আজকের সমাজে ঘরের বাইরের শ্রমই যেনো একজন মুসলিম নারীর সম্মানের মাপকাঠি হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মুসলিম নারীদের সম্মানিত করেছেন নেককার সন্তান, বোন, স্ত্রী এবং মা হিসেবে। সেই সম্মানকে আমরা টেনে হিচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে এসেছি। আমার দেখা তিনটি বাস্তব ঘটনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় আজকের সমাজে নারীদেরকে কিভাবে আইডেন্টিফাই করা হয়।
ঘটনা-১
আমার একজন দ্বীনি বোন, তারা স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রেক্টিসিং। একশত ভাগ এরেঞ্জড মেরেজ তাদের। তারা দুইজন ছাড়া দুই পরিবারের সবাই সমাজের অন্য দশজনের মতই ইসলাম বুঝে। বিয়ের বছর খানের মধ্যেই স্বামীর হুকুম এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় স্ব-ইচ্ছায় মেয়েটা তার কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে দেয়। এখন শ্বশুড় শ্বশুড়ির প্রশ্ন- তুমি কি আসলেই ইঞ্জিনিয়ার? তারা সার্টিফিকেট দেখতে চায়। চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, নিশ্চয়ই যোগ্যতা নেই!!! আর মেয়ের পরিবারের অভিযোগ- এই দিন দেখার জন্যই কি তোমাকে ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছিলাম!!! আজকের দুনিয়ায় এত ভালো চাকরি কেউ কেবল পাগল হলেই ছাড়তে পারে।
ঘটনা-২
আমার একজন কলিগ, তিনি ফিজিক্সে মাস্টার্স করা এবং দুই সন্তানের মা। আমি তাকে প্রথম দেখি, যখন তার দ্বিতীয় সন্তানের বয়স মাত্র ছয়মাস। অর্থাৎ বাচ্চার বয়স ছয়মাস হওয়ার সাথে সাথেই উনি চাকরিতে জয়েন করেছেন। কারো সাথেই খুব একটা কথা বলতেন না। বেশিরভাগ সময় কাজের ডেডলাইন গুলো মিট করতে পারতেন না। কয়েক মাস পরেই রুটিন অনুসারে উনি একটা সাব্জেক্টে আমার কো-টিচার হলেন। একদিন কথা প্রসংগে বললেন, ছোট বাচ্চাকে বাসায় রেখে উনি একেবারেই বাইরে চাকরি করতে আগ্রহী না। উনি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে চান। কিন্তু উনার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির কথা হলো, বাসার বউ বাইরে একটা চাকরি না করলে নাকি উনাদের মান-সম্মান থাকে না। আত্মীয়স্বজনের কাছে উনাদের নাক কাটা যায়। আর স্বামী বেচারা দ্বীন-ও বুঝে না, বউয়ের চাওয়া-পাওয়া-ও বুঝে না। তাই স্বামী ৬-ডিজিটের স্যালারি পাওয়া সত্ত্বেও শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সম্মান রক্ষার্থে ছোট্ট বাচ্চাকে সকালবেলা কাজের লোকের কাছে রেখে অফিসে দৌড়াতে হয়।
ঘটনা-৩
উনার মেয়ের বয়স মাত্র ১৫ মাস। উনার শ্বাশুড়ি খুবই ভালোভাবে বাচ্চা রাখতে পারেন। তাই নিশ্চিন্তে উনি অফিস করতে চলে আসেন। উনার অফিস করতে খুবই ভালো লাগে। বাসায় থাকলে উনার দম আটকে আসে। বাসায় থাকলে উনি করার মত কোন কাজ খুজে পান না। তাই চাকরি করতে বাইরে চলে আসেন। ফাইনানশিয়ালি উনি খুবই সল্ভেন্ট। উনার স্বামীর নিজের বিজনেস আছে। উনি শুধুমাত্র নিজেকে এক্সপ্লোর করার জন্যই চাকরি করেন। কারন নিজে একটা চাকরি না করলে নাকি উনার কোন পরিচয় নাই। উনি উনার নিজের পরিচয় তৈরি করার জন্যই চাকরি করতে আসেন।
উপরের তিনটা ঘটনাই আমাদের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস মেন্টালিটি রিপ্রেজেন্ট করে। একজন মুস্লিমাহর পরিচয় কি বাইরে শ্রম দেয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়? একজন মুসলিমাহর সম্মান তো আল্লাহ নির্ধারন করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলা কোথাও মেয়েদের বাইরে কাজ করতে নিষেধ করেন নাই। একজন মুসলিম নারী অবশ্যই বাইরে কাজ করতে পারেন, তার একান্ত প্রয়োজন থাকলে। কিন্তু মেকি সম্মানের আশায় নয়। কারন সম্মান তো আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে।
তাই তো সুরা আলি-ইমরানঃ আয়াত-২৬ এ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, “বলুন, “হে আল্লাহ, সার্বভৌমত্বের মালিক! আপনি যাকে ইচ্ছা সার্বভৌমত্ব দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেন। আপনি যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। আপনার হাতেই সকল কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।””

Leave a Reply to A WordPress Commenter Cancel reply