংশনাল নারীবাদে বিশ্বাস করার কোন প্রশ্নই ওঠে না এবং এর সাথে আমার দূরতম কোন সম্পর্ক নেই আর হবেও না ইনশাআল্লাহ।

  • সুন্দরী প্রতিযোগিতা সমাচার

    সুন্দরী প্রতিযোগিতা সমাচার

    মনে করুন, ক্লাসের ২০ জন বাচ্চাকে সবার সামনে এক এক করে দাঁড় করানো হলো। প্রথমে একটা মেয়ে আসল, ওকে টিচার বলল, তোমার হাঁটার স্টাইলটা ভালো না।

    এরপর আরেকটা মেয়ে আসল, ওকে বলা হল, তোমার চুলগুলো উসকো-খুসকো। গায়ের রঙ চাপা।

    তিন নম্বরে এলো একটা ছেলে বাচ্চা। ওকে বলা হলো, তোমার ঠোঁট ফাটা। কেমন ছাইরঙা কাপড় পরেছ, ভালো দেখাচ্ছে না।

    চার নম্বরকে বলা হলো, তুমি বেশি বেটে। কথাও বলো আস্তে আস্তে, কোনো কনফিডেন্স নাই।

    এই ক্লাস টিচারকে কি ধরে পেটাতে ইচ্ছা করবে না?

    এই ব্যক্তি কি রিয়েলি টিচার হওয়ার যোগ্য?

    ক্লাসে এসে যে বাচ্চাদের হাইট, স্কিনকালার, হাঁটার স্টাইল, কথা বলার স্টাইল, কাপড়ের ডিজাইন নিয়ে কথা বলে, তার শিক্ষার মান এবং মূল্যবোধ কতটুকু?

    কিন্তু এই আজব টিচারকে বিরক্ত লাগলেও, বিউটি কনটেস্ট বিষয়টা পুরো জাতি কীভাবে কীভাবে যেন উপভোগ করে।

    যেখানে বিচারকের আসনে বসা একদল নারীপুরুষ অলমোস্ট এসব কথাই বলে, এসব জিনিসই জাজ করে।

    কে কত লম্বা

    কে কত সুন্দর

    কে কত ফিট

    কে কত স্টাইলিশ

    কে কীভাবে হাঁটে

    কে কীভাবে কথা বলে

    কে কীভাবে হাসে

    সারা দুনিয়াকে ওয়েস্ট শেখায়, কাউকে জাজ করবা না।

    বিউটি কামস ইন অল শেইপস অ্যান্ড ফর্মস।

    সবাই বিউটিফুল।

    কিন্তু কী প্রহসন।

    নিজেরাই বিউটি পেজেন্ট এর নামে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করে। যেখানে ঠিক এই কাজগুলোই করা হয়।

    আগেকার দিনে বিয়ের কনে দেখতে এসে যেভাবে পাত্রপক্ষের মা-বোনেরা পাত্রীকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে যাচাই করত।

    একটু হেঁটে দেখাও তো।

    চুলটা খুলে দেখাও তো।

    দাঁতগুলো কেমন দেখি।

    হাতের রঙের সাথে মুখের রঙটা মিলেছে কিনা দেখি।

    কনে দেখার এই বিশেষ কায়দাকে যারা “ছোটলোকি” মনে করে, তাদের মতেই কিন্তু বিউটি পেজেন্ট এক বিরাট সভ্যতা আর সংস্কৃতির নাম। সেই বিউটি পেজেন্ট, যা কিনা গরুর হাটে গরু তোলার মতোই মেয়েদেরকে স্টেইজে তোলে। পাত্রপক্ষের মতোই তাদেরকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জাজ করে। ঘোমটা খুলে চুল দেখাতে বলেনা, পুরো শরীরটাই দেখার দাবি করে।

    কে স্লিম, কে বোল্ড, কে কত বেশি পারফেকশনের সাথে শরীরটা সবার সামনে প্রেজেন্ট করতে পারে। সবকিছু ধরে ধরে জাজ করে।

    মোটা, বেটে, কিংবা দশজনের মতো সাধারণ দেখতে মেয়েরা এসব বিউটি কনটেস্টে চান্স পায় না।

    কেন? তারা কি ‘সুন্দর’ নয়?

    মিস পাকিস্তান নামের এক কনটেস্ট্যান্টকে এবার অনেক ট্রল করা হচ্ছে, কারণ সে সামান্য হেলদি। মাইন্ড ইট, সে “সামান্যই” হেলদি। এরচেয়ে বেশি হেলদি হলে কিন্তু বিউটি পেজেন্টে অংশ নেয়ার সুযোগই পেত না।

    কেন এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড?

    যেসব মেয়েরা এখানে অংশ নেয়, তারা গাধার খাটুনি খেটে দিনরাত ডায়েট আর এক্সারসাইজ করে। যেন একটা নির্দিষ্ট মাপের ভেতর তারা ফিট করতে পারে। খেয়াল করে দেখবেন, যারা বিউটি পেজেন্টে আসে, সেসব মেয়েদের চেহারা ঢেকে দিলে সবাইকে একই রকম লাগছে। কারণ তাদের শরীরের রেশিও বেধে দেয়া হয়, তাদের পরার পোশাক ঠিক করে দেয়া হয়, তাদের চুল, চেহারা সব কিছুতে অনেক কারসাজি করতে হয়।

    যদি সত্যি বিউটি কামস ইন অল শেইপস অ্যান্ড ফর্মস কথাটায় ওরা বিশ্বাস করে, তাহলে কেন নিজের স্বাভাবিক দেহটা নিয়ে সামনে আসে না?

    কেন তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের মাপ একটা নির্দিষ্ট মাপের বাইরে যেতে দেয়া চলবে না?

    কেন তারা কড়া মেইক আপ না করে সাধারণ চেহারায় থাকে না?

    কেন তাদেরকে কম্পিটিশনের বেধে দেয়া পোশাকই পরতে হয়, আবার মানুষের কথামত পোশাক খুলেও নিজেকে দেখাতে হয়?

    কেন বিকিনি পরে নগ্নপ্রায় দেহ প্রকাশ না করলে তাদের নম্বর কাটা হয়?

    এইসব কি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড না?

    এগুলো কি মেয়েদের উপর জুলুম না?

    এই উদ্ভট, কষ্টদায়ক, নিয়ম-কানুনের বোঝাগুলো কি মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না?

