“সঠিক ইসলাম কোনটা? সেটার বৈশিষ্ট্য কী?”
-এটা বুঝতে পারা ও এটার কাছে পৌঁছানোর পথে বাধা অনেক।
আর এখনকার সময়ে ইসলামকে ভালোবাসা ও ধারণ করতে চাওয়া নারীদের জন্য সম্ভবত সবথেকে বিপজ্জনক বাধা হল ফেমিনিজম।
ফেমিনিজম বা নারীবাদ মানুষের মাঝে ঢুকে যাওয়া এমন একটা চিন্তার ভাইরাস, যেটা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না হিজাব-নিক্বাব করা পর্দার আড়ালে থাকা নারীরাও, যাদের অনেকেই সরলতার কারণে নিজের অজান্তেই ফেমিনিজম ধারণ করে চলেছেন।
এবং আজকে ওই বিশেষ শ্রেণীটাকে নিয়ে লিখব- যারা নারীবাদের ভাইরাস নিজেরা বহন করে, আশেপাশে ছড়ায়, এবং নারীবাদের আদলে বানানো ইসলামের এক নকল ভার্সন বিশাল আকারে প্রমোট করে ও শিক্ষা দেয়। যাদের কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সত্যিকার আদি ইসলাম মানতে চাওয়া আমাদের সরলমনা মা-বোনেরা।
শাহবাগীদের চেনা যায়। তাদের থেকে দূরে থাকা যায়। কিন্তু এই হিজাবীদের অনুসরণ আপনি করবেন আর ভাববেন যে আপনি হক্বের পথে আছেন; কিন্তু আসলে আপনি নিজের মনমতো একটা ধর্মের খেয়ালখুশির অনুসরণ করে নিজেকে বুঝ দিচ্ছেন যে আপনি মুসলিম। আমার ইসলাম জানার একদম শুরুর দিকে যখন আমি ইসলামের মূলনীতিগুলো জানতাম না, তখন ইন্টারনেটে গণহারে এদের স্পিচ দেখে, লেখা পড়ে আমি ভাবতাম যে ইসলামে বোধহয় নারীবাদ আছে; ইসলামে প্রচুর ক্ষেত্রে হয়তো নারী-পুরুষ আসলেই সমান, যেমন- মেয়েরাও ছেলেদের মত সমানতালে বাইরে চাকরি করতে পারবে, পড়াশোনা করতে পারবে, তাতে তাদের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব যতই স্যাক্রিফাইস করতে হোক না কেন। বাচ্চারা কেঁদে মরে যাক, তাদের দিকে না তাকিয়ে মা নিজের সেলফিশ ক্যারিয়ার গোছাতে পারবে, একটার পরে একটা পিএইচডি করে যেতে পারবে।
আবার মেয়েদের উপরে ছেলেরা কর্তৃত্বশীল ও অভিভাবক, বিয়ে ফরজ হয়েছে এমন কেউ বিয়ে ছাড়া থাকা উচিত না একদম বাধ্য না হলে, বিয়ে করার দিকেই জোর দেয়া উচিত, মেয়েরা ছেলেদের অধীনস্ত, মেয়েদের কাজের জন্য ছেলেদেরকে আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন, মেয়েদের কারণে ছেলেরা দাইয়ূস হবে, মেয়েদেরকে স্বামীর বৈধ আনুগত্য করতে হবে, স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে– এই কনসেপ্টগুলো বানোয়াট ভাবার আইডিয়াও এদের থেকে পেয়েছিলাম (নাউজুবিল্লাহ)।
অথচ ইসলামে নারী-পুরুষের রোল সুস্পষ্ট। স্বয়ং আল্লাহই এই রোল ঠিক করে দিয়েছেন। এখানে দ্বিমতের সুযোগ নেই। এই ‘দ্বীনী’ ফেমিনিস্টদের ফলো করে আমার জীবনের লম্বা সময় নষ্ট হয়েছে। পুরো বিশ্বের মত বাঙালি মুসলিমদের মধ্যেও এই ভাইরাস কমিটমেন্টের সাথে ছড়িয়ে দিচ্ছে কিছু মুসলিম-লেবাসধারী নারীবাদী।
এদের সমস্যা কোথায়? আর আমরা কীভাবে বুঝব যে তারা ভুল? এখনকার একেক আলেম একেক ব্যাখ্যা করেন, আমরা কীভাবে চ্যুজ করব? যেটা সত্যি মনে হয় সেটা নেব, যেটা ভালো লাগে সেটা নেব? আর ইসলাম বা তার ব্যাখ্যা কি সময়ের সাথে বদলাবে, না একই থাকবে? থাকলে কতটুকু থাকবে? উত্তরটা সিম্পল। আমি যতটুকু বুঝেছি সেটা হল– কুরআন হাদীসে সব নিয়মকানুন সরাসরি বলা থাকেনা। বরং কুরআন সুন্নাহ থেকে মূলনীতি ফলো করে করে শরিয়ার রুলস বের করতে হয়।
কুরআন হাদীসের ব্যাখ্যা, বা সেগুলো থেকে ইচ্ছামত নিয়মকানুন বের করার অধিকার আমাদের নিজেদের নেই। মানে নিজে নিজে যেভাবে খুশি করা যাবেনা। তাহলে ইসলাম বিকৃত হয়ে যাবে। কারণ আমাদের নানান মানবিক দূর্বলতা আছে। যেমন- আমরা সবাই সময়ের দাস৷ বর্তমান পৃথিবীতে গণতন্ত্র, সেকুলারিজম, নারীবাদ, লজবট এই সবকিছু হল ডমিন্যান্ট আদর্শ। টিভি, বই, পেপার সবজায়গায় এগুলোই প্রমোট হয়, গ্লোরিফাই হয়, শেখানো হয় বিভিন্ন সুন্দর নাম ও শব্দ ব্যবহার করে। এগুলোই আমরা অজান্তে অনুসরণ করি। আমাদের ঠিক-ভুলের মানদণ্ড এগুলো থেকে নিই (নাউজুবিল্লাহ)। তাই নিজে নিজে ইসলামের নিয়ম বের করতে গেলে আমরা এইসব জাহালত দিয়ে প্রভাবিত হব, এগুলোর ছাঁচে ইসলামকে বসানোর চেষ্টা করব। আবার নিজেদের লোভ, কামনা, আবেগ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবার কারণেও শরীয়ার নানারকম বিকৃতি ঘটাব আমরা।
আবার আমরা তো ১৪০০ বছর আগের ঘটনাগুলোর কনটেক্সটও ভালোভাবে জানিনা। অনেকে আরবীও জানিনা। তাই কুরআনের কোন আয়াত কী বোঝায় সেটা নিতে হবে সে প্রজন্মের মানুষদের থেকে। সালাফে সালেহীনদের থেকে। সালাফে সালেহীন কারা?
ইসলামী ঐতিহ্যে সালাফে সালেহীন বলতে সাধারণত তিন প্রজন্মের মুসলমানদের বোঝানো হয়, যাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন —“আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম প্রজন্ম হলো— আমার যুগ (সাহাবীগণ), এরপর তাদের পরের যুগ (তাবেঈন), এরপর তাদের পরের যুগ (তাবে তাবেঈন)।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৬৫২; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৩৩)
অর্থাৎ:
সাহাবা — নবী মুহাম্মদ ﷺ এর সরাসরি সহচরগণ
তাবেঈন — যারা সাহাবিদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন
তাবে-তাবেঈন — যারা তাবেঈনদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন
এই তিন প্রজন্মের মানুষদের সম্মিলিতভাবে “সালাফে সালেহীন” বলা হয়। তাঁরা ছিলেন কুরআন ও সুন্নাহর সবচেয়ে বিশুদ্ধ ব্যাখ্যাকারক, এবং ইসলামী আকিদা ও আমলের আসল মানদণ্ড।
ট্র্যাডিশনাল আলেম বলতে বোঝানো হয় সেইসব বিদ্বান, যারা সালাফে সালেহীনের ধারাবাহিকতায় আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর পথ অনুসরণ করে ইসলামী জ্ঞান সংরক্ষণ করেছেন। অর্থাৎ সালাফে সালেহীন যেভাবে বুঝেছেন, যেটার অর্থ যা করেছেন, সেগুলোই আসল বুঝ।
যেমন, কুরআনের একটি আয়াত- “এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথা ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।” (সূরা লুকমান আয়াত-৬)
এখানে ‘অবান্তর কথা’ বলতে গানকে বোঝানো হয়েছে- এটা আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস(রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ(রা.) নামের দুজন সাহাবী, তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর, তাবেয়ী হাসান বসরী (রাহি.)সহ শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের অনেকেই বলেছেন। তাই মিউজিক ছাড়তে পারবনা দেখে নিজে নিজে কুরআন পড়ে ‘কুরআনের কোথাও তো সরাসরি গানবাজনা নিষেধ করা নেই’, এটা বলা যাবে না। বানিয়ে বানিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। সালাফদের বুঝ ফলো করে এরপরে যে আলেমরা ইসলামের নিয়মগুলো বানিয়েছেন, অর্থাৎ ট্র্যাডিশনাল আলেম-ইমামদের ফলো করতে হবে। ইসলামের জীবন-ব্যবস্থা টিকে আছে এই জ্ঞানভান্ডারের জ্ঞানীদের উপরে, যারা আমাদের তুলনায় বহুগুণে ফ্রেশ ছিলেন৷ তাদের মগজ দূষিত ছিল না। কারণ তখন ফেমিনিজম, সেকুলারিজম ছিলই না। তাদের ঈমানও আমাদের চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী ছিল, তাই নিজের নফস দিয়ে প্রভাবিত হতেন কম।
নিচের লাইনটা খেয়াল করুন- নরমালি যেটা হয়, কারো অলরেডি দূষিত নারীবাদী মস্তিষ্কে হয়তো কোনো প্রাচীন আলেমের একটা কথা ‘পুরুষতান্ত্রিক’ লেগেছে (আসলে সেটাই ইসলামের অবস্থান), তখন সে ওই আলেমের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুল বের করে ওই আলেমের পুরো জীবনের সবগুলো রিসার্চকেই ভুল প্রমাণ করতে চেষ্টা করে, যাতে ওই ‘পুরুষতান্ত্রিক’ কথাটা মিথ্যা প্রমাণ করা যায়। অর্থাৎ নিজে একভাবে চিন্তা করে অভ্যস্ত হয়ে বড় হয়েছে, পরে সেটার বিপরীত ধারণা মেনে নিতে কষ্ট হওয়ায় (even if it’s right) ওই নতুন পাওয়া ধারণাটাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করা।
এই মহিলারা যেটা করে সেটা হল ট্র্যাডিশনাল আলেমদের সিলসিলাকে অস্বীকার করা। এমনকি আলেমদের ভুলগুলোও হয়তো ভুল না, কোনো কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বা ওই মহিলার কাছে সঠিকটা পৌঁছায়নি এমন। আবার একেক আলেমের হয়তো স্পেশালাইজেশন একেক জায়গায়৷ একজন হয়তো প্রযুক্তি কম জানেন, তাই ওই রিলেটেড একটা-দুটো ভুল থাকতে পারে। সেজন্য তার নারীবিষয়ক লেখাসহ বাকিসব কাজও যে ভুল হবে এমন না৷
এবং রাসূল ﷺ বলেছেন: “আমার উম্মত কখনও ভ্রান্তির ওপর একমত হবে না।” (তিরমিযী, হাদীস ২১৬৭, সহীহ হিসেবে গণ্য)
তাই তখনকার আলেমদের কোনো বিষয়ে প্রমাণিত ইজমা বা ঐকমত্য হলে সেটাকে আমরা ইসলামের অবস্থান বলে মানি। এই হিজাবি নারীবাদীরা সেই ঐকমত্যে আসা নিয়মগুলোকেও ভুল বলে। এই ‘ইসলামী’ ফেমিনিজম নামের জাহালতের শেষ ধাপ হল ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া৷ ড্যানিয়েল হাকিকাতজু তার ‘The Modernist Menace To Islam’ বইয়ে ধাপগুলো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন।[১]
একজন ডবল পিএইচডি সেলিব্রিটি বাংলাদেশী হিজাবী ফেমিনিস্টকে টেস্টকেস হিসেবে চিন্তা করে তার চিন্তার পরিবর্তনটা দেখি- তিনি শুরুতে ছবি পোস্ট করতেন না নিকাব পরতেন৷ একসময় ‘নিকাব বাধ্যতামূলক না’ এই দাবী করে নিকাব খুললেন। পরে নিজের অস্পষ্ট ছবি পোস্ট করলেন (এবং সেটাকে মুসলিম নারীদের ‘জিহাদ’ বলে ঘোষণা দিলেন), দিন দিন ছবি স্পষ্ট হতে লাগল, চোখে কাজল আসলো, জামার হাতা ছোট হতে থাকলো জিন্স ধরলেন, ছেলেদের সাথে মেলামেশা, মামদানিকে নিয়ে নির্লজ্জভাবে সিম্পিং করলেন। মাথায় কাপড়ের টুকরাটার সীমানা কমে গলার উপর পর্যন্ত গিয়ে আটকে গেল৷ এবং এখন তিনি শরীয়ার ট্র্যাডিশনাল নিয়মকে (অর্থাৎ পক্ষান্তরে শরীয়াকেই) নারীদের প্রতি জুলুম বলেন, ছেলে-মেয়ের বন্ধু হওয়া নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন তুলতে দেন না (তার মতে friends are friends), রাজনীতির মিটিংয়ে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরা নেই কেন এই প্রশ্ন তোলেন (সেটা জাস্টিফাই করেন নবীজি (সা.) ঘরের ভিতরে প্রাইভেটলি মাহরাম মহিলাদের সাথে কথা বলতেন সেটা দিয়ে, নাউজুবিল্লাহ)। জোর করে এমন সব জায়গায় নারী-পুরুষকে এক করার চেষ্টা করেন, যেখানে ইসলামই আলাদা করে দিয়েছে৷ এগুলো করতে গিয়ে হাস্যকর সব রেফারেন্স দেন৷
এমনকি ইসলামের নানান মৌলিক বিষয় নিয়ে হাসিঠাট্টা করেন। ফেবুতে একটা পোস্ট দিতেই কমেন্টে হাজির হয়ে যায় তার একপাল ভক্তকুল। যাদের অনেকেই তার থেকেও কয়েককাঠি এগিয়ে। যেহেতু তাকে আমি দীর্ঘ সময় ধরে দেখছি তাই তার পরিবর্তনগুলো চোখে পড়েছে সাদা চোখে।
দেখুন, ইসলাম কিন্তু আছে ইসলামের মতই। নিজের এসব ব্যাখ্যা নিয়ে আল্লাহর থেকে দূরে গিয়ে বানানো ধর্ম নিয়ে ঘুরপাক খেতে থাকলে সম্ভবত ক্ষতি ছাড়া কল্যাণ নেই।
নারীবাদের বিষাক্ততার কারণে ইসলাম থেকে ইরতিদাদের অন্ধকারে চলে যাওয়ার ধাপগুলো ওভারল্যাপ করলেও আমাদের অনেকেই সম্ভবত নিজেদেরকে এই ধাপগুলোর কোনো-কোনোটার সাথে মেলাতে পারব। কিন্তু আশার বিষয় হল, এই ধাপগুলো রিভার্স করা সম্ভব। জানি, আমাদের যারা ইসলাম নিয়ে সিনসিয়ার হতে চাই, তাদের অনেকেরই এগুলো শুরুতে মানতে কষ্ট হয়, কান্না পায়৷ যেহেতু আমরা অভ্যস্ত না। আল্লাহ অবশ্যই এইসব কষ্টের বিনিময়ে আমাদের উত্তম প্রতিদান দেবেন ইনশাআল্লাহ। আর দুয়া করতে থাকলে কষ্ট দূরও করে দিতে পারেন। একটু কঠিন হলেও জিনিসগুলো মেনে নেয়ার ইচ্ছা তৈরী করি যেন আমরা।
নিজেরা যতসম্ভব সিস্টেম্যাটিক পড়াশোনা করুন। কুরআনের ট্র্যাডিশনাল তাফসীর, সীরাহর বই, সালাফে সালেহীনদের জীবনী পড়ুন। তাহলে অনেকটাই আইডিয়া করতে পারবেন৷ সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহ আপনাকে অন্ধকারে ছেড়ে দেবেন না। যত সিনসিয়ার হয়ে লেগে থাকবেন, ধীরে ধীরে আপনার কাছে নারীবাদী নৈতিকতার অসারতার বদলে ইসলামের কনসিসটেন্ট যৌক্তিকতা প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা ততই বেশি। মনে রাখবেন- যেটা fair, যেটা just, সেটা আপনার আবেগের কারণে শুরুতে ‘ভালো নাও লাগতে পারে’। তাই সবসময় নিয়ত পরিষ্কার রাখুন- আল্লাহর কাছে, ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণ।নিজের খেয়ালখুশি, মানে কষ্ট লাগা যাতে পাত্তা না পায়।
“তোমরা কি তাদের দেখেছ যারা নিজেদের খেয়ালখুশিকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে?”-সূরা আল ফোরকান, ৪৩
আমরা কি তাদের মধ্যে পড়তে চাই?
………………………………………………………………………………………………
টীকাঃ
[১] ‘The Modernist Menace To Islam’ এর বাংলা সম্পাদিত অনুবাদ ‘সংশয়বাদী’ এর ‘নারীবাদ’ অধ্যায় নিয়ে লেখক হাম্মাদ ওসামা এর একটি লেখা থেকে সম্পাদিত
ড্যানিয়েল হাকিকাতজু ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার ধাপগুলো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ
১। প্রথম ধাপে থাকে কিছু বাস্তব ক্ষোভ। যেমন অনেক পুরুষ স্ত্রীর ওপর যুলুম করে, কন্যাসন্তানকে অবহেলা করে। অনেক মুসলিম দেশে এ ধরনের যুলুমগুলোকে সামাজিক বৈধতা দেয়া হয়।
২। দ্বিতীয় ধাপে অভিযোগ ও ক্ষোভগুলো মোড় নেয় মতাদর্শিক দিকে।
অমুক ইসলামী কনফারেন্সের পোস্টারে পুরুষদের ছবি থাকলেও নারী বক্তাদের ছবি নেই কেন? হিজাব নিয়ে পুরুষরা কেন লেকচার দিচ্ছে? নারীরা কী পরবে সেটা নিয়ে পুরুষরা কেন কথা বলবে? কেন নারী আর পুরুষের স্থান পৃথক হবে?
৩। তৃতীয় ধাপে এসে হিজাবী নারীবাদীর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হন গত হওয়া আলিমগণ। এ অবস্থায় একজন হিজাবী ফেমিনিস্টের মনে হয়–
অতীতের আলিমরা সবাই কি পুরুষতন্ত্রের অধীনেই ছিলেন না? পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা আর নারী বিদ্বেষের লেন্সের আলোকেই কি তাঁরা ফতোয়াগুলো লেখেননি? মুসলিম নারীবাদী তখন সিদ্ধান্ত নেয় সে কোনো আলিমের কথা শুনবে না। সে সরাসরি কুরআন আর সুন্নাহর কাছে যাবে। কেবল কুরআন আর সুন্নাহই পুরুষতন্ত্র থেকে মুক্ত। কিন্তু…
৪। চতুর্থ ধাপটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সে কুরআন ও সুন্নাহয় তারা এমন অবস্থান দেখতে পায়, যা নারীবাদের মানদণ্ডে টিকে না। যেমনঃ
-সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াত
-দুই জন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান।
-উত্তরাধিকারের ব্যাপারে শরীয়াহর অবস্থান।
-মানুষকে সিজদাহ করার অনুমতি থাকলে স্বামীকে সিজদাহ করার হাদীস।
চতুর্থ ধাপে পৌঁছানোর পর ‘মুসলিম নারীবাদী’ উপলব্ধি করে নারীবাদের সাথে ইসলামকে খাপ খাওয়ানোর একমাত্র উপায় হলো কুরআনের ঐশ্বরিক উৎস ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাহর প্রয়োগযোগ্যতা অস্বীকার করা।
এ ধাপে নারীবাদীরা অবলীলায় কুফরী কথা বলে। খুব বেশি দিন চতুর্থ ধাপে থাকা যায় না। পরস্পরবিরোধী দুটো অবস্থান একসাথে নিজের মধ্যে ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।
৫। পঞ্চম ধাপে এসে ‘মুসলিম’ নারীবাদী প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়। পৌঁছে যায় খাদের কিনারায়।
আল্লাহর যদি সাম্যবাদী হন তাহলে নিজের ব্যাপারে কুরআনে কেন পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করলেন? আল্লাহ্ কেন প্রথমে পুরুষকে সৃষ্টি করলেন? শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) কেন একজন পুরষ? জন্ম নেয় একের পর এক প্রশ্ন। এই প্রশ্নের স্রোত একসময় তাকে নিয়ে যায় কুফর ও রিদ্দার অন্ধকারে। আর যে প্রশ্ন দিয়ে এ পথচলা শুরু হয়েছিল সেই প্রশ্নটাই শেষ ধাক্কা দিয়ে তাকে খাদে ফেলে দেয়– ধর্মবিচ্যুতি।
আল্লাহ্ কেন পুরুষতন্ত্রকে টিকে থাকতে দিলেন? আর এই ধাপে হিজাবী নারীবাদীর উত্তর একটাই–
আল্লাহ্ বলে কেউ নেই। ধর্ম হলো পুরুষতন্ত্রের বানানো গল্প, যার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো নারীকে পুরুষের অধীন করে রাখা।