    এসব নিয়ম-কানুন না মানলে কোনোভাবেই কনটেস্ট্যান্টরা কম্পিটিশনে টিকতে পারবে না।

    আবার এত কষ্ট করার পরেও– গা থেকে জামাখুলে ফেলা, হাইহিল পরে বেঁকে-তেরে হাঁটা, দিনের পর দিন স্ট্রিক্ট ডায়েট, এক্সারসাইজ করে বডিকে শেইপে রাখা, মাসের পর মাস ফ্যামিলি থেকে দূরে থাকা, লাইফের সবকিছুকে সাইডে রেখে শুধু এই কম্পিটিশনকেই নিজের ধ্যান-জ্ঞান এবং একমাত্র লক্ষ্যে পরিণত করা– এতকিছুর পরেও ডার্টি পলিটিকস আর আনফেয়ার লবিয়িং এর কারণে বেশিরভাগ মেয়েই জিততে পারবে না।

    আর যারা জিতবে, তাদের মাথায় একটা ক্রাউন পরিয়ে শুরু হবে নতুন ব্যবসা।

    এবার তাদের দেহ দেখিয়ে বিজনেস ম্যাগনেটরা নিজেদের প্রডাক্ট সেল করবে, নিজের বিজনেসের রেভেনিউ বাড়াবে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কামাই করে নিজেরা নিজের লাক্সারিয়াস লাইফে পরিবার নিয়ে শান্তিতে বসবাস করবে।

    মেয়েগুলোকে ইউজ করা হবে পণ্যের মতো।

    লাইক এ ম্যানেকিন, রক্তমাংসের ম্যানেকিন, যাকে যেভাবে খুশি চালানো যায়, যা খুশি পরানো যায়, যা খুশি করানো যায়।

    সেক্সুয়াল অবজেক্টের থেকে বেশি কিছুই না এই মেয়েগুলো। যাদের ফ্যামিলি লাইফ বলে কিছু থাকতে পারবে না। যারা বাচ্চা নিয়ে ফিগার নষ্ট করতে পারবে না। তাহলেই তার এত-কষ্টে-অর্জিত স্থান দখল হয়ে যাবে।

    এটা যদি জুলুম না হয়, তাহলে জুলুম কী আসলে?

    আমরা কি মেয়েদেরকে শুধু মুখেই বলব, এভরিওয়ান ইজ বিউটিফুল। আর বাস্তবে ফিতা বেধে একটা অমানুষিক স্ট্যান্ডার্ড সেট করে বলব, এর বাইরে একচুল গেলেই তুমি কুৎসিত, তুমি বাদ।

    মনে মনে হাজারো মেয়ে তখন এই অমানুষিক, অস্বাভাবিক দেহটা পাওয়ার স্বপ্ন দেখবে। নিজের সাধারণ শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে কমতি মনে করবে। বাহ্যিক ইমপারফেকশন নিয়ে হীনমন্যতা আর ডিপ্রেশনে ভুগবে।

    হাজারো পুরুষ বিশ্বাস করতে শুরু করবে, সুন্দরী মানেই একটা বিশেষ শেইপের নারী। ঘরের স্ত্রীকে তাদের ভীষণ অসুন্দর, ভীষণ অযোগ্য মনে হবে।

    শাশুড়িরা বউ খুঁজতে গেলে পাত্রীদের মধ্যে এসব আরোপিত সৌন্দর্যের সংজ্ঞাই খুঁজবে। কোনো পুরুষ ভুলেও সাধারণ, সাদামাটা দেখতে কোনো নারীকে বিয়ে করতে চাইলে তাকে পরিবার থেকে বাধা দেয়া হবে।

    বাচ্চা মেয়ে, কিশোরী যারা এই সংজ্ঞায় নিজেকে ফিট করাতে পারবে না, তাদেরকে অন্য ছেলেমেয়েরা বুলি করবে। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাগুলোর মনে তৈরি হবে ট্রমা, বাহ্যিকভাবে সুন্দর হওয়ার অস্বাভাবিক কম্পিটিশন।

    চেইন রিঅ্যাকশনের মতো সমাজে এই দুষ্টচক্র চলতে থাকবে।

    বিউটি পেজেন্ট মানে শুধু একটা নিরীহ কম্পিটিশন না। নিছক বিনোদন না।

    বিউটি পেজেন্ট মানে প্রচণ্ড নোংরা একটা মেন্টালিটিকে সমাজে স্বাভাবিক করে তোলা।

    যেখানে মেয়েদের পোশাক নিয়ে কথা বলার বৈধতা দেয়া হয়। মেয়েদের শরীরকে জাজ করার লাইসেন্স দেয়া হয়।

    যেখানে নারীদেহকে যৌনতার লেন্স দিয়ে দেখানো হয়। যেখানে নগ্নতা আর পোশাক খুলে নাচাকে বলা হয় ‘সাহসিকতা’ আর ‘কনফিডেন্স’।

    সভ্যতার নামে, স্বাধীনতার নামে, বিনোদনের নামে, নারীদেরকে পণ্যের মত ব্যবহার আর কত?

  • হায়া ও জীবন: মুসলিম নারীর প্রাধান্য

    হায়া ও জীবন: মুসলিম নারীর প্রাধান্য

    নারীর জীবনের চেয়েও কী, একটা ওড়না বেশি গুরুত্বপূর্ণ! ভূমিকম্পের সময় নারীদের ওড়না খোঁজা নিয়ে, সেক্যু পাড়ায় বেশ ব্যঙ্গাত্মকভাবে বাগবিতণ্ডা চলছে। মুসলিম নারীর জন্য ইটস নট জাস্ট আ পিস অফ ক্লথ। ইটস আ সিম্বল অফ হার তাক্বওয়া। বহু নারীর কাছে জীবনের চেয়েও তার হায়া রক্ষা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    মুসলিম নারীদের ওড়না খোঁজা, কোনো ব্যক্তির কটুকথা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে নয়। বরং এটা তাঁদের প্রেফারেন্স, তাঁদের প্রায়োরিটি। এই সেক্যু পাড়ার নারীরা যেভাবে ইস্যুটাকে প্রেজেন্ট করছে, বাস্তবে সেই কারণে কেউ ‘ওড়না’ পড়েননি।

    একজন মুসলিমাহ-র কাছে, তাঁদের ইজ্জত রক্ষা করা, রব্বের দেওয়া বিধানকে সমুন্নত রাখা দুনিয়ার সবকিছু থেকে বেশি প্রাধান্য পায়। তাঁদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হন্তদন্ত হয়ে ওড়না খুঁজতে হয় না। কারণ, স্বামী ছাড়া বাকি মাহরামদের সামনে তারা রাফলি কভার্ড থাকে। কিন্তু তবুও অনেকে বাসায় পরিহিত শালীন পোশাক পরেও বের হতে চায় না।

    “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাঁদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯)। সেসব মুমিন নারীরা কখনোই চাইবে না, আল্লাহর কোনো বিধান লঙ্ঘন করা অবস্থায় তাঁদের রব্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ হোক। এই অবস্থার মুখোমুখি না হওয়ার জন্য তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে।

    “তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই” (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭৮)। মৃত্যু তো পাকড়াও করবেই। পর্দাহীন অবস্থায় দৌড়ে গিয়ে যে স্থানকে নিজের জন্য নিরাপদ ভাবছি, সেই জায়গাই যে আমার ডেথ স্পট হবে না, এর নিশ্চয়তা কতটুকু!

    ধরুন, কেউ এমন পরিস্থিতিতে তার প্রিয় বিড়াল ছানাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হতে পারছে না, তাই সে সুযোগ থাকতেও একা বের হয়নি। তার কাছে তার বিড়ালের প্রায়োরিটি অনেক বেশি। এই প্রাণী প্রেমী মানুষটির জন্য তখন, চারিপাশ থেকে প্রশংসার বন্যা বয়ে যাবে। কিন্ত কোনো মুসলিমাহর কাছে যখন তাঁর শরীয়া পর্দার প্রায়োরিটি তাঁর জীবনের চেয়েও বেশি হয়, তখন সেক্যু পাড়া এতো ক্ষেপে যায় কেনো!

    বিশেষ এমন জরুরি অবস্থায় কেউ বের হতেই পারে। জরুরি পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচানোর জন্য ওড়না ছাড়া বের হওয়া হারাম নয়। বিশেষ কোনো সিচুয়েশনে আজিমাত(ইসলামের বাধ্যতামূলক বিধান)-ও রুখসতে পরিনত হয়। ইসলাম তাকে এই অবস্থাতে বের হতে বাধা দেয় না। কিন্তু কেউ যদি ঈমানিয়াতের পরিচয় দেয়, সেটা নিয়ে মক করা, তাঁর তাওয়াক্কুলকে বোকামি বলা-সেটা তো চরম জাহিলিয়াত।

    আপনার প্রাধান্য যেকোনো মূল্যে, জীবন বাঁচানো হতেই পারে। কিন্তু একজন মুসলিমাহর প্রেফারেন্স যদি তাঁর হায়া, আব্রুকে জীবনের বিনিময়ে হলেও রক্ষা করা হয়ে থাকে, তবে সেটা তাঁর নির্বুদ্ধিতা নয়। বরং মালিকি ইয়াওমিদ্দিনের সামনে নিজেকে আস-সাবিক্বুনের মাঝে দেখতে পাওয়ার তীব্র অভিপ্রায়!

  • জিজাবের আড়ালে ফেমিনিজম এক অদৃশ্য ভাইরাস

    জিজাবের আড়ালে ফেমিনিজম এক অদৃশ্য ভাইরাস

    “সঠিক ইসলাম কোনটা? সেটার বৈশিষ্ট্য কী?”

    -এটা বুঝতে পারা ও এটার কাছে পৌঁছানোর পথে বাধা অনেক।

    আর এখনকার সময়ে ইসলামকে ভালোবাসা ও ধারণ করতে চাওয়া নারীদের জন্য সম্ভবত সবথেকে বিপজ্জনক বাধা হল ফেমিনিজম।

    ফেমিনিজম বা নারীবাদ মানুষের মাঝে ঢুকে যাওয়া এমন একটা চিন্তার ভাইরাস, যেটা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না হিজাব-নিক্বাব করা পর্দার আড়ালে থাকা নারীরাও, যাদের অনেকেই সরলতার কারণে নিজের অজান্তেই ফেমিনিজম ধারণ করে চলেছেন।

    এবং আজকে ওই বিশেষ শ্রেণীটাকে নিয়ে লিখব- যারা নারীবাদের ভাইরাস নিজেরা বহন করে, আশেপাশে ছড়ায়, এবং নারীবাদের আদলে বানানো ইসলামের এক নকল ভার্সন বিশাল আকারে প্রমোট করে ও শিক্ষা দেয়। যাদের কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সত্যিকার আদি ইসলাম মানতে চাওয়া আমাদের সরলমনা মা-বোনেরা।

    শাহবাগীদের চেনা যায়। তাদের থেকে দূরে থাকা যায়। কিন্তু এই হিজাবীদের অনুসরণ আপনি করবেন আর ভাববেন যে আপনি হক্বের পথে আছেন; কিন্তু আসলে আপনি নিজের মনমতো একটা ধর্মের খেয়ালখুশির অনুসরণ করে নিজেকে বুঝ দিচ্ছেন যে আপনি মুসলিম। আমার ইসলাম জানার একদম শুরুর দিকে যখন আমি ইসলামের মূলনীতিগুলো জানতাম না, তখন ইন্টারনেটে গণহারে এদের স্পিচ দেখে, লেখা পড়ে আমি ভাবতাম যে ইসলামে বোধহয় নারীবাদ আছে; ইসলামে প্রচুর ক্ষেত্রে হয়তো নারী-পুরুষ আসলেই সমান, যেমন- মেয়েরাও ছেলেদের মত সমানতালে বাইরে চাকরি করতে পারবে, পড়াশোনা করতে পারবে, তাতে তাদের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব যতই স্যাক্রিফাইস করতে হোক না কেন। বাচ্চারা কেঁদে মরে যাক, তাদের দিকে না তাকিয়ে মা নিজের সেলফিশ ক্যারিয়ার গোছাতে পারবে, একটার পরে একটা পিএইচডি করে যেতে পারবে।

    আবার মেয়েদের উপরে ছেলেরা কর্তৃত্বশীল ও অভিভাবক, বিয়ে ফরজ হয়েছে এমন কেউ বিয়ে ছাড়া থাকা উচিত না একদম বাধ্য না হলে, বিয়ে করার দিকেই জোর দেয়া উচিত, মেয়েরা ছেলেদের অধীনস্ত, মেয়েদের কাজের জন্য ছেলেদেরকে আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন, মেয়েদের কারণে ছেলেরা দাইয়ূস হবে, মেয়েদেরকে স্বামীর বৈধ আনুগত্য করতে হবে, স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে– এই কনসেপ্টগুলো বানোয়াট ভাবার আইডিয়াও এদের থেকে পেয়েছিলাম (নাউজুবিল্লাহ)।

    অথচ ইসলামে নারী-পুরুষের রোল সুস্পষ্ট। স্বয়ং আল্লাহই এই রোল ঠিক করে দিয়েছেন। এখানে দ্বিমতের সুযোগ নেই। এই ‘দ্বীনী’ ফেমিনিস্টদের ফলো করে আমার জীবনের লম্বা সময় নষ্ট হয়েছে। পুরো বিশ্বের মত বাঙালি মুসলিমদের মধ্যেও এই ভাইরাস কমিটমেন্টের সাথে ছড়িয়ে দিচ্ছে কিছু মুসলিম-লেবাসধারী নারীবাদী।

    এদের সমস্যা কোথায়? আর আমরা কীভাবে বুঝব যে তারা ভুল? এখনকার একেক আলেম একেক ব্যাখ্যা করেন, আমরা কীভাবে চ্যুজ করব? যেটা সত্যি মনে হয় সেটা নেব, যেটা ভালো লাগে সেটা নেব? আর ইসলাম বা তার ব্যাখ্যা কি সময়ের সাথে বদলাবে, না একই থাকবে? থাকলে কতটুকু থাকবে? উত্তরটা সিম্পল। আমি যতটুকু বুঝেছি সেটা হল– কুরআন হাদীসে সব নিয়মকানুন সরাসরি বলা থাকেনা। বরং কুরআন সুন্নাহ থেকে মূলনীতি ফলো করে করে শরিয়ার রুলস বের করতে হয়।

    কুরআন হাদীসের ব্যাখ্যা, বা সেগুলো থেকে ইচ্ছামত নিয়মকানুন বের করার অধিকার আমাদের নিজেদের নেই। মানে নিজে নিজে যেভাবে খুশি করা যাবেনা। তাহলে ইসলাম বিকৃত হয়ে যাবে। কারণ আমাদের নানান মানবিক দূর্বলতা আছে। যেমন- আমরা সবাই সময়ের দাস৷ বর্তমান পৃথিবীতে গণতন্ত্র, সেকুলারিজম, নারীবাদ, লজবট এই সবকিছু হল ডমিন্যান্ট আদর্শ। টিভি, বই, পেপার সবজায়গায় এগুলোই প্রমোট হয়, গ্লোরিফাই হয়, শেখানো হয় বিভিন্ন সুন্দর নাম ও শব্দ ব্যবহার করে। এগুলোই আমরা অজান্তে অনুসরণ করি। আমাদের ঠিক-ভুলের মানদণ্ড এগুলো থেকে নিই (নাউজুবিল্লাহ)। তাই নিজে নিজে ইসলামের নিয়ম বের করতে গেলে আমরা এইসব জাহালত দিয়ে প্রভাবিত হব, এগুলোর ছাঁচে ইসলামকে বসানোর চেষ্টা করব। আবার নিজেদের লোভ, কামনা, আবেগ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবার কারণেও শরীয়ার নানারকম বিকৃতি ঘটাব আমরা।

    আবার আমরা তো ১৪০০ বছর আগের ঘটনাগুলোর কনটেক্সটও ভালোভাবে জানিনা। অনেকে আরবীও জানিনা। তাই কুরআনের কোন আয়াত কী বোঝায় সেটা নিতে হবে সে প্রজন্মের মানুষদের থেকে। সালাফে সালেহীনদের থেকে। সালাফে সালেহীন কারা?

    ইসলামী ঐতিহ্যে সালাফে সালেহীন বলতে সাধারণত তিন প্রজন্মের মুসলমানদের বোঝানো হয়, যাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন —“আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম প্রজন্ম হলো— আমার যুগ (সাহাবীগণ), এরপর তাদের পরের যুগ (তাবেঈন), এরপর তাদের পরের যুগ (তাবে তাবেঈন)।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৬৫২; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৩৩)

    অর্থাৎ:

    সাহাবা — নবী মুহাম্মদ ﷺ এর সরাসরি সহচরগণ

    তাবেঈন — যারা সাহাবিদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন

    তাবে-তাবেঈন — যারা তাবেঈনদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন

    এই তিন প্রজন্মের মানুষদের সম্মিলিতভাবে “সালাফে সালেহীন” বলা হয়। তাঁরা ছিলেন কুরআন ও সুন্নাহর সবচেয়ে বিশুদ্ধ ব্যাখ্যাকারক, এবং ইসলামী আকিদা ও আমলের আসল মানদণ্ড।

    ট্র্যাডিশনাল আলেম বলতে বোঝানো হয় সেইসব বিদ্বান, যারা সালাফে সালেহীনের ধারাবাহিকতায় আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর পথ অনুসরণ করে ইসলামী জ্ঞান সংরক্ষণ করেছেন। অর্থাৎ সালাফে সালেহীন যেভাবে বুঝেছেন, যেটার অর্থ যা করেছেন, সেগুলোই আসল বুঝ।

    যেমন, কুরআনের একটি আয়াত- “এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথা ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।” (সূরা লুকমান আয়াত-৬)

    এখানে ‘অবান্তর কথা’ বলতে গানকে বোঝানো হয়েছে- এটা আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস(রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ(রা.) নামের দুজন সাহাবী, তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর, তাবেয়ী হাসান বসরী (রাহি.)সহ শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের অনেকেই বলেছেন। তাই মিউজিক ছাড়তে পারবনা দেখে নিজে নিজে কুরআন পড়ে ‘কুরআনের কোথাও তো সরাসরি গানবাজনা নিষেধ করা নেই’, এটা বলা যাবে না। বানিয়ে বানিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। সালাফদের বুঝ ফলো করে এরপরে যে আলেমরা ইসলামের নিয়মগুলো বানিয়েছেন, অর্থাৎ ট্র্যাডিশনাল আলেম-ইমামদের ফলো করতে হবে। ইসলামের জীবন-ব্যবস্থা টিকে আছে এই জ্ঞানভান্ডারের জ্ঞানীদের উপরে, যারা আমাদের তুলনায় বহুগুণে ফ্রেশ ছিলেন৷ তাদের মগজ দূষিত ছিল না। কারণ তখন ফেমিনিজম, সেকুলারিজম ছিলই না। তাদের ঈমানও আমাদের চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী ছিল, তাই নিজের নফস দিয়ে প্রভাবিত হতেন কম।

    নিচের লাইনটা খেয়াল করুন- নরমালি যেটা হয়, কারো অলরেডি দূষিত নারীবাদী মস্তিষ্কে হয়তো কোনো প্রাচীন আলেমের একটা কথা ‘পুরুষতান্ত্রিক’ লেগেছে (আসলে সেটাই ইসলামের অবস্থান), তখন সে ওই আলেমের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুল বের করে ওই আলেমের পুরো জীবনের সবগুলো রিসার্চকেই ভুল প্রমাণ করতে চেষ্টা করে, যাতে ওই ‘পুরুষতান্ত্রিক’ কথাটা মিথ্যা প্রমাণ করা যায়। অর্থাৎ নিজে একভাবে চিন্তা করে অভ্যস্ত হয়ে বড় হয়েছে, পরে সেটার বিপরীত ধারণা মেনে নিতে কষ্ট হওয়ায় (even if it’s right) ওই নতুন পাওয়া ধারণাটাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করা।

    এই মহিলারা যেটা করে সেটা হল ট্র্যাডিশনাল আলেমদের সিলসিলাকে অস্বীকার করা। এমনকি আলেমদের ভুলগুলোও হয়তো ভুল না, কোনো কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বা ওই মহিলার কাছে সঠিকটা পৌঁছায়নি এমন। আবার একেক আলেমের হয়তো স্পেশালাইজেশন একেক জায়গায়৷ একজন হয়তো প্রযুক্তি কম জানেন, তাই ওই রিলেটেড একটা-দুটো ভুল থাকতে পারে। সেজন্য তার নারীবিষয়ক লেখাসহ বাকিসব কাজও যে ভুল হবে এমন না৷

    এবং রাসূল ﷺ বলেছেন: “আমার উম্মত কখনও ভ্রান্তির ওপর একমত হবে না।” (তিরমিযী, হাদীস ২১৬৭, সহীহ হিসেবে গণ্য)

    তাই তখনকার আলেমদের কোনো বিষয়ে প্রমাণিত ইজমা বা ঐকমত্য হলে সেটাকে আমরা ইসলামের অবস্থান বলে মানি। এই হিজাবি নারীবাদীরা সেই ঐকমত্যে আসা নিয়মগুলোকেও ভুল বলে। এই ‘ইসলামী’ ফেমিনিজম নামের জাহালতের শেষ ধাপ হল ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া৷ ড্যানিয়েল হাকিকাতজু তার ‘The Modernist Menace To Islam’ বইয়ে ধাপগুলো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন।[১]

    একজন ডবল পিএইচডি সেলিব্রিটি বাংলাদেশী হিজাবী ফেমিনিস্টকে টেস্টকেস হিসেবে চিন্তা করে তার চিন্তার পরিবর্তনটা দেখি- তিনি শুরুতে ছবি পোস্ট করতেন না নিকাব পরতেন৷ একসময় ‘নিকাব বাধ্যতামূলক না’ এই দাবী করে নিকাব খুললেন। পরে নিজের অস্পষ্ট ছবি পোস্ট করলেন (এবং সেটাকে মুসলিম নারীদের ‘জিহাদ’ বলে ঘোষণা দিলেন), দিন দিন ছবি স্পষ্ট হতে লাগল, চোখে কাজল আসলো, জামার হাতা ছোট হতে থাকলো জিন্স ধরলেন, ছেলেদের সাথে মেলামেশা, মামদানিকে নিয়ে নির্লজ্জভাবে সিম্পিং করলেন। মাথায় কাপড়ের টুকরাটার সীমানা কমে গলার উপর পর্যন্ত গিয়ে আটকে গেল৷ এবং এখন তিনি শরীয়ার ট্র্যাডিশনাল নিয়মকে (অর্থাৎ পক্ষান্তরে শরীয়াকেই) নারীদের প্রতি জুলুম বলেন, ছেলে-মেয়ের বন্ধু হওয়া নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন তুলতে দেন না (তার মতে friends are friends), রাজনীতির মিটিংয়ে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরা নেই কেন এই প্রশ্ন তোলেন (সেটা জাস্টিফাই করেন নবীজি (সা.) ঘরের ভিতরে প্রাইভেটলি মাহরাম মহিলাদের সাথে কথা বলতেন সেটা দিয়ে, নাউজুবিল্লাহ)। জোর করে এমন সব জায়গায় নারী-পুরুষকে এক করার চেষ্টা করেন, যেখানে ইসলামই আলাদা করে দিয়েছে৷ এগুলো করতে গিয়ে হাস্যকর সব রেফারেন্স দেন৷

    এমনকি ইসলামের নানান মৌলিক বিষয় নিয়ে হাসিঠাট্টা করেন। ফেবুতে একটা পোস্ট দিতেই কমেন্টে হাজির হয়ে যায় তার একপাল ভক্তকুল। যাদের অনেকেই তার থেকেও কয়েককাঠি এগিয়ে। যেহেতু তাকে আমি দীর্ঘ সময় ধরে দেখছি তাই তার পরিবর্তনগুলো চোখে পড়েছে সাদা চোখে।

    দেখুন, ইসলাম কিন্তু আছে ইসলামের মতই। নিজের এসব ব্যাখ্যা নিয়ে আল্লাহর থেকে দূরে গিয়ে বানানো ধর্ম নিয়ে ঘুরপাক খেতে থাকলে সম্ভবত ক্ষতি ছাড়া কল্যাণ নেই।

    নারীবাদের বিষাক্ততার কারণে ইসলাম থেকে ইরতিদাদের অন্ধকারে চলে যাওয়ার ধাপগুলো ওভারল্যাপ করলেও আমাদের অনেকেই সম্ভবত নিজেদেরকে এই ধাপগুলোর কোনো-কোনোটার সাথে মেলাতে পারব। কিন্তু আশার বিষয় হল, এই ধাপগুলো রিভার্স করা সম্ভব। জানি, আমাদের যারা ইসলাম নিয়ে সিনসিয়ার হতে চাই, তাদের অনেকেরই এগুলো শুরুতে মানতে কষ্ট হয়, কান্না পায়৷ যেহেতু আমরা অভ্যস্ত না। আল্লাহ অবশ্যই এইসব কষ্টের বিনিময়ে আমাদের উত্তম প্রতিদান দেবেন ইনশাআল্লাহ। আর দুয়া করতে থাকলে কষ্ট দূরও করে দিতে পারেন। একটু কঠিন হলেও জিনিসগুলো মেনে নেয়ার ইচ্ছা তৈরী করি যেন আমরা।

    নিজেরা যতসম্ভব সিস্টেম্যাটিক পড়াশোনা করুন। কুরআনের ট্র্যাডিশনাল তাফসীর, সীরাহর বই, সালাফে সালেহীনদের জীবনী পড়ুন। তাহলে অনেকটাই আইডিয়া করতে পারবেন৷ সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহ আপনাকে অন্ধকারে ছেড়ে দেবেন না। যত সিনসিয়ার হয়ে লেগে থাকবেন, ধীরে ধীরে আপনার কাছে নারীবাদী নৈতিকতার অসারতার বদলে ইসলামের কনসিসটেন্ট যৌক্তিকতা প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা ততই বেশি। মনে রাখবেন- যেটা fair, যেটা just, সেটা আপনার আবেগের কারণে শুরুতে ‘ভালো নাও লাগতে পারে’। তাই সবসময় নিয়ত পরিষ্কার রাখুন- আল্লাহর কাছে, ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণ।নিজের খেয়ালখুশি, মানে কষ্ট লাগা যাতে পাত্তা না পায়।

    “তোমরা কি তাদের দেখেছ যারা নিজেদের খেয়ালখুশিকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে?”-সূরা আল ফোরকান, ৪৩

    আমরা কি তাদের মধ্যে পড়তে চাই?

    ………………………………………………………………………………………………

    টীকাঃ

    [১] ‘The Modernist Menace To Islam’ এর বাংলা সম্পাদিত অনুবাদ ‘সংশয়বাদী’ এর ‘নারীবাদ’ অধ্যায় নিয়ে লেখক হাম্মাদ ওসামা এর একটি লেখা থেকে সম্পাদিত

    ড্যানিয়েল হাকিকাতজু ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার ধাপগুলো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ

    ১। প্রথম ধাপে থাকে কিছু বাস্তব ক্ষোভ। যেমন অনেক পুরুষ স্ত্রীর ওপর যুলুম করে, কন্যাসন্তানকে অবহেলা করে। অনেক মুসলিম দেশে এ ধরনের যুলুমগুলোকে সামাজিক বৈধতা দেয়া হয়।

    ২। দ্বিতীয় ধাপে অভিযোগ ও ক্ষোভগুলো মোড় নেয় মতাদর্শিক দিকে।

    অমুক ইসলামী কনফারেন্সের পোস্টারে পুরুষদের ছবি থাকলেও নারী বক্তাদের ছবি নেই কেন? হিজাব নিয়ে পুরুষরা কেন লেকচার দিচ্ছে? নারীরা কী পরবে সেটা নিয়ে পুরুষরা কেন কথা বলবে? কেন নারী আর পুরুষের স্থান পৃথক হবে?

    ৩। তৃতীয় ধাপে এসে হিজাবী নারীবাদীর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হন গত হওয়া আলিমগণ। এ অবস্থায় একজন হিজাবী ফেমিনিস্টের মনে হয়–

    অতীতের আলিমরা সবাই কি পুরুষতন্ত্রের অধীনেই ছিলেন না? পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা আর নারী বিদ্বেষের লেন্সের আলোকেই কি তাঁরা ফতোয়াগুলো লেখেননি? মুসলিম নারীবাদী তখন সিদ্ধান্ত নেয় সে কোনো আলিমের কথা শুনবে না। সে সরাসরি কুরআন আর সুন্নাহর কাছে যাবে। কেবল কুরআন আর সুন্নাহই পুরুষতন্ত্র থেকে মুক্ত। কিন্তু…

    ৪। চতুর্থ ধাপটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সে কুরআন ও সুন্নাহয় তারা এমন অবস্থান দেখতে পায়, যা নারীবাদের মানদণ্ডে টিকে না। যেমনঃ

    -সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াত

    -দুই জন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান।

    -উত্তরাধিকারের ব্যাপারে শরীয়াহর অবস্থান।

    -মানুষকে সিজদাহ করার অনুমতি থাকলে স্বামীকে সিজদাহ করার হাদীস।

    চতুর্থ ধাপে পৌঁছানোর পর ‘মুসলিম নারীবাদী’ উপলব্ধি করে নারীবাদের সাথে ইসলামকে খাপ খাওয়ানোর একমাত্র উপায় হলো কুরআনের ঐশ্বরিক উৎস ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাহর প্রয়োগযোগ্যতা অস্বীকার করা।

    এ ধাপে নারীবাদীরা অবলীলায় কুফরী কথা বলে। খুব বেশি দিন চতুর্থ ধাপে থাকা যায় না। পরস্পরবিরোধী দুটো অবস্থান একসাথে নিজের মধ্যে ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।

    ৫। পঞ্চম ধাপে এসে ‘মুসলিম’ নারীবাদী প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়। পৌঁছে যায় খাদের কিনারায়।

    আল্লাহর যদি সাম্যবাদী হন তাহলে নিজের ব্যাপারে কুরআনে কেন পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করলেন? আল্লাহ্‌ কেন প্রথমে পুরুষকে সৃষ্টি করলেন? শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) কেন একজন পুরষ? জন্ম নেয় একের পর এক প্রশ্ন। এই প্রশ্নের স্রোত একসময় তাকে নিয়ে যায় কুফর ও রিদ্দার অন্ধকারে। আর যে প্রশ্ন দিয়ে এ পথচলা শুরু হয়েছিল সেই প্রশ্নটাই শেষ ধাক্কা দিয়ে তাকে খাদে ফেলে দেয়– ধর্মবিচ্যুতি।

    আল্লাহ্‌ কেন পুরুষতন্ত্রকে টিকে থাকতে দিলেন? আর এই ধাপে হিজাবী নারীবাদীর উত্তর একটাই–

    আল্লাহ্‌ বলে কেউ নেই। ধর্ম হলো পুরুষতন্ত্রের বানানো গল্প, যার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো নারীকে পুরুষের অধীন করে রাখা।

  • উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট কি প্রকৃত সমাধান?

    উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট কি প্রকৃত সমাধান?

    ইসলামের দোহাই দিয়ে মেয়েদের ঘরে রাখতে চাও কেন?

    কারণ স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে বাইরের অনিরাপদ পরিবেশে মেয়েদের ছেড়ে দিতে চাইনা। নারীর ইজ্জত-আব্রু সস্তা হতে দিতে চাইনা। ঘরে ঘরে বাচ্চাদের অনিরাপদ অবহেলিত শৈশব চাইনা।

    কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের অন্যায় অবিচারের কারণেই নারীরা বেশি বহির্মুখী হয়েছে এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই বলতে চাই – নারীদের ঢালাওভাবে বহির্মুখী হওয়াটা তাদের কষ্ট অসম্মান অবিচার শেষ হবার মূল সমাধান নয়। এতেই তাদের প্রকৃত ইজ্জতের জিন্দেগী আসবে এটা সব ক্ষেত্রে বাস্তবতা নয়।

    বরং কথা হলো ছেলেরা আকাশ হতে টুপ করে মাটিতে পড়ে না। বা ছেলেদের পেটে জন্ম নিয়ে অত্যাচারী হয় না। মেয়েদের পেট হতে এসে তাদের কোলেই বড় হয়। একজন মায়ের দায়িত্ব কর্তব্য অনেক। কারণ জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মেয়েদের কাছেই লালিতপালিত হয়। ছেলেদের যথাযথ জ্ঞান-বুঝ, আদব-কায়দা শিখিয়ে বড় করা। নারীদের যথাযথ সম্মান ও স্ত্রী-পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হতে শিখানো এসব একজন মা ই সবচেয়ে ভালো পারবেন।

    সুতরাং নারীর ঘরের দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান দায়িত্ব।

    মা হিসেবে সন্তানদের উত্তম মানুষ করে গড়ে তোলাটাই তার প্রধান ক্যারিয়ার।

    হ্যাঁ, আগেকার নারীরা বেশিরভাগ বাইরের ক্যারিয়ার না গড়ে ঘরের দায়িত্ব ই পালন করেছেন কিন্তু ছেলেদের যথাযথ ভাবে ধর্মীয় শিক্ষা, চারিত্রিক শিক্ষা বুঝ দিয়ে বড় করার চেষ্টা তাদের অনেকেই করেননি বা করার গুরুত্ব বুঝেননি। বরং উল্টো শাশুড়ি হয়ে ছেলেকে বউয়ের উপর অত্যাচার, বাজে ব্যবহার করতে উসকানিদাতা অথবা নিজেই অত্যাচারী ভূমিকায় দেখা যেত অসংখ্য নারীদের। নারীর উপর সমাজের মানুষের অত্যাচার অন্যায়ের পিছে একতরফা পুরুষই দায়ী নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রেই নারীরাই দায়ী বা সহযোগী এটাই বাস্তবতা।

    সুতরাং এসব ক্ষেত্রে সমাজ ও মানুষের আচরণ ও বুঝের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলা সংশোধন ও পরিবর্তনের চেষ্টা ছাড়াই যদি সব সমস্যা কষ্টের সমাধান “চাকুরী বা ব্যবসার মাধ্যমে নারীর এম্পাওয়ারমেন্ট হওয়া”-কে বলা হয় তাহলে তা যথাযথ জ্ঞান বুঝের পরিচায়ক নয়।

    পুরুষের দোষত্রুটির দোহাই দিয়ে বা স্বামী মারা গেলে বা ডিভোর্স দিলে ভবিষ্যতে কী হবে ইত্যাদি অজুহাতে ঢালাওভাবে নারীদের উপার্জনের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে নেয়াটা প্রকৃতপক্ষে উত্তম সমাধান নয় মুসলিম নারীদের জন্য। হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে কিছু নারীর জন্য অবস্থা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এটা সাময়িক সমাধান বটে। কিন্তু সবার জন্য মোটেই এটা উচিত বা উত্তম সমাধান না।

    ঢালাওভাবে সবার জন্য একই কাজ সমাধান নয়!

    যেখানে উপার্জনের দায়িত্ব মূলত পুরুষেরই সেখানে কেন স্বামী বা বাবা, ভাই থাকা সত্ত্বেও উপার্জনের দায়ভার নিয়ে, বাড়তি দায়িত্ব চাপ ও পেরেশানি নিয়ে মেয়েদের ঘর বাহির দুইটাই সামলাতে হবে?

    কেন কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার ও পুরুষের চোখের খোরাক হতে হবে?

    কেন রাস্তাঘাটে অফিসে সবখানে পুরুষের কাছে নারীর সাহচর্য তাদের জন্য এত সহজলভ্য হয়ে যাবে?

    কেন পরকিয়া হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, টাকার লোভে নারীদের ইজ্জতভ্রষ্ট করা এত সহজ হয়ে যাবে?

    কেন স্রেফ টাকার জন্য বসের অধীনস্থতা মেনে নেয়া, তার ঝাড়ি খাওয়াকে অসম্মানের কিছু হিসেবে দেখা হবে না? কেন ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী সাওয়াব, এমনকি জান্নাত প্রাপ্তির উসিলা হতে পারে জেনেও স্বামীর অধীনস্থ ও অনুগত থাকা অসম্মানজনক এই মনোভাব মেয়েদের মাঝে ছড়িয়ে যাবে?

    কেন উপার্জন নিজে না করে স্বামীর টাকায় চলা অসম্মানের, এমন ভ্রান্ত অনৈসলামিক চিন্তা-ভাবনা মেয়েদের মাথায় ঢুকানো হবে?

    কেন শক্তি-সামর্থ্য সব থাকা সত্ত্বেও কন্যা বা বউ এর উপার্জনে খেতে অনেক বেটাদের লজ্জাবোধ করবেনা – উলটা অন্য কর্মজীবী নারীদের উদাহরণ দিয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য ঘরের মেয়েদের চাপ দিবে?

    সবচেয়ে বড় কথা, এসব ব্যাপারে অমুসলিম কাফিরদের চিন্তাভাবনা, বুঝ-জ্ঞান আর মুসলিমদের চিন্তাভাবনা বুঝ-জ্ঞান একই হবে কেন?

    সম্মান আদতেই কিসে বা কীভাবে পাওয়ার চেষ্টা করা যায়, তা কেন আমরা বুঝানোর চেষ্টা করবোনা?

    আল্লাহ যাকে যে দায়িত্ব কর্তব্য দিয়েছেন তা জেনেশুনেই দিয়েছেন। প্রত্যেকের অবস্থা এবং সমাধান তিনি জানেন। সুতরাং সমস্যা যদি গোড়ায় হয়, তাহলে স্রেফ আগার চিন্তা করাটা যথাযথ সমাধান নয়। নারী বা পুরুষ উভয়েরই যথাসাধ্য নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করা উচিত।

    যে কোনো সমস্যায় সেটা হোক অভাব বা সম্মানহীনতা সবক্ষেত্রেই আমল করা, আল্লাহর প্রতি ভরসা, আশা নিয়ে দুয়ার গুরুত্ব অনেক। তারপর অবস্থা অনুযায়ী উপার্জনের চেষ্টাও করা যেতে পারে ক্ষেত্রবিশেষে কিন্তু এটা মনে রাখা জরুরী যে, মুসলিম হিসেবে আমাদের কাজ ইসলাম অনুযায়ীই সমস্যার সমাধান খোঁজা। ইসলামের যথাযথ বুঝজ্ঞানহীন দুনিয়াবি মানুষদের বুঝজ্ঞান অনুযায়ী নয়।

  • বিচারের মানদণ্ড কী?

    বিচারের মানদণ্ড কী?

    নারী বিষয়ক দুটি ঘটনা সম্প্রতি ঘটে গেলো। একটিতে একজন নারী ক্রিকেটার ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময় উর্ধতন ব্যক্তিবর্গের দ্বারা এবইউজড হয়েছেন—নানা ভাবে যখন তখন গায়ে হাত দেয়া থেকে শুরু করে অশ্রাব্য ভাষায় কথা শুনানো, এমনকি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কুপ্রস্তাব। যা একজন নারীর ক্যারিয়ারের পথে মারাত্মক বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে যদি না সে তাতে সম্মত হয়।

    দ্বিতীয়ত, ডা. সাকিয়া হকের স্বামীর পরকীয়া প্রেমের ঘটনা, যেখানে তাঁরই বিছানায় দিনের পর দিন নষ্টামি চলেছে অথচ, ক্যারিয়ার ও ট্রাভেলিং নিয়ে ব্যস্ত ডা. সাকিয়া ঘুণাক্ষরে কিছু টের পায়নি।

    দুজন নারীই প্রকাশ্যে কেঁদেছে। তাদের উপর নিশ্চিতভাবে জুলুম হয়েছে। আমি আজ বলতে যাবো না, নারী হয়ে কেন একজন ক্রিকেট খেলতে গেল কিংবা মুসলিম হয়ে কেন আরেকজন হিন্দু পুরুষকে বিয়ে করতে গেল। আমি একজন নারী হিসেবে তাদের দুজনের ব্যাপারেই সমব্যথী। তাদের কান্না আমার অন্তরকেও কাঁদিয়েছে। কিন্তু যেই বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা হলো নারীসমাজের পারসেপসন।

    আমি দেখলাম, ড. সাকিয়া হকের ঘটনায় নারী সমাজ যতটা ভোকাল, নারী ক্রিকেটারের বেলায় তার কিছুমাত্রাও ছিল না। স্বামীর পরকীয়া ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তা এই দুটিই তো নারী সমাজের খুব কমন দুটি সমস্যা। অথচ আমাদের নারীসমাজ বেছে নিলো স্বামীর পরকীয়া ঘটনাটিকে, আর ঝেড়ে ফেলে দিল অন্য ঘটনাটিকে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তারা নারী ক্রিকেটারের ইস্যুতে এত নীরব? এখানে কি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, তারা ভাবে—“ঘরের বাইরে কাজ করতে গেলে টুকটাক এধরণের সমস্যা হতেই পারে। এসব ম্যানেজ করেই ক্যারিয়ার গড়তে হয়। এটা নিয়ে এত আবেগ আপ্লুত হওয়ার কি আছে!”

    তাদের দৃষ্টিতে, আবেগ আপ্লুত হতে হবে, সেই নারীর জন্য যে মুসলিম হয়েও এক কাফিরকে বিয়ে করল, যাকে বন্ধু বানাতে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বেস্ট ফ্রেন্ড বানালো। হোক তাদের সম্পর্ক আল্লাহর শরীয়তে অবৈধ।

    আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই একেকটা ঘটনা ঘটে। ঘটনাগুলোকে অনেকভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। কিন্তু যার অন্তরে যেটা গেঁথে থাকে সে সেভাবেই তা ব্যাখ্যা করে। একই ঘটনা কাউকে হেদায়াতের পথে নিয়ে যেতে পারে আর কাউকে নিয়ে যেতে পারে গোমরাহির পথে। তাই যা-ই ঘটুক আবেগ কিংবা অভিজ্ঞতার নিরিখে নয়—বিশ্লেষণের মানদণ্ড হওয়া উচিত শারীয়াহ।

  • পর্দাবিদ্বেষ নাকি পরিচয় সংকট?

    পর্দাবিদ্বেষ নাকি পরিচয় সংকট?

    পর্তুগালে নিকাব নিষিদ্ধের নিউজটা ছড়িয়ে পরার পর বাংলাদেশে অনেক প্রতিবাদ দেখা গেল। অথচ, নিকাব বিদ্বেষের দিক দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ-ই বা কম কোথায়? কিন্তু এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন মাথাব্যথা নেই।

    বাংলাদেশে পশ্চিমা বিশ্বের মতো আইন করে নিকাব নিষিদ্ধ না করা হলেও দেশের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হিজাব আর নিকাব বিদ্বেষ।

    একসময় শুধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই নিকাব নিয়ে হেনস্তার খবর পাওয়া যেত, কিন্তু এখন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে স্কুল, কলেজ অবধি এসে পৌঁছেছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বা যেকোন পাবলিক পরীক্ষাতেই মুখ থেকে নিকাব না সরানো পর্যন্ত মেয়েদেরকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। নিকাবের জন্য মেয়েদের পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়ার ঘটনাও কম নয়। অথচ এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্লীলতার ব্যাপারে কোন সীমা নির্দিষ্ট করে দিতে দেখা যায় না। শুধু হিজাব আর নিকাব নিয়েই তাদের যত নিয়ম-কানুন।

    এক বোন আমাদের বাড়ি থেকে সরকারি চাকরির একটা পরীক্ষা দিতে এসেছিল। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় দেখলাম যে, সে মাস্ক পরেছে। জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিল, “মাস্ক পরলে কিছু বলে না কিন্তু নিকাব পরলে নিকাব খুলতে বলে এইজন্য, মাস্ক পরছি।” অর্থাৎ, সমস্যাটা মুখ ঢাকা নিয়ে নয়, সমস্যাটা হলো নিকাব নিয়ে, সমস্যাটা হচ্ছে মুসলিমদের পর্দার বিষয়টা নিয়ে।

    শুধু পরীক্ষার সময় না, বাংলাদেশে এখন সর্বত্র নিকাব বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে। একজন মডার্ণ পোশাক পরিধান করা নারীর সাথে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দেশের সুশীল সমাজে আর মিডিয়া পাড়ায় যেমন প্রতিবাদ দেখা যায়, কোন বোরখা পরা তেরো বছরের শিশু ধর্ষ*ণ হলে তার এক শতাংশও দেখা যায় না।

    একজন হিজাব নিকাব পরা নারীকে পরীক্ষার রুম থেকে শুরু করে যেকোন প্রতিষ্ঠান বা যেকোন স্থানে হেনস্তা করা যেন আজ শুধু একটা মস্করা। যেন বাংলাদেশ আজ ফ্রান্স কিংবা পর্তুগাল কিংবা কোন এক পশ্চিমা দেশ। এখানে, আজ চাইলেই ইসলামের ফরজ বিধান পর্দাকে নিয়ে মস্করা করা যায়, চাইলেই পর্দার জন্য যেকোন নারীকে হেনস্তা করা যায়।

    রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তো আজ শুধু সংবিধানে লেখা একটা লাইন।

    আর যদি তা না হয়, তাহলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কেন মেয়েদেরকে পর্দার জন্য হেনস্তা হতে হবে, কোন জবাব আছে কি? শুধু সমবেদনা, নিস্তব্ধতা আর পরিস্থিতির মানিয়ে চলার উপদেশ ছাড়া কোন জবাব নেই। কোন প্রতিবাদও নেই